জেলা প্রতিনিধি :
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তা নদীর পানি। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার তিস্তার চরাঞ্চলের ৫০০ পরিবার। এদিকে পানি বৃদ্ধিতে প্রায় ২০টি পরিবারে ঘরবাড়ি নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। এ পরিবারগুলো বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছে। শুক্রবার (৯ জুলাই) বেলা ১১টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর (স্বাভাবিক বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার) দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে ব্যারেজ রক্ষায় ৪৪টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে। ডালিয়া পয়েন্টের পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সর্বশেষ রাত ১২টায় পানি ৫২ দশমিক ৯০ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হয়, যা বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। তবে গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। জানা যায়, তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এরইমধ্যে নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ডুবে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী তীরবর্তী মানুষজন গবাদিপশু ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বাঁধ ও আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। এদিকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়া হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, সিঙ্গামারি, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের চৌরাহা, দক্ষিণবালাপাড়া, কুটিরপাড়,চরগোবরধন, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর ও গোকু-া ইউনিয়নের নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এদিকে আদিতমারী উপজেলার চরগোবরধন গ্রামে প্রায় তিন শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। মহিষখোচা ইউপি চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী বলেন, হঠাৎ করে তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় চরাঞ্চলের বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পাশাপাশি চৌরাহা ও কুটিরপাড় এলাকার লোকজন ভাঙন আতঙ্কে রয়েছেন। হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী গ্রামের দিনমজুর শুকুর আলী বলেন, ঘুমোত আছিনো (ঘুমাচ্ছিলাম)। হঠাৎ পানি আসি ঘর ভাসি নিয়া গেইছে। কোনো মতোন বউ-বাচ্চা নিয়া বাঁচি আসছি। হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউপি চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল জানান, গতরাত থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধির ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শতাধিক পরিবার। নদীর পানিতে প্রায় পাঁচজনের ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে। সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা স্বপন বলেন, তিস্তার পানি কয়েকদিন স্বাভাবিক অবস্থায় ছিল। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে আবারও বাড়তে শুরু করে পানি। পানি থেকে বাঁচতে কিছু পরিবার উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। রাতেই বন্যা কবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করে লোকজনদের খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবু জাফর জানান, প্রায় ৭৭ লাখ টাকা ও ৮ মেট্রিক টন শুকনা খাবার বন্যার্ত পরিবারদের জন্য মজুত রয়েছে। বন্যার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া আছে।
আরও পড়ুন
সেন্টমার্টিন ভ্রমণে নিবন্ধনসহ যা করতে হবে পর্যটকদের
জান্নাতে বাবা-মায়ের সাথে সন্তানরা যেভাবে মিলিত হবে
কিশমিশ-মনাক্কায় যত উপকার