আব্দুর রহমান মিন্টু, রংপুর: রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) এলাকায় চাহিদা অনুযায়ী বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে পারছে না নগরভবন। নগরীতে প্রতিদিন যে পরিমাণ পানির চাহিদা সে অনুযায়ী দুই তৃতীয়াংশ পৌছায় না নগরিকদের কাছে। ভুগর্ভস্থ থেকে পানি তুলতে যেসব গভীর নলকুপ ও পানির ট্যাংক রয়েছে তার বেশীরভাগই বিকল বা বন্ধ থাকায় এই সংকট দেখা দিয়েছে। তবে, দীর্ঘদিন বাসা বাড়িতে পানির সংযোগ না থাকলেও প্রতি মাসে বিল হাকাচ্ছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রসিক ৩৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৫টি ওয়ার্ডে ৪ হাজার ৮৪৮টি পরিবারে গড়ে প্রতিদিন ৪০ হাজার ঘনমিটার বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এজন্য পানি শোধনাগার করা হয়েছে ৩টি। অফিস রয়েছে ৮২টি । পাম্ম হাউস রয়েছে ৩৮টি। ওভারহেড বা পানির ট্যাংক করা হয়েছে ৭টি। জন সাধারণের জন্য উম্মুক্ত পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে দুই জায়গায়।
কিন্তু প্রতিদিন ৪০ হাজার ঘন মিটার পানির প্রয়োজন হলেও সেখানে পানি মিলছে মাত্র ১২ হাজার ২৪০ ঘনমিটার। তিনটি পানি শোধনাগারের মধ্যে নগরীর রবার্টসনগঞ্জ এলাকারটি খুঁড়িয়ে চললেও সেটি দিয়ে ৬টি ওয়ার্ডে শোধনকরা পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। দুই টি শোধনাগার বন্ধ থাকায় অন্য ওয়ার্ডগুলোতে দেয়া হচ্ছে গভীর পাম্মের সরাসরি পানি। ৩৮টি গভীর পাম্ম হাউসের মধ্যে বন্ধ রয়েছে ২২টি। এ কারণে পানির চাহিদা পূরণ হচ্ছে না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগর ভবনের সবথেকে বড় পানি শোধনাগার রয়েছে নগরীর রাধাবল্লভ এলাকায়। এখানকার শোধনাগারটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় মরিচা ধরেছে বিভিন্ন যন্ত্রাংসে। তালাবন্ধ রয়েছে ভবনটি। চারপাশ ময়লা আবর্জনার স্তুপ পড়ে আছে। অযত্ম অবহেলায় পড়ে আছে সবথেকে ভিআইপি এলাকার এই পানি শোধনাগারটি।
অন্যদিকে, নতুন করে নগরীর বাহার কাচনা এলাকায় অত্যাধুনিক একটি পানি শোধনাগার করা হলেও সেটিও বন্ধ বহুদিন ধরে। কবে নাগাদ চালু হবে তাও ঠিকঠাক বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কেউ। বড় বড় ৭টি পানির ট্যাংকের মধ্যে ৫টি বন্ধ।
নগর ভবনের পানি শাখার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে নতুন পানির পাম্ম বসানো হয়েছে। এসব পানি ভুগর্ভস্থ থেকে ওঠে সরাসরি গ্রাহকের কাছে পৌছানো হচ্ছে। তবে, এসব পানি শোধন করা হচ্ছে না। ২২টি পাম্ম মেশিন বন্ধ থাকায় একটি মেশিন দিয়েই বিভিন্ন ওয়ার্ডে পানি সরবরাহ করা হয়। কিন্তু বিদ্যুৎ চলে গেলে প্রয়োজনীয় পানি গ্রাহকদেও কাছে পৌছা সম্ভব হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রায় সাড়ে ৬’শ ফিট ভুগর্ভস্থ থেকে তোলা হলে তাতে আর্সেনিক মুক্ত থাকে ওই পানিতে। দুই দশমিক পাঁচ শতাংশ পরিমাণ আয়রণ থাকছে। এই পানি হয় মিস্টি জাতের।
নাম প্রকাশ না করে পানির দায়িত্বে থাকা একাধিক ব্যক্তি জানান, গভীর নলকুপ থেকে পানি তুলে সরাসরি গ্রাহকের কাছে পানি পৌছায় কোন কোন সময় বালু ওঠে যায়। গ্রাহকের বাসা বাড়িতে থাকা পানির ট্যাংকি দ্রুত ময়লা ও আয়রণ জমে এমন অভিযোগ দেন গ্রাহকরা।
নগরীর গ্র্যান্ড হোটেল মোড়স্থ বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামে রয়েছে বিশাল পানির ট্যাংক। স্থানীয়রা জানান, এই ট্যাংকে গত ১৫ বছরেও চালু হয়নি। পানির ট্যাংক বন্ধ রয়েছে গনেশপুর এলাকাতেও।
স্থানীয় বাসিন্দা নাজমুল ইসলাম জানান, আমার বাসায় সিটি করপোরেশনের পানির লাইন নেই। কিন্তু প্রতি মাসে বাসায় পানির বিল দিচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সিটি করপোরেশনে একাধিকবার বলার পরেও তারা একইভাবে বিল দিয়েই যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমার বাসার দরজার কাছে পানির ট্যাংক রয়েছে। আমি গত ১৫ বছরে এক দিনের জন্য ট্যাংকে পানি উঠতে দেখিনি। একই অভিযোগ রয়েছে নগরীর অন্যান্য ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের।
নিউ আদর্শপাড়ার গ্রহীনি রোখসানা শিল্পী জানান সিটি কপোরেশেনের পানির লাইন আছে কিন্তু পানি নিয়মিত পাইনা । পানি আসলে টিপটিপ করে আসে । পানি না আসলে ফোন দিয়ে জানাতে হয় । তখন পানির লোকজন বলেন মেশিন নষ্ট হয়েছে । ভাল হলে পানি পাবেন । তিনি বলেন আমাদের পানির বিল ও দেয় না ।
রসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতেমা জানান, অগ্রাধিকার ভিত্তিকে বিকল হওয়া পাম্মগুলো মেরামত করে সচল করা হচ্ছে। মেরামতের কাজ আমাদের চলমান রয়েছে।
তিনি বলেন,রংপুর সিটিতে অনেকেই নিজস্ব পাম্ম মেশিন বসিয়ে পানির চাহিদা মেটানোর কারণে খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না।
বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছেন না চাহিদার দুই তৃতীয়াংশ গ্রাহক, দুই শোধনাগার ও ২২ গভীর পাম্প বিকল

আরও পড়ুন
শেরপুরে মহিলা আওয়ামীলীগ নেত্রী গ্রেপ্তার
দীর্ঘ ৫৭ বছর পর কাঙ্ক্ষিত প্লান্টের কাজ শুরু হলেও মেডিকেল মোড় এলাকাবাসীর বিরোধীতার ফলে বন্ধ হয়ে গেল সকল কার্যক্রম
পাবনায় নসিমন-সিএনজি সংঘর্ষে বাবা-ছেলে নিহত