November 25, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, November 25th, 2025, 3:14 pm

বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু–ঝুঁকিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশ: বিশ্বব্যাংক

 

দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু–ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলোর একটি—আর এই অঞ্চলের ভেতর সবচেয়ে বেশি বিপদাপন্ন দেশ বাংলাদেশ।

বিশ্বব্যাংকের সদ্য প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন সতর্কতা জানানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ চরম তাপমাত্রার মুখোমুখি হবে, আর প্রায় এক–চতুর্থাংশ মানুষকে ভুগতে হবে গুরুতর বন্যার ঝুঁকিতে। উপকূলীয় এলাকায় পানি ও মাটির লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের লাখো মানুষের জীবন ও জীবিকা ক্রমেই হুমকির মুখে পড়ছে।

সোমবার (২৪ নভেম্বর) প্রকাশিত ‘Bangladesh and Other South Asian Countries: Climate Resilience Will Be Private Sector–Led’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলার বড় চাপ এখন পরিবারের পাশাপাশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকেও বহন করতে হচ্ছে। জরিপে দেখা গেছে, আগামী দশকের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার তিন–চতুর্থাংশ পরিবার ও প্রতিষ্ঠান কোনো না কোনো আবহাওজনিত ধাক্কার আশঙ্কা করছে। যদিও ইতোমধ্যে ৮০ শতাংশ পরিবার ও ৬৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠান কিছু না কিছু অভিযোজনমূলক উদ্যোগ নিয়েছে, তবে এর বেশির ভাগই স্বল্প ব্যয় ও সাধারণ পর্যায়ের সমাধান।

বাংলাদেশের উপকূলের ২৫০টি গ্রাম নিয়ে করা এক জরিপে উঠে এসেছে—জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামোই সেখানে সবচেয়ে বড় অপূর্ণ চাহিদা। দীর্ঘমেয়াদে ৫৭ শতাংশ পরিবার বলেছে, দুর্যোগ–সুরক্ষা অবকাঠামোর ঘাটতিই তাদের প্রধান বাধা; আর ৫৬ শতাংশের মতে, অভিযোজনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক সক্ষমতা তাদের নেই। প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সংকট কেবল পরিবেশগত নয়; এটি মানুষের জীবনধারা, জীবিকা ও সামাজিক স্থিতিশীলতার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত—বিশেষত দরিদ্র ও কৃষিনির্ভর পরিবারই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।

বিশ্বব্যাংক জানায়, বাঁধ, সাইক্লোন শেল্টারসহ সরকারি বিনিয়োগ দুর্যোগে প্রাণহানি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো—বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের অভিজ্ঞতা দেখায় যে, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি ও হালনাগাদ তথ্যের সমন্বয়ে দ্রুত সহায়তা পৌঁছানো সম্ভব। তবে রাজস্ব সংকটের কারণে সরকারি সক্ষমতা সীমিত হওয়ায় বেসরকারি খাতকে অভিযোজন প্রক্রিয়ায় যুক্ত করতে নীতিগত প্যাকেজ জরুরি হয়ে উঠেছে।

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটান অঞ্চলের পরিচালক জ্যঁ পেসমে বলেন, বাংলাদেশের স্থিতিস্থাপকতা ক্রমাগত নতুন পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের মুখে পরীক্ষিত হচ্ছে। দেশ ইতোমধ্যে ব্যাপক অভিযোজন করছে, কিন্তু জলবায়ু ঝুঁকি দ্রুত বাড়ায় আরও অনেক পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন—আগাম সতর্কীকরণ, সামাজিক সুরক্ষা, জলবায়ু–স্মার্ট কৃষি, অভিযোজন অর্থায়ন এবং নগর এলাকায় পরিকল্পিত বিনিয়োগ বাড়ানো অত্যন্ত প্রয়োজন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জলবায়ু অভিযোজনের জন্য এখন বহুস্তরীয় ও সমন্বিত পদক্ষেপ অত্যাবশ্যক। উন্নত আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা, আনুষ্ঠানিক ঋণ ও বীমার আওতা বাড়ানো এবং যেখানে প্রয়োজন সেখানে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ পুনর্নির্মাণ করলে জলবায়ু–জনিত ক্ষতির এক–তৃতীয়াংশ কমানো সম্ভব। সীমিত বাজেটেও পরিবহন ও ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়ন এবং লক্ষ্যভিত্তিক সামাজিক সহায়তা জোরদার করে সরকার এই প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে।

নতুন প্রযুক্তিভিত্তিক অভিযোজন, সড়ক–ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যসেবার মতো মৌলিক সরকারি সেবা জোরদারের ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।

সহ–লেখক সিদ্ধার্থ শর্মা মনে করেন, জলবায়ু অভিযোজনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা যেমন শিক্ষণীয়, তেমনি এটি বড় ধরনের পরীক্ষা। মানুষ ও প্রতিষ্ঠান নিজেরা অভিযোজন করলেও চ্যালেঞ্জের জটিলতা ও ব্যাপকতা সামাল দিতে সরকারের সঙ্গে বেসরকারি খাতের সমন্বিত, দ্রুত পদক্ষেপ জরুরি।

বিশ্বব্যাংকের মতে, বাংলাদেশের সামনে এখন স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তোলার বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে। আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা ও সাইক্লোন শেল্টারে বিনিয়োগ ইতোমধ্যে বড় দুর্যোগেও প্রাণহানি কমাতে সফল হয়েছে—যা প্রমাণ করে যে লক্ষ্যভিত্তিক বিনিয়োগ ও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান স্থানীয় অভিযোজনকে বিস্তৃত পরিসরে নিয়ে যেতে পারে। সরকার, বেসরকারি খাত ও কমিউনিটির সমন্বিত অংশীদারিত্ব জোরদার করতে পারলে শুধু দুর্বলতা কমবে না, দীর্ঘমেয়াদে টেকসই উন্নয়নও নিশ্চিত হবে।

এনএনবাংলা/