June 27, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, June 26th, 2025, 5:20 pm

বিগত সরকারের আমলে ডামি নির্বাচন আয়োজন করেছিলেন, আদালতে স্বীকার: সাবেক সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল

 

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল আদালতকে জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের নির্বাচন ছিল ডামি ও প্রহসনের নির্বাচন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার অভাবের কারণেই এই নির্বাচন পরিচালিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তাফিজুর রহমানের আদালতে শুনানির সময় তিনি এই স্বীকারোক্তি দেন। যেখানে তাকে প্রশ্ন করা হয়, তাহলে তিনি কেন পদত্যাগ করেননি। এর উত্তরে আউয়াল বলেন, অতীতে কোনো সিইসি আগেই পদত্যাগ করেননি।

আদালতে আরও বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলের এবং ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের অপ্রকাশিত বিষয়গুলো তুলে ধরেন। এই মামলায় তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দেন আদালত, যা পরে ১০ দিন করা হয়।

আদালত বলেন, আপনার কাছে জাতির প্রত্যাশা ছিল অনেক। কিন্তু বিতর্কমুক্ত নির্বাচন করতে পারেননি। এ প্রসঙ্গে সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন বিতর্কিত হয়নি? ১৯৭২ এর ডিসেম্বরে সংবিধান রচনার তিন মাস পর ৭৩ এর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে শেখ মুজিবের মতো নেতা নির্বাচনে কারচুপি করেছেন। ক্ষমতার যে লোভ এটা ভয়ানক। দেশে এক হাজার বছরেও নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। সেটা করার জন্য সংস্কার লাগবে।

সাধারণত নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হতো। কিন্তু এই নির্বাচনে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা করে দেওয়া হয়। এমনটি হওয়ার কারণ কী? এ প্রশ্নের জবাবে নিজের দায় এড়িয়ে যান কাজী হাবিবুল আউয়াল। রাতের বেলার ভোট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যখন রাতের বেলায় ভোট হয়, তখন আমি গভীর নিদ্রায় নিমগ্ন।

রিমান্ড শোনানির সময় পিপি উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচনের আগে তিনি (আসামি) শেখ হাসিনাকে বলেন, চিন্তা করবেন না। আমি আপনাকে বিজয়ী ঘোষণা করে দেবো। আর টাকা দিতে বললে আমি সেই টাকা নিজের পকেটে নেবো। এরপর তিনি বলেন,  নির্বাচনী প্রশাসকের কাছ থেকে কয়েক জায়গায় টাকা নিয়েছেন, অথচ হিসাব দিতে পারেননি। নির্বাচনী বরাদ্দের টাকাও তিনি আত্মসাৎ করেছেন। এ ধরনের ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তি দেওয়া উচিত, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের জঘন্য নির্বাচন কমিশনার আর জন্ম না নেয়।

পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, এখানে কেউ সাধু সাজার সুযোগ নেই। আপনার নিজের অপরাধ ঢাকার চেষ্টা করবেন না। অন্যরা অন্যায় করেছে, আপনি যা করেছেন তা বলুন। এক আইনজীবী তখন বলেন, এত ছেলেমেয়ে মরে গেছে আপনার জন্য। উত্তর দিতে গিয়ে হাবিবুল আউয়াল প্রশ্ন করেন, আমার জন্য এতগুলো ছেলেমেয়ে কি মারা গেছে?

উল্লেখ্য, এই মামলায় তাকে গত বুধবার রাজধানীর মগবাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়, যার মাধ্যমে হিসেবের খাতায় নামাঙ্কিত হয় তিন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারের একজন হিসেবে। এর আগে, রোববার আরেক সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদাকেও একই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়।রাষ্ট্রদ্রোহ ও অন্যায় প্রভাব খাটিয়ে প্রহসনের নির্বাচন দেওয়ার অভিযোগে রাজধানীর শেরে বাংলা থানার মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক এই সিইসিকে আজ দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে আদালতে আনা হয়।

এই মামলায় বিএনপি’র একটি বৃহৎ অভিযোগ, ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে প্রহসনের অভিযোগে ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। সূত্রে জানা যায়, গুলো ঐতিহাসিক ভোটাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে মামলায় রাষ্ট্রদ্রোহের ধারাও যোগ করা হয়েছে। মামলার অন্যান্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার, জাবেদ পাটোয়ারী, এ কে এম শহীদুল হকসহ আরও কয়েকজন সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।