December 18, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, December 17th, 2025, 7:41 pm

বিশ্বব্যাংকের সালিশি আদালতে এস আলমের করা আবেদনের বিরুদ্ধে লড়বে সরকার: গভর্নর

 

আলোচিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের করা আবেদনের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের সালিশি আদালত ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর সেটেলমেন্ট অব ইনভেস্টমেন্ট ডিসপিউটস (আইসিএসআইডি)-এ আইনি লড়াইয়ে নামছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ ও পাচার করা অর্থ পুনরুদ্ধার সংক্রান্ত বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।

এ সময় তিনি বিশ্বব্যাংকের সালিশি আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে এস আলম গ্রুপের সমালোচনা করেন এবং বিষয়টিকে ‘চোরের মায়ের বড় গলা’ বলে মন্তব্য করেন।

বিশ্বব্যাংকের সালিশি আদালতে এস আলম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাইফুল আলম ও তার পরিবারের আইনজীবীরা গত ২৭ অক্টোবর ওয়াশিংটনে অবস্থিত আইসিএসআইডি-তে আবেদন জমা দেন। লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

আবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে, সরকারের পক্ষ থেকে তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ ও সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি ব্যবসায়িক লেনদেন নিয়ে ভিত্তিহীন তদন্ত চালানো হয়েছে এবং এস আলম পরিবারকে লক্ষ্য করে প্ররোচনামূলক গণমাধ্যম প্রচারণা হয়েছে। এসব কারণে শত কোটি ডলারের ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে বলে দাবি করা হলেও ক্ষতিপূরণের নির্দিষ্ট অঙ্ক উল্লেখ করা হয়নি।

বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে ২০০৪ সালে স্বাক্ষরিত দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তির আওতায় এই সালিশি মামলা করা হয়েছে। বর্তমানে এস আলম পরিবারের সদস্যরা সিঙ্গাপুরে বসবাস করছেন। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের তথ্যমতে, ২০২০ সালে তারা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন এবং ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন।

এস আলম পরিবারের অভিযোগ, তাদের লক্ষ্য করেই সরকার নানা শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে অযৌক্তিকভাবে সম্পদ জব্দ ও বাজেয়াপ্ত করা এবং সম্পদ ধ্বংস। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার এসব ব্যবস্থা গ্রহণ করছে বলে তারা দাবি করেছে।

এ প্রসঙ্গে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এস আলম গ্রুপ দাবি করছে তারা সিঙ্গাপুরের নাগরিক। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক প্রমাণ করবে যে তারা বাংলাদেশের নাগরিক ছিলেন এবং দেশের বিভিন্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বলেন, “চোরের মায়ের বড় গলা। আমরা এই মামলাটি আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে মোকাবিলা করব।”

পাচার করা অর্থ দ্রুত ফেরত আনার সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে গভর্নর জানান, বিদেশ থেকে অর্থ পুনরুদ্ধারে সাধারণত চার থেকে পাঁচ বছর সময় লাগে। এর কম সময়ে তা সম্ভব নয়। তিনি আশা প্রকাশ করেন, লন্ডনে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে চলমান মামলার নিষ্পত্তি দ্রুত হবে, কারণ ওই মামলায় তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনে সক্রিয় ছিলেন না। ফলে মামলাটি স্বাভাবিকভাবেই দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। ওই মামলায় ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ও ইউসিবিএল পক্ষভুক্ত রয়েছে। তবে অর্থ দেশে ফেরত আসতে কত সময় লাগবে, তা এখনই নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। ফেব্রুয়ারি থেকে জুন—যেকোনো সময়ে তা হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, অন্যান্য মামলাগুলো সংশ্লিষ্ট আবেদনের ওপর নির্ভরশীল। ইতোমধ্যে একাধিক আবেদন জমা পড়েছে এবং পুরো প্রক্রিয়াটি দীর্ঘমেয়াদি। এ ক্ষেত্রে সরকারের করার তেমন কিছু নেই, তবে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে এবং সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে।

গভর্নর জানান, পাঁচটি ইসলামী ব্যাংক একীভূত করে গঠিত নতুন সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের জন্য সরকার ইতোমধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড় দিয়েছে। এই অর্থ সরাসরি বাজেট থেকে প্রদান করা হয়েছে।

একীভূত হওয়া আগের ব্যাংকগুলোর আমানতকারীরা কবে টাকা ফেরত পাবেন—এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এতে কিছুটা সময় লাগবে। কিছু প্রক্রিয়াগত বিষয় সম্পন্ন করতে হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, আমানতকারীদের ব্যাংক হিসাবে সরাসরি টাকা জমা দেওয়া হবে এবং একসঙ্গেই সবাই তাদের প্রাপ্য অর্থ পাবেন।

এনএনবাংলা/