নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিদেশী ব্যাংক ঋণসীমা কমিয়ে দেয়ায় দেশের অনেক ব্যাংকই বিপাকে পড়েছে। মূলত এলসি দায় সময় মতো পরিশোধ না করায় বিদেশী ব্যাংকগুলো বাংলাদেশি ব্যাংকগুলোর ক্রেডিট লাইন (ঋণসীমা) কমিয়ে দিয়েছে। এমন অবস্থায় বিদেশি ব্যাংকের ঋণসীমা বাড়াতে বিদেশ গিয়ে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের নেতারা বিদেশি ধরনা দিয়ে তদবির সুপারিশ করছে। বিদেশি ব্যাংকগুলো অভিযোগ, এলসি পেমেন্ট দিতে বাংলাদেশের কিছু ব্যাংক দেরি করছে। পেমেন্ট দিতে দেরি করলে বিদেশি যেসব ব্যাংক বাংলাদেশে ঋণ দিয়ে থাকে তাদের কাছে তা খারাপ লক্ষণ। সবার জন্যসময়মতো এলসির পেমেন্ট পরিশোধ করা বাঞ্চনীয়। যে কোনো কারণে এলসি পেমেন্ট দিতে দেরি করলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিদেশী ব্যাংকগুলো ক্রেডিট লাইন কমানোর ফলে ডলারের সংস্থান না করে আমদানি এলসি খোলা যাচ্ছে না। আর দেশের বাজারেও ডলার সংকট কাটছে না। বিদেশি ব্যাংকগুলো ঋণ কমিয়ে দেয়ায় বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতি নিয়ে অক্টোবরের শেষের দিকে ১০টি বিদেশি ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বৈঠক করেছে।
সূত্র জানায়, মাশরেক ব্যাংকে বাংলাদেশি ব্যাংকগুলোর সবচেয়ে বেশি ঋণ ছিল। গত জুলাইয়ে ব্যাংকটিতে ঋণ ছিল ৩৪ কোটি ডলার। আগস্টে তা কমিয়ে ২৫ কোটি ডলারে নামানো হয়। সেপ্টেম্বরে আরো কমিয়ে নামানো হয় ৮ কোটি ডলারে। আইসিআইসিআই ব্যাংকে জুলাইয়ে ছিল ৯ কোটি ৮১ লাখ ডলার। আগস্টে কমে ৩ কোটি ৭৯ লাখ এবং সেপ্টেম্বরে ৩ কোটি ৮৮ লাখ ডলারে নামে। ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক সিঙ্গাপুরের জুলাইয়ে ১১ কোটি ৬০ লাখ ডলার থেকে বেড়ে আগস্টে ১৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার হয়। তবে সেপ্টেম্বরে তা ১০ কোটি ডলারে নেমেছে। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের জুলাইয়ে ছিল ১৪ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। আগস্টে তা ১৪ কোটি ৩২ লাখ এবং সেপ্টেম্বরে ১৪ কোটি ১৭ লাখ ডলারে নেমেছে। সিটিব্যাংক এনএতে জুলাইয়ের ৫৬ লাখ ডলার থেকে বেড়ে আগস্টে ১ কোটি ৮৮ লাখ ডলার হয়। তবে সেপ্টেম্বরে আবার ৬০ লাখ ডলারে নেমেছে। বৈশ্বিক সংকটের এ সময়ে পরিশোধের ঝুঁকি বিবেচনায় বিশ্বব্যাপী ঋণসীমা কমিয়েছে বেশির ভাগ ব্যাংক। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কিছুটা দ্রুত ঘটেছে। তার প্রধান কারণ সাম্প্রতিক সময়ে কিছু ব্যাংক যথাসময়ে বিদেশি ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি। আবার ডলার বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে একেক সময় একেক সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও ধারাবাহিকভাবে কমছে। আবার রিজার্ভের যে তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশ করছে আইএমএফের হিসেবে তা অন্তত ৭ বিলিয়ন ডলার কম। ইতোমধ্যে ডলারে বেশি মুনাফা করায় তিন দফায় ১৩টি ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগের পর বিদেশি ব্যাংকগুলোর কাছে একটা খারাপ বার্তা গেছে। ফলে তারা বাংলাদেশে ঋণের ক্ষেত্রে ঝুঁকি কমিয়ে আনতে চাচ্ছে।
সূত্র আরো জানায়, গ্রাহকের আমদানি দায় পরিশোধের জন্য বাংলাদেশি ব্যাংকগুলো বিদেশি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে থাকে। সাধারণভাবে ৬ মাস থেকে এক বছর মেয়াদে ওসব ঋণ নেয়া হয়। গ্রাহকের পক্ষে দেশি ব্যাংক ডলার সংস্থান করে দায় পরিশোধ করে। সেজন্য বিদেশি ব্যাংক নির্ধারিত হারে সুদ পায়। একটি ব্যাংকের বৈদেশিক বাণিজ্য, আর্থিক বিবরণীসহ বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে একেক ব্যাংকের একেক ঋণসীমা দেয়া হয়। আর ডলার সংকটের এ সময়ে ঋণসীমা না বাড়িয়ে কমানোয় বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশি ব্যাংকগুলো।
এদিকে এ প্রসঙ্গে এবিবির চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সেলিম আর এফ হুসাইন জানান, প্রক্রিয়াগতভাবে এদেশের অনেক ব্যাংকের দুর্বলতা আছে। তারা সময়মতো ফরেন একচেঞ্জ ট্রানজেকশন করতে পারে না। অনেক ব্যাংকের ফরেন ট্রেড, ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংকিং ডিভিশনগুলো আলাদা আলাদা থাকে। যে কারণে ওই বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করতে পারছে না বাংলাদেশের অনেক ব্যাংক। সেদিকে ব্যাংকগুলোকে খেয়াল রাখা দরকার।
আরও পড়ুন
সাংবাদিকদের সাথে রংপুর পুলিশ সুপারের মতবিনিময়
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের কারণ উদঘাটনে তদন্ত কমিটি
পাকিস্তান থেকে সরাসরি আসছে জাহাজ, আমদানি বেড়েছে ২১ শতাংশ