নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা কমলেও তার সুবিধা পাচ্ছে না দেশবাসী। মূলত ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে এমন পরিস্থিতি হয়েছে। প্রতি ডলারে ১০-১২ টাকার অবমূল্যায়নে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। ফলে সংস্থাটি এখনো লোকসানের মধ্যে আছে। ইউক্রেন ও রাশিয়ার চলমান যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম চড়ে রেকর্ড ভেঙেছে। তার প্রভাব দেশের বাজারেও পড়ছে। ভর্তুকি কমাতে ইতোমধ্যে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। তারপরও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) লোকসান দিচ্ছে দৈনিক প্রায় ৮ কোটি টাকা। বিপিসি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মূলত ডিজেলের দাম বিপিসিকে লোকসানে ফেলেছে। বর্তমানে বছরে ৭০ থেকে ৭২ লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি তেলের চাহিদা রয়েছে। তার মধ্যে ডিজেলের চাহিদা ৪৮-৪৯ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমানে দৈনিক গড়ে সাড়ে ১৩ থেকে ১৪ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল বিক্রি হচ্ছে। এখন প্রতি লিটার ডিজেলে বিপিসির লোকসান হচ্ছে ৪-৫ টাকা। গত দেড়-দুই মাস আগেও ডিজেলে লিটারে ৮-১০ টাকা পর্যন্ত লোকসান ছিল। তবে ফার্নেস অয়েল, পেট্রল, অকটেন বিক্রিতে বিপিসির লোকসান নেই। গত আগস্ট মাসে ডিজেলের দাম বাড়ানোর পরও ডিজেল বিক্রিতে এখনো লোকসান দিতে হচ্ছে। বিপিসিকে ব্রেক ইভেন পয়েন্টে (যে অবস্থানে থাকলে লাভ-লোকসান কিছুই হয় না) রাখতে হলে বিশ্ববাজারে পরিশোধিত ডিজেলের দাম প্রতি ব্যারেল ১০৪ ডলারে আসতে হবে। কিন্তু বিশ্ববাজারে এখনো প্রতি ব্যারেল পরিশোধিত ডিজেলের দাম প্রায় ১০৮-১০৯ ডলার।
সূত্র জানায়, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমায় অনেকে এখন দেশেও দাম কমানোর দাবি তুলছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে যদি জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয় তাহলে বিপিসির লোকসান আরো বেড়ে যাবে। তখন লোকসানে থাকা বিপিসি আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। আর লোকসানে থাকা বিপিসিকে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ না দিলে সামনে জ্বালানি বাজার আবার অস্থির হয়ে উঠলে বিপিসির পক্ষে তখন সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
সূত্র আরো জানায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে বিপিসির ৫ হাজার কোটি টাকা লোকসান হয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত বিপিসির ৯ হাজার কোটি টাকারও বেশি লোকসান হয়েছে। জ্বালানি তেলের মূল্য পরিশোধে বিপিসিকে ২ মাসের জ্বালানি তেলের মূল্যের সমপরিমাণ অর্থ (২৫ শতাংশ বৃদ্ধিসহ) চলতি মূলধন হিসেবে রাখতে হয়। আর আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বাড়লে বিপিসির মূলধনও বাড়াতে হয়। ২০২০-২১ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানিতেল তুলনামূলক সহনশীল থাকায় ওই সময় বিপিসির ১২ হাজার কোটি টাকা চলতি মূলধন রাখা হতো। এখন রাখা হচ্ছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা।
এদিকে জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকার চাইলে অকটেন ও পেট্রলে দাম কমাতে পারে। তবে এই মুহূর্তে ডিজেলের দাম কমানোর যৌক্তিকতা নেই। কারণ বিপিসি ডিজেলে এখনো কিছুটা লোকসান দিচ্ছে। আর ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে যে পরিমাণ পরিবহন ভাড়া বেড়েছে এখন দাম কিছুটা কমানো হলেও পরিবহন ভাড়া কমবে না। ফলে তাতে মানুষ কোনো সুবিধা পাবে না। তারচেয়ে ভালো সরকার আয় করুক, যাতে পরবর্তী সময়ে জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে ভর্তুকি হিসেবে দিতে পারে। তবে ওই টাকা অন্য খাতে যাতে ব্যবহার করা না হয়।
অন্যদিকে এ ব্যাপারে বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ জানান, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় প্রায় এক বছর পর্যন্ত বিপিসির নিজস্ব তহবিলের টাকায় ভর্তুকি দিয়ে তেল বিক্রি করা হয়। তাতে প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ করা টাকা থেকে ৯ হাজার কোটি টাকার বেশি ভর্তুকি দিতে হয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা কমেছে। তবে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে তেল আমদানিতে খরচ বেশি পড়ছে। তাতে এখনো লোকসানের মধ্যেই আছে বিপিসি। তবে জ্বালানি তেলের দাম কমায় বিপিসির লোকসানের মাত্রা কিছুটা কমে এলেও বিপিসে এখনো লোকসানমুক্ত হতে পারেনি।
আরও পড়ুন
রেমিট্যান্স আহরণে ‘গোল্ড অ্যাওয়ার্ড’ পেলো ইসলামী ব্যাংক
চিকিৎসার জন্য বেগম খালেদা জিয়ার লন্ডন যাওয়ার দিনে সৃষ্ট যানজটে বিএনপির দুঃখ প্রকাশ
মাসুদা ভাট্টির বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের প্রতিবেদন