গণঅভ্যুত্থানের পর ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা মানবতাবিরোধী মামলায় নিজেকে সম্পূর্ণভাবে দোষমুক্ত দাবি করেছেন। তিনি অভিযোগগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং পূর্বনির্ধারিত রায়ের অংশ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
বিবিসিকে ই-মেইলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তার অনুপস্থিতিতে চলমান বিচার একটি ‘ক্যাঙ্গারু কোর্টের সাজানো প্রহসন’, যা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের নিয়ন্ত্রণাধীন। তার আইনজীবী বা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও দেওয়া হয়নি।
২০২৪ সালের জুলাই-অগাস্টে আন্দোলন দমনকালে হত্যায় উসকানি, প্ররোচনা ও ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি’-সহ পাঁচটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের দাবি করা হয়েছে। একই মামলায় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকেও আসামি করা হয়েছে।
হাসিনা বলেন, আন্দোলন দমনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলেও তিনি কখনও নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেননি। তিনি এই মামলাকে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
জাতিসংঘ মানবাধিকার হাই কমিশন রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই সময় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ১,৪০০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়। তবে হাসিনা তার ব্যক্তিগত কোনো সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন, কোনো কর্মকর্তার দায় থাকলে তা নিরপেক্ষ ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্তভাবে তদন্ত করা উচিত।
আইনজীবীরা ইতিমধ্যেই জাতিসংঘে জরুরি হস্তক্ষেপ চেয়ে ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। মামলার কারণে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ, ফলে দলটি আগামী ফেব্রুয়ারির ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমি অস্বীকার করছি না যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল বা অপ্রয়োজনে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। কিন্তু নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গুলি চালানোর কোনো নির্দেশ আমি কখনও দিইনি।”
এ বছরের শুরুতে ফাঁস হওয়া এক অডিওতে শেখ হাসিনাকে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র’ ব্যবহারের অনুমোদন দেয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ট্রাইব্যুনালেও সেই অডিও শোনানো হয়েছে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, গোপন বন্দিশালায় (যাকে আয়নাঘর বলা হয়) মানুষকে নির্যাতন ও আটক রাখার ঘটনা সম্পর্কে তিনি জানতেন না।
তিনি স্পষ্ট করেছেন, “আমার ব্যক্তিগত সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আমি অস্বীকার করছি। তবে কোনো কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ থাকলে তা নিরপেক্ষ ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত প্রক্রিয়ায় তদন্ত করা উচিত।”
এনএনবাংলা/

আরও পড়ুন
হাসিনার উল্টো সুর, বলছে ‘পতনের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত নেই’
দেশের মানুষ উৎসবমুখর নির্বাচনের অপেক্ষায় আছে: আমীর খসরু
নারীদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়নের চিন্তা করলে ভুল হবে: সেনাপ্রধান