অনলাইন ডেস্ক :
বয়স আগামী মাসেই পূর্ণ হবে ৩৪। এই বয়সে নতুন লিগ, নতুন দেশ, নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার চ্যালেঞ্জটি সহজ নয় মোটেও। তবে রর্বেত লেভানদোভস্কির চোখে, জীবনের অধ্যায় শুরু করার উপযুক্ত সময় এখনই। শারীরিক ও মানসিকভাবে নিজেকে দারুণ ফিট দাবি করে এই ফরোয়ার্ড বললেন, পাড়ি দিতে চান আরও অনেক পথ আর সেই পথচলায় সঙ্গী করে নিতে চান তার নতুন ক্লাবকে। বায়ার্ন মিউনিখ ছেড়ে লেভানদোভস্কির বার্সেলোনায় যোগদানের শেষ সময়ের আনুষ্ঠানিকতা চলছে এখন। স্প্যানিশ ক্লাবটির সঙ্গে তার চুক্তির বিস্তারিত অবশ্য জানা যায়নি এখনও। সবশেষ দুই মৌসুমে তিনি গোল করেছেন ৯৮টি। পারফরম্যান্সে বয়সের ছাপ পড়া বা ধার কমার কোনো চিহ্নই নেই। তারপরও নতুন চুক্তির ক্ষেত্রে ৩৪ ছুঁইছুঁই বয়সটাকে তো বিবেচনায় রাখতেই হয়! আপাতত ২০২৪ সাল পর্যন্ত চুক্তি হচ্ছে বলেই শোনা যাচ্ছে। তবে বয়সের ভাবনায় একটুও কাতর নন লেভানদোভস্কি। জার্মানি থেকে বিদায়ের আগে বিল্ড-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বললেন, তার দৃষ্টি আরও সুদূরে। “জানি, শিগগিরই আমার বয়স হবে ৩৪। তবে এখনও শারীরিক ও মানসিকভাবে নিজেকে যথেষ্ট শক্তিশালী মনে করি। বার্সেলোনাও ব্যাপারটি একইভাবে দেখেছে। আমি জানি না, ওই সময়ের (২০২৪) পরে কেমন কী হবে। তবে এমন নয় যে ২০২৬ সালেও থেমে যেতে হবেৃ আরও অনেক বছর আমি শীর্ষ পর্যায়ে খেলতে চাই।” লেভানদোভস্কি জানান, স্পেনের ইবিসা দ্বীপে ছুটি কাটানোর সময় বার্সেলোনা কোচ শাভি এরনান্দেসের সঙ্গে হুট করেই দেখা হয় তার। সবকিছুর শুরু হয় সেখান থেকেই। “কাকতালীয়ভাবেই দেখা হয়েছিল তার সঙ্গে। তবে খুব দ্রুতই ভাব জমে যায় আমাদের। তিনি বলেছিলেন, ‘তোমার জন্য অপেক্ষা করব।’ আরও বলেছিলেন যে, আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি এবং একসঙ্গে অনেক কিছু অর্জন করতে পারি। বার্সেলোনাকে কীভাবে শীর্ষে ফেরাতে হবে, সেটির পরিষ্কার পরিকল্পনা তার আছে।” শাভির সেই পরিকল্পনাকে নিজের নতুন স্বপ্ন করে নিয়েছেন লেভানদোভস্কিও। “গত মৌসুমে বার্সেলোনার অনেক সমস্যা ছিল। তবে ক্লাবের সম্ভাবনা আছে অনেক এবং দারুণ কিছু নতুন ফুটবলারকে দলে এনেছে। আমার মনে হয়, শীর্ষে ফেরার পথে সঠিক পথেই আছে ক্লাবটি। বার্সায় আমার লক্ষ্যও পরিষ্কার, অনেক ম্যাচ জেতা ও আরও ওপরে ওঠা।” বায়ার্ন মিউনিখেও তার সময়টা স্বপ্নের মতোই কাটছিল। সেখানে তিনি হয়ে উঠেছিলেন গোলমেশিন, স্বাদ পেয়েছেন