মোঃ মোজাহেদুল ইসলাম
২০১২ সালে স্যামসাং বাংলাদেশের একটি প্রজেক্টে ২২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে এসেছিল। কিন্তু তৎকালীন ক্ষমতাসীন (আওয়ামী লীগ) সরকারের অসহযোগিতার কারণে তারা সেই বিনিয়োগটি ভিয়েতনামে স্থানান্তর করে।
জমি সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ভেস্তে গেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।
সোমবার (৭ এপ্রিল) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন ২০২৫’-এর প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শেষে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান।
তিনি বিডার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর পর কোরিয়ান ইপিজেড-এর চেয়ারম্যান তার সঙ্গে দেখা করতে এসে স্যামসাংয়ের বিনিয়োগ ফেরত যাওয়ার ঘটনাটি বলেছিলেন বলে জানান।
কোরিয়ান ইপিজেড চেয়ারম্যানের কাছ থেকে শোনা সেই ঘটনা তুলে ধরে আশিক চৌধুরী বলেন, ২০১২-১৩ সালের দিকে তিনি স্যামস্যাং কোম্পানির ২২ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের জন্য নিয়ে এসেছিলেন। জমি সংক্রান্ত জটিলতার (মিউটেশন) সমাধানের জন্য স্যামসাং তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাছে গিয়েছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জমির কাগজপত্র ঠিক করে না দেওয়ায় বিনিয়োগ ভিয়েতনামের স্থানান্তর করে।
চৌধুরী আশিকের দাবি, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর মাত্র দুই মাসে সেই জমি সমস্যার সমাধান করেছে, যা পূর্ববর্তী সরকার দশ বছরেও করতে পারেনি। “আমরা সদিচ্ছা দিয়ে প্রমাণ করেছি—চাইলেই সম্ভব,” বলেন তিনি।
তিনি জানান, বিডায় দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি কেইপিজেড প্রতিষ্ঠাতা প্রতিষ্ঠান ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সাংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। সে সময় কিহাক সাং আফসোস করে বলেন, “আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি। কিন্তু জমির কাগজ নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে স্যামসাং বিনিয়োগ থেকে সরে যায়।”
বিডা চেয়ারম্যান আরও জানান, সমস্যার সমাধানে ‘প্রজেক্ট অ্যাম্বাসেডর’ নামে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বিত একটি টিম গঠন করা হয়। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের সহযোগিতায় দীর্ঘদিনের জমি জটিলতা দূর করা সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, “লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কমাতে আমরা বদ্ধপরিকর। সব মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে কাজ করছি।”
সম্মেলনে অংশ নিতে কিহাক সাং এবার প্রায় ৩০ জন কোরিয়ান বিনিয়োগকারীকে সঙ্গে এনেছেন জানিয়ে বিডা চেয়ারম্যান বলেন, “এটা একটি আশাব্যঞ্জক সঙ্কেত। আমরা চাই—বিশ্বের বড় বড় বিনিয়োগকারীরা যেন বাংলাদেশকে আবার সম্ভাবনার গন্তব্য হিসেবে বিবেচনা করে।”
দেশে ব্যবসা পরিচালনার খরচ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও জমির খরচ অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় কম। আমাদের শ্রমিকরাও নতুন প্রযুক্তি সহজে আয়ত্ত করতে পারে—এটি একটি বড় সুবিধা।”
বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এ সম্মেলনের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আগামী ছয় থেকে বারো মাস নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হবে।”
স্টার্টআপ ও উদ্যোক্তাদের বিষয়ে সরকারের অঙ্গীকারের কথাও তুলে ধরেন বিডা চেয়ারম্যান। বলেন, “স্টার্টআপদের পাশে থেকে আমরা একটি প্রাণবন্ত, উদ্ভাবননির্ভর অর্থনীতি গড়ে তুলতে চাই।”
বিনিয়োগে নতুন আশা জাগিয়ে চৌধুরী আশিক বলেন, “যে বিনিয়োগ হাতছাড়া হয়েছিল, সেই ধরনের বিনিয়োগ ফিরে আনার জন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
আরও পড়ুন
নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য ৯০০ কোটি টাকার স্টার্টআপ তহবিল ঘোষণা
প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পেলেন বিডার আশিক চৌধুরী
৮ থেকে ১৪ এপ্রিল জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