নিজস্ব প্রতিবেদক:
বেড়েই চলেছে গ্যাসের বকেয়া বিলের পরিমাণ। বিগত ২০২২ সালের এপ্রিলে বকেয়া গ্যাস বিরের পরিমাণ ১১ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি থাকলেও এখন পেট্রোবাংলার আওতাধীন উৎপাদন ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর পাওনা ১৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বিপুল পরিমাণ এ অর্থ আদায়ে গ্যাস কোম্পানিগুলোর জোরালো তৎপরতা থাকলেও খুব বেশি কাজে আসছে না। আর বকেয়ার বড় অংশই সরকারি-বেসরকারি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর কাছে আটকে আছে। তাছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠান ও শিল্প-কারখানাগুলোও পরিশোধ করছে না বিপুল অংকের বিল। পেট্রোবাংলা সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে গ্যাস বিতরণে ছয়টি কোম্পানির মধ্যে সবচেয়ে বড় গ্যাস বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল)। গ্রাহক শীর্ষে থাকা কোম্পানিটি বকেয়ার পরিমাণও সবচেয়ে বেশি। পেট্রোবাংলার তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত তিতাসের বকেয়া ৮ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা।
এ ছাড়া বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের বকেয়া ১ হাজার ৭৬৮ কোটি, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ১ হাজার ১১৫ কোটি, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমস লিমিটেডের ২ হাজার ২০৪ কোটি, সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের ৪৮৬ কোটি ও পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড তাদের গ্রাহকদের কাছে ২৩৩ কোটি টাকা পাওনা।
সূত্র জানায়, চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত তিতাস গ্যাস সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছে ১ হাজার ৩৭ কোটি, বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছে ২ হাজার ১৬৭ কোটি, সরকারি সার কারখানার কাছে ২৪৫ কোটি, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছে ২ হাজার ৮১ কোটি ও বেসরকারি শিল্প-কারখানার কাছে ১ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা পাওনা। এ ছাড়া আবাসিক গ্রাহকের কাছে ১ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে।
তাছাড়া তিতাসের মতো বাখরাবাদ গ্যাসেরও সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছে ৮৮৫ কোটি ও বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর কাছে ১৪২ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এ ছাড়া সার কারখানায় ৩৬৪ কোটি, ক্যাপটিভ পাওয়ারে ২৬ কোটি, শিল্প-কারখানায় ২৫ কোটি ও আবাসিক গ্রাহকের কাছে বকেয়া ২৪৬ কোটি টাকা। বাকি বিতরণ কোম্পানিগুলোর বকেয়ারও বড় অংশ সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ক্যাপটিভ পাওয়ার ও আবাসিক গ্রাহকের কাছে পাওনা।
বিপুল এ অর্থ আদায়ে বিতরণ কোম্পানিগুলো বিভিন্ন সময়ে অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদ, জরিমানাসহ নানা ধরনের কার্যক্রম চালালেও বকেয়ার পরিমাণ কমেনি বরং বেড়েছে। সূত্র আরো জানায়, গ্যাস উত্তোলনে দেশে নিয়োজিত রয়েছে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল), সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফসিএল) ও বাপেক্স। তিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মূলত বিতরণকারী কোম্পানিগুলোর কাছে গ্যাস বিক্রি করে।
গ্রাহকের কাছ থেকে পাওনা আদায় করতে না পারায় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বকেয়া পরিশোধ করতে পারছে না বিতরণকারী কোম্পানিগুলো। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত বিজিএফসিএলের বকেয়া ৫১৬ কোটি টাকা, যা গত বছরের এপ্রিলে ছিল ৪০২ কোটি টাকা। এসজিএফসিএলের বকেয়া ৬৬১ কোটি টাকা বেড়ে হয়েছে ৮৭২ কোটি টাকা। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত বাপেক্সের বকেয়া ৮১৯ কোটি টাকা, যা গত বছরের এপ্রিলেও ছিল ৫৭৯ কোটি টাকা। তাছাড়া দেশে গ্যাস সঞ্চালন কোম্পানি হিসেবে নিয়োজিত রয়েছে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল)। কোম্পানিটির বকেয়াও ৮৭২ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
এদিকে দেশে গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখতে সরকার বিভিন্ন সময়ে উচ্চমূল্যে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করছে। বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে এ গ্যাস সরবরাহ দিলেও সঠিক সময়ে টাকা আদায় করতে পারেনি বিতরণ কোম্পানিগুলো। এলএনজি আমদানির জন্য নানা সময়ে অর্থের সংস্থান করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে জ্বালানি বিভাগকে। যদিও গ্যাসের বকেয়া আদায়ে এখন কঠোর অবস্থানে রয়েছে জ্বালানি বিভাগ।
গ্যাস বিল না দিলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন, অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদসহ জরিমানা আদায় কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এর পরও বকেয়া বেড়ে চলার পেছনে যথাযথ তদারকির অভাব রয়েছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। তাদের ভাষ্য, বকেয়া আদায়ে কঠোর অবস্থান ও জোরালো অভিযান থাকলে এ অর্থের অনেকটাই আদায় করা সম্ভব।
অন্যদিকে বিদ্যমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞদের অভিমত, বকেয়া বিল আদায়ে গ্যাস কোম্পানিগুলোর অনীহা, একই সঙ্গে সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। এ ছাড়া বকেয়ার বড় অংশ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর আওতায়। এ বিল আদায়ে রয়েছে পদ্ধতিগত জটিলতা। গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় বড় সংকট অর্থ। ফলে বকেয়া আদায়ে আরো কঠোর হওয়া উচিত। তাহলে কোম্পানিগুলোও আর্থিকভাবে শক্তিশালী হবে। এ বিষয়ে পেট্রোবাংলা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বকেয়া গ্যাস বিল আদায় হচ্ছে না এমনটি নয়, তবে সেটা হচ্ছে ধীরগতিতে।
গ্যাস বিল না দেয়ায় কোম্পানিগুলোকে কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে সেটা করা যায় আবার অনেক ক্ষেত্রে তা বাস্তবায়ন কঠিন। মূলত মামলাজনিত কারণে বকেয়া আদায়ে বিলম্ব হয়। আবার সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্যাস বিল পরিশোধে নানা জটিলতার কারণে বকেয়া বাড়ছে। জোরালো তৎপরতা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে এসব অর্থ আদায় সম্ভব হচ্ছে না।
আরও পড়ুন
পাকিস্তান থেকে সরাসরি আসছে জাহাজ, আমদানি বেড়েছে ২১ শতাংশ
মিমো-নিলয়দের প্যাডসর্বস্ব দল হারালো বিমানবাহিনীকে
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ: পরিকল্পনা উপদেষ্টা