অনেক সাফল্য আর ট্রফির। ক্লাব ও সমর্থকদের কাছ থেকে সম্মান-ভালোবাসাও পেয়েছেন অঢেল। তারপরও কেন চুক্তির এক মৌসুম থাকতেই বায়ার্ন ছাড়তে এতটা মরিয়া ছিলেন, তা ব্যাখ্যা করলেন এই পোলিশ তারকা। “বুন্ডেসলিগার বাইরে একটি লিগে খেলতে চেয়েছিলাম আমি। অনেক আগে থেকেই এই সিদ্ধান্ত ছিল আমার। যদিও স্বীকার করতেই হবে, জীবনের সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল এটি।” “আমি চেয়েছি অন্য কোনো জায়গায় থাকতে, পরিবারের সঙ্গে নতুন জগত দেখতে। আমার মেয়ে ক্লারা আগামী বছর থেকে স্কুল শুরু করবে, সিদ্ধান্ত তাই এখনই নিতে হতো। এখন না হলে হয়তো আর কখনোই সম্ভব হতো না।” তার দলবদলকে ঘিরে গত কিছুদিনের ক্রমাগত গুঞ্জন, নানা কথা, আলোচনা-সমালোচনায় বায়ার্নের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন, সব মিলিয়ে সময়টা সহজ ছিল না। তবে তিনি চেষ্টা করেছেন পরিবারে ডুব দিয়ে মানসিক শান্তি খুঁজতে। “গত কয়েক সপ্তাহ ছিল কঠিন। সঠিক শব্দ খুঁজে পাওয়া সহজ নয় আমার জন্য, এই মুহূর্তে মাথায় অনেক কিছু ঘোরাফেরা করছে। তবে চেষ্টা করেছি শান্ত থাকতে, পরিবারের সঙ্গে ছুটি উপভাগ করতে।” “আমার বয়স ও অভিজ্ঞতা আমাকে সহায়তা করেছে অবশ্যই। বয়স কম হলে হয়তো অনেক চাপ অনুভব করতাম ও হতাশ হতাম। তবে এখন বুঝেছি যে কী হতে যাচ্ছে, কে কী বলছে বা লিখছে কিংবা পরিস্থিতি কীভাবে তুলে ধরছে।” বায়ার্নের সঙ্গে শেষ সময়ের তিক্ততাও এখন আর নেই বলে মনে করেন ক্লাবটির অনেক সাফল্যের এই কারিগর। “দুই পক্ষই এমন কিছু কাজ করেছে, যা ছিল অপ্রয়োজনীয়। তবে এই দলবদল সম্ভব করে তুলতেই হয়তো কিছু ব্যাপার প্রয়োজন ছিল। আমার মনে হয়, দিন শেষে দুই পক্ষই খুশি। বায়ার্ন অনেক অর্থ পেয়েছে এবং আমি বার্সেলোনায় যেতে পারছি।” “দীর্ঘ ও কঠিন এক পথ ছিল এই প্রক্রিয়াটা। তবে আমার মনে হয়, দিনশেষে আমরা এখন পরস্পরের চোখে তাকিয়ে কথা বলতে পারি।” বায়ার্ন অধ্যায়ের সমাপ্তির পর এখন নতুন অধ্যায় শুরু করতে আর তর সইছে না তার। “স্প্যানিশ শেখা শুরু করেছিলাম আগেই, তবে এখন অবশ্যই আরও জোর দিতে হবে!” “শেষ সময়টায় সবকিছু খুব দ্রুতই হয়ে গেছে। কিছু ভাবার সময়ও খুব বেশি ছিল না। এখন আমি খুশি যে একটা সমাধান মিলেছে। এখন বার্সেলোনার হয়ে দ্রুত মাঠে নামতে চাই। আমার ক্যারিয়ারের পরের ধাপ সেটি।”
আরও পড়ুন
ঝোড়ো ইনিংস খেলে কেন মাহমুদউল্লাহকে কৃতিত্ব দিলেন রিশাদ?
বিশ্বকাপের সুপার সিক্সে বাংলাদেশ
মুখোমুখি হচ্ছেন সাকিব-তামিম