বেক্সিমকো টেক্সটাইলসের হিসাব অনুযায়ী, কারখানাগুলোতে মোট শ্রমিক ছিল ৪৫,০০০; বর্তমানে এ সংখ্যা ৩৫,০০০। শ্রম আইন অনুযায়ী, তাদের পাওনা পরিশোধ করতে ৫৫০-৬০০ কোটি টাকা দরকার। অন্যদিকে, শ্রমিকদের বেতন-ভাতা চালু রেখে কারখানাগুলো সচল রাখতে ৪০০ কোটি টাকা সহায়তা চেয়েছিলো বেক্সিমকো। তবে তাদের আবেদনে সাড়া দেয়নি সরকার ও জনতা ব্যাংক।
আলোচিত বেক্সিমকো টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেল ডিভিশনের অধীন কারখানাগুলো সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে সকল শ্রমিককে ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ছাঁটাই করা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এসব কারখানার শ্রমিকদের সকল পাওনা আগামী ৯ মার্চ থেকে পর্যায়ক্রমে পরিশোধ করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও শ্রম মন্ত্রণালয় এসব পাওনা পরিশোধের অর্থের যোগান দেবে। শ্রম মন্ত্রণালয় সরাসরি শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করার দায়িত্ব পালন করবে বলে জানানো হয়েছে এক বিজ্ঞপ্তিতে।
বুধবার শ্রম ও কর্মসংস্থান বিষয়ক উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের শ্রম ও ব্যবসা পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
নোটিশে বলা হয়েছে, গাজীপুরের কাশিমপুরের বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে অবস্থিত বেক্সিমকো লিমিটেডের (ইয়ার্ন ইউনিট-১ ব্যাতিত) অপর ১৩টি প্রতিষ্ঠানসহ মোট ১৪টি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সকল কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং শ্রমিকদের বিশেষ অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, কারখানায় কোনো কাজ না থাকার কারণে গত ১৬ ডিসেম্বর এবং ৫ ফেব্রুয়ারি হতে শ্রম আইন অনুযায়ী লে-অফ ঘোষণা করা হয়।
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘কোনোভাবেই কাজের সংস্থান না থাকায় কারখানার সকল শ্রমিককে ২৮ ফেব্রুয়ারি হতে ছাঁটাই করা হলো এবং প্রতিষ্ঠানের সকল কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হলো। ছাঁটাইকৃত সকল শ্রমিককে আইন ও বিধি অনুযায়ী তাদের সকল প্রাপ্য পাওনাদি ৯ মার্চ হতে পর্যায়ক্রমে পরিশোধ করা হবে।’
বুধবার স্বাক্ষরিত এই নোটিশের অনুলিপি অর্থ, শ্রম ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি দপ্তরগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
বেক্সিমকো টেক্সটাইলসের হিসাব অনুযায়ী, কারখানাগুলোতে মোট শ্রমিক ছিল ৪৫,০০০; বর্তমানে এ সংখ্যা ৩৫,০০০। শ্রম আইন অনুযায়ী, তাদের পাওনা পরিশোধ করতে ৫৫০-৬০০ কোটি টাকা দরকার হবে। অন্যদিকে, শ্রমিকদের বেতন-ভাতা চালু রেখে কারখানাগুলো সচল রাখতে ৪০০ কোটি টাকা সহায়তা চেয়েছিলো বেক্সিমকো। তবে তাদের আবেদনে সাড়া দেয়নি সরকার ও জনতা ব্যাংক।
বেক্সিমকো গ্রুপের অন্যতম কর্ণধার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্পবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান গত ১৩ আগস্ট থেকে কারাগারে রয়েছেন। ২৯ আগস্ট সালমান এফ রহমান, তার ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান, পুত্রবধূ শাজরেহ রহমানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। গত ১৮ সেপ্টেম্বর রপ্তানি বাণিজ্যের আড়ালে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে সালমান এফ রহমানসহ বেক্সিমকোর ২৮ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ।
বেক্সিমকো গ্রুপের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রি করে শ্রমিকদের পাওনা মেটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। পরে শেয়ার বিক্রিতে জটিলতা দেখা দেওয়ায় সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত হয়।
হাসিনা সরকারের পতনের পর বেক্সিমকো শিল্প পার্কের আওতায় থাকা ৩১ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৬টি প্রতিষ্ঠান আগেই পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের বিপরীতে ব্যাংকঋণ ২৮ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা। তহবিল সংকট ও কাঁচামাল আমদানির জন্য ঋণপত্র খুলতে না পারায় কারখানাগুলো লে-অফ ঘোষণা করে বেক্সিমকো গ্রুপ।
বেক্সিমকো গ্রুপের দাবি, তাদের টেক্সটাইল এবং পোশাক বিভাগ বহু বছর ধরে জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। গত ছয় বছরে গড়ে তাদের মাসিক রপ্তানির পরিমাণ ৩২ মিলিয়ন ডলার। ২০২২ সালে, গড় মাসিক রপ্তানি ৫৯ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল।
আরও পড়ুন
২৬ বাংলাদেশির অভিযোগ শুনলেন ফিজির প্রধানমন্ত্রী, নিলেন পদক্ষেপ
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলসহ চার দাবিতে মাঠে নামছে হেফাজত
গণতন্ত্র এখনো চোরাবালিতে, মুক্তি আসবে তারেক রহমানের নেতৃত্বে