নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে জোর দেয়া হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ভবিষ্যতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বর্তমানে দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৯১০.৮২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। তাছাড়া অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আরো অন্তত ৩২টি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। ওসব প্রকল্প থেকে আরো এক হাজার ৪৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। পাশাপাশি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে আরো ৭৬টি প্রকল্প। ওসব প্রকল্পে প্রায় ৪ হাজার ৬৩২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। তাছাড়া নেপালের জলবিদ্যুতের আমদানিও প্রক্রিয়াও চূড়ান্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে আশার আলো দেখাচ্ছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি। বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী দেশে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় ৩ হাজার ৬৬৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। পরিকল্পনায় বলা হয়েছে সোলার পার্ক থেকে এক হাজার ৪০০ মেগাওয়াট, সোলার রুফটপ থেকে ৬৩৫ মেগাওয়াট, সোলার হোম সিস্টেম থেকে ১০০ মেগাওয়াট, সোলার সেচ প্রকল্প থেকে ৬৩৭ মেগাওয়াট, বায়ুবিদ্যুৎ থেকে ৬৩৭ মেগাওয়াট, বায়োমাস বা বিশেষ করে ধানের তুষ থেকে ২৭৫ মেগাওয়াট, এনিমেল ওয়েস্ট থেকে ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। তাছাড়া আরো ৬০ মেগাওয়াটের জলবিদ্যুৎ এবং ৩ মেগাওয়াটের হাইব্রিড বিদ্যুৎকেন্দ্রও নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। ওসব উৎসের পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানির নতুন উৎস হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল ব্যবহারেরও চেষ্টা করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে বিশ্বব্যাপীজ্বালানি সঙ্কটের মধ্যে হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল হতে পারে নতুন জ্বালানি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। বাংলাদেশও তা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে কাজ করছে।
সূত্র জানায়, দেশে সরকারিভাবে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটের কথা বলা হলেও বর্তমানে সর্বোচ্চ ১৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। তার বাইরে ভারতের আদানি থেকে ১ হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হবে। তাছাড়া রামপাল থেকে আরো ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে। পাশাপাশি নেপাল থেকে ৫০০ মেগাওয়াটের জলবিদ্যুতের পাশাপাশি জিটুজি ভিত্তিতে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের আমদানি প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। ওসব মাধ্যমে দেশে বিদ্যুতের সরবরাহ ২১ হাজার ৩৬৬ মেগাওয়াটের বেশি ছাড়িয়ে যাবে। ওই লক্ষ্যে সম্প্রতি বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের জালকুড়িতে বাস্তবায়িত হতে যাওয়া ৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন হলে তা থেকে ইউনিট প্রতি প্রায় ২০ টাকায় বিদ্যুৎ কেনা হলেও মাত্র ৫ থেকে ৬ টাকায় বিক্রি করা যাবে। বিদ্যুৎ বিভাগ ওই ঘাটতির সংস্থান করবে। ওই কেন্দ্র থেকে নো পেমেন্ট নো-ইলেকট্রিসিটি অনুযায়ী বিদ্যুৎ নেয়া হবে। পিডিবি সেখান থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ২০ দশমিক ৯১ সেন্টে কিনবে। চুক্তি সইয়ের পর ৪৫৫ দিনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
সূত্র আরো জানায়, দেশে বায়ু বিদ্যুতেও জোর দেয়া হচ্ছে। ওই লক্ষ্যে সরকার মোংলায় ৫৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করতে যাচ্ছে। ওই লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-(বিপিডিবি) অতিসম্প্রতি চীনের একটি কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে চুক্তি সই করেছে। ওই চুক্তির আওতায় কনসোর্টিয়াম অব ইনভিশন এনার্জি, জিয়াংসু কোম্পানি লিমিটেড, চায়না, এসকিউ ট্রেডিং এ- ইঞ্জিনিয়ারিং, বাংলাদেশ ইনভিশন রিনিউয়েবল এনার্জি লিমিটেড, হংকংয়ের যৌথ উদ্যোগে ওই মোংলা গ্রিন পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণ করবে। বর্তমানে বায়ু থেকে মাত্র ২৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হলেও ৩টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১৪৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজ চলমান। তাছাড়া ৫টি প্রকল্পের অধীনে আরো ২৩০ মেগাওয়াট বায়ুবিদ্যুৎ প্রক্রিয়াধীন। বায়ুভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের আকার আরো বড় হবে। বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা বিশেষত খুলনার দাকোপ, চট্টগ্রামের আনোয়ারা এবং চাঁদপুরের নদী মোহনার এলাকায় ১০০ মিটার উচ্চতায় বাতাসের গড়বেগ প্রতি সেকেন্ডে ৬ মিটারের বেশি, যা বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনে অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। ২০ বছর মেয়াদী ওই কেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ১৩ টাকায় কেনা হবে। প্রকল্পটির আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৬.৫৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। চুক্তি সইয়ের দুই বছরের মধ্য কেন্দ্রটি উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। পাশাপাশি সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনেও জোর দেয়া হচ্ছে। সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে ইতোমধ্যে সরকারি কোম্পানিগুলোকে লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। বেসরকারি উদ্যোক্তারাও সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে দৌড়ঝাঁপ করছে। আর নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্রাইটেরিয়া পূরণে জলবিদ্যুৎও আমদানি করা হচ্ছে। নেপাল থেকে ৫৫০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আনবে বাংলাদেশ। প্রাথমিকভাবে জিটুজি ভিত্তিতে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে দুই দেশ ঐকমত্যে পৌঁছেছে।
এদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রসঙ্গে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন জানান, দেশে বর্তমানে ১৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। যদিও চাহিদা রয়েছে ১৫ হাজার মেগাওয়াট। ওই চাহিদা পূরণে ডিজেল চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর ওপরও অনেকাংশে নির্ভরশীল হতে হচ্ছে। কিন্তু নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে উচ্চ মূল্যে ডিজেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে না। আর চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের সরবরাহও আরো বেশি থাকবে। তাছাড়া পরিবেশেরও দূষণ হবে না। পাশাপাশি নতুন নতুন উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় কিনা তাও দেখা হচ্ছে। সাম্প্রতিক বৈশ্বিক সঙ্কটে নবায়নযোগ্যজ্বালানির প্রসারে বিদ্যুৎ বিভাগ নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেছে।
অন্যদিকে নবায়নযোগ্যজ্বালানি বায়ুবিদ্যুতের আকার বড় করার বিষয়ে নসরুল হামিদ জানান, বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির অন্যতম উৎস হিসেবে বায়ুবিদ্যুতের আকার দিনে দিনে আরো বড় হবে। উপকূলীয় অঞ্চলসহ দেশের ৯টি স্থানে বায়ুবিদ্যুতের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের উদ্দেশে বায়ু প্রবাহের তথ্য-উপাত্ত (ডাটা) সংগ্রহ করে ওয়াইন্ড ম্যাপিং কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। সার্বিক উপযুক্ততা যাচাই করে বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।
আরও পড়ুন
আগামী বিজয় দিবস গণহত্যাকারীর শাস্তির রায়ে উদ্যাপন হবে: আসিফ নজরুল
বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে খাসি-মুরগি-মাছ
কাল থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাজ শুরু: উপদেষ্টা