রংপুর ব্যুরো:জুলাই গণ-অভ্যূত্থানের স্ফুলিঙ্গ শহীদ আবু সাঈদ-সহ সকল শহীদ স্মরণে ১৬ জুলাই রংপুরে বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরামের উদ্যোগে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। রংপুর জেলা পরিষদ কমিউনিটি সেন্টারে বুধবার সকাল ১১ টায় অনুষ্ঠিত স্মরণসভার প্রারম্ভে অস্থায়ী শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরাম, বিভিন্ন গণসংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এসময় জুলাই গণঅভ্যূত্থানের আলোকচিত্র প্রদর্শনী করা হয়।
এরপর অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব এবং প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক কমরেড মাসুদ রানা।আরও বক্তব্য রাখেন বাসদ(মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরামের সদস্য সীমা দত্ত, রংপুর জেলা আহবায়ক আনোয়ার হোসেন বাবলু, গাইবান্ধা জেলা সমন্বয়ক আহসানুল হাবীব সাঈদ, আবু সাঈদ হত্যা মামলার প্যানেল আইনজীবী এডভোকেট রোকনুজ্জামান রোকন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট রংপুর জেলা আহবায়ক সাজু বাসফোর প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরামের সদস্য আহসানুল আরেফিন তিতু।
আলোচনা সভায় কমরেড মাসুদ রানা বলেন- ‘জুলাই গণঅভ্যূত্থান জনগণের ঐক্যবদ্ধ শক্তির অনন্য অর্জন। এই অভ্যুত্থানের স্ফুলিঙ্গ ছিলেন অসীম সাহসী বীর শহীদ আবু সাঈদ। পুলিশের গুলির সামনে দাঁড়ানো তাঁর সাহসী লড়াই মূহুর্তে গোটা দেশে দাবানল সৃষ্টি করে। শহীদ আবু সাঈদের পথ ধরে শত শত ছাত্র-ছাত্রী, শ্রমিক, সাধারণ জনতা আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের গুলির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জীবন উৎসর্গ করেছে। হাজার হাজার ছাত্র-জনতা আহত হয়েছে, চোখ হারিয়েছে, পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। গত ২৪ এর জুলাইয়ে এভাবেই এদেশের ছাত্র জনতা জীবন বাজি রেখে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শাসনের পতনের জন্য আন্দোলনে নেমেছিল। আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছরের শাসনে মানুষের ভোটাধিকার, মতপ্রকাশের অধিকারসহ সকল গণতান্ত্রিক অধিকার কেঁড়ে নিয়েছিল। দুর্নীতি-লুটপাট, গুম-খুন, বিচারহীনতা আর তীব্র অর্থনৈতিক শোষণ-বৈষম্যের মাধ্যমে কায়েম করেছিল এক ভয়ংকর ফ্যাসিস্ট শাসন। এই তীব্র নিপীড়ন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে। তাই গণ-অভ্যূত্থানে দাবি উঠেছিল বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের।
গণঅভ্যূত্থান পরবর্তীতে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংস্কারের কিছু উদ্যোগ নিলেও অর্থনৈতিক বৈষম্য বিলোপের কোন পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। আইনের শাসনের বদলে ‘মব’ তৈরি করে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু হয়েছে। জুলাই গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান হচ্ছে না। আহত, নিহতদের ক্ষতিপূরণ ও পুণর্বাসন প্রক্রিয়া স্থবির হয়ে আছে। দুর্নীতি-চাঁদাবাজি-লুটপাট নতুনভাবে শুরু হয়েছে। জনগণের সম্পদ বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। পূর্বের ন্যায় সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর স্বার্থে দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দেয়া হচ্ছে।
তাই জুলাই গণঅভ্যূত্থানের বর্ষপূর্তিতে বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের দাবি বারবার উচ্চকিত করা দরকার। জুলাই গণঅভ্যূত্থান আমাদের শিখিয়েছে জনগণের ঐক্যবদ্ধ শক্তির কাছে সকল স্বৈরশাসক হার মানতে বাধ্য। ঐক্যবদ্ধ জনগণ ন্যায্য দাবীতে লড়লে জয় অবশ্যম্ভাবী। এক্ষেত্রে আবু সাঈদসহ সকল শহীদরা আমাদের প্রেরণা। আবু সাঈদ যেমন তার মৃত্যুর আগে উনসত্তুরের গণ-অভ্যূত্থানের শহীদ শামসুজ্জোহা স্যারকে স্মরণ করে বলেছিলেন – ‘এই প্রজন্মে যারা আছেন, আপনারাও প্রকৃতির নিয়মে একসময় মারা যাবেন। কিন্তু যতদিন বেঁচে আছেন মেরুদণ্ড নিয়ে বাঁচুন। নায্য দাবিকে সমর্থন জানান, রাস্তায় নামুন, শিক্ষার্থীদের ঢাল হয়ে দাড়াঁন। প্রকৃত সম্মান এবং শ্রদ্ধা পাবেন। মৃত্যুর সাথে সাথেই কালের গর্ভে হারিয়ে যাবেন না। আজন্ম বেঁচে থাকবেন শামসুজ্জোহা হয়ে।’ বৈষম্যহীন বাংলাদেশ নির্মাণের সংগ্রামে ২৪, ৯০, ৭১, ৬৯, ৫২ সহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শহীদরা আমাদের প্রেরণা। শহীদ আবু সাঈদসহ সকল শহীদদের লাল সালাম।’ আলোচনা সভা শেষে শহীদ স্মরণে একটি র্যালী শহর প্রদক্ষিণের মাধ্যমে স্মরাণায়োজন শেষ হয়।
আব্দুর রহমান মিন্টু
রংপুর ব্যুরো চীফ
আরও পড়ুন
গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রায় হামলায় প্রতিবাদে খুলনা মহানগরী জামায়াতের বিক্ষোভ
গোপালগঞ্জের ঘটনায় খুলনা উত্তপ্ত
গোপালগঞ্জে হামলার প্রতিবাদে সিলেটে ‘ব্লকেড’