December 19, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, December 18th, 2025, 6:55 pm

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতারা ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত হলেও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কর্মীরা

বেরোবি প্রতিনিধি

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) জুলাই অভ্যুত্থান হাসিনা সরকার পতনের পর ক্যাম্পাস থেকে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নেতারা বিতাড়িত হলেও কর্মীরা ক্যাম্পাসে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।

এমনকি বহাল তবিয়তে রয়েছেন আবাসিক হলে। শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের সিট বাতিল হলেও বাতিল হয়নি উগ্র নেতা কর্মীদের সিট।

শহীদ মুখতার ইলাহী হল সূত্রে জানা যায়, ৪০৫ নম্বর রুমে অবৈধভাবে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা রায়হান কবির ও রনি আহমেদ অন্যের সিটে অবস্থান করছেন। সম্প্রতি তাদের রুমে বৈধ সিটে অ্যালটমেন্ট দিলেও এ দুই ছাত্রলীগ কর্মী তাদের উঠতে দেয়নি। সে সিটে অবৈধভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ ব্যাচের সাবেক এক শিক্ষার্থীকে তারা রাখে৷ পরে হল প্রশাসনের সহয়তায় ৪ দিন পর ওই রুমে বৈধ সিটের শিক্ষার্থী উঠে। রুমে নতুন অ্যালটমেন্ট পাওয়া শিক্ষার্থীদের সাথে অসদাচরণের অভিযোগও উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। রুমে গভীর রাতে উচ্চস্বরে মোবাইল বাজানো, কথা বলা, ফ্রী ফায়ার গেম খেলা এবং ভিডিও কলে উচ্চ শব্দে প্রেমিকার সাথে কথা বলার মত গুরুতর অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে।

এদিকে রায়হান কবিকে ছাত্রলীগ আমলে বিভিন্ন মিছিলে প্রথম সারিতে দেখা গেছে।  সর্বশেষ জুলাই আন্দোলনে ১১ জুলাই ছাত্রলীগের মিছিল ও ১৬ জুলাই আন্দোলন আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের দিনেও ছাত্রলীগের সাথে দেখা যায় রায়হানকে। ছাত্রলীগের সাথে তার একাধিক ছবি পাওয়া গেছে। প্রথম দিকে তার বিরুদ্ধে জুলাই হামলায় নাম থাকলেও পরে অদৃশ্য কারণে প্রশাসন তার নাম বাদ দেয়।  যার ফলে সে শাস্তি থেকে বেঁচে যায়।

এদিকে মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী রনি আহমেদকেও ছাত্রলীগের একাধিক প্রোগ্রামে দেখা যায়। এছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্ল্যাকার্ড হাত ছাত্রলীগের প্রথম সারির মিছিলে দেখা যায়। এ দুইজন ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিল বলে জানা গেছে৷

বিষয় গুলো জানাজানির পরেও  ক্যাম্পাসে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা। এছাড়াও জুলাই হামলার অভিযুক্ত অনেকের শাস্তি শেষে ফিরেছেন ক্লাসে। অনেক ছাত্রলীগ কর্মী ভিড়েছেন শিবির-ছাত্রদলে।

রুমমেটদের সাথে অসদাচরণের বিষয়টি অস্বীকার করে রায়হান রায়হান কবির বলেন, এমন কিছু রুমে হয় না।

রনি আহমেদ বলেন, এগুলো নিউজ করার মত। ফোনে কিছু বলতে পারব না।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রদলের সভাপতি মো. ইয়ামিন বলেন, আমরা দীর্ঘ ১৭ বছর ফ্যাসিবাদী আন্দোলন করে আসছি। ফ্যাসিবাদের আন্দোলনে পাতায় পাতায় ছাত্রদলের রক্ত। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সব সময় আমাদের অবস্থান। সে জায়গায় বেরোবিতে আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত এবং তাদের সংগঠন কেউ যদি ক্যাম্পাসে অবস্থান করে তার পুরো দায়ভার প্রশাসনের।

তিনি আরও বলেন,আমরা সব চেয়ে আসছি এদের (ছাত্রলীগ) বিচার। আর যাতে এরা হলে অবস্থান করতে না পারে। কিন্তু এখনো ছাত্রলীগের পদধারীসহ কর্মীরা হলে অবস্থান করছে৷ এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে আমরাও মুভমেন্টে নামব।

শিবির সভাপতি সুমন সরকার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের উচিত ছিল ৫ আগস্টের পর যারা ছাত্রলীগ ছিল হামলাকারী ছিল তাদের শাস্তি দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়া কিন্তু প্রশাসন তা করেনি। আমরা জানি না প্রশাসনের সাথে তাদের কোনো আঁতাত আছে কিনা। থাকতেও পারে। আমরা ছাত্র সংগঠন হিসেবে প্রশাসনকে জানিয়েছি। বিভিন্ন সময়ে লেখালেখি করেছি কিন্তু প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে তেমন ব্যবস্থা নেয়নি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রোগ্রাম সবার জন্য উন্মুক্ত যে কেউ আসতে পারে। তবে পোস্টেট ছাত্রলীগ বা জুলাই হামলা জড়িত ছিল কেউ আমাদের কর্মসূচিতে নেই। তারা কেউ ছাত্র শিবিরে জড়িত না।

শহীদ মুখতার ইলাহী হলের প্রভোস্ট ড. মো. কামরুজ্জামান বলেন, কেউ যখন দোষী সাব্যস্ত হয় এবং তা প্রমাণিত হয় তখন সিট বাতিল হয়। এছাড়া যদি প্রশাসন আমাদের কোনো নির্দেশনা দেয় তখন আমরা তাদের সিট বাতিল করি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো.শওকাত আলী বলেন,আমি তো জানি না ৫ আগস্টের আগে কে ছাত্রলীগ করত এ বিষয়টি প্রক্টরিয়াল টিম ও হল প্রশাসন আছে তারা দেখবেন। আমি তাদের বিষয়টি জানাবো। এছাড়া যারা শাস্তি পেয়েছে তারা শাস্তি শেষে ক্যাম্পাসে আসলেও তাদের ওপর নজরদারি রাখার কথা বলব। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটুক আমরা চাই না।