December 28, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, October 10th, 2024, 8:02 pm

বৈষম্যমুক্ত হোক আবু সাঈদের বিশ্ববিদ্যালয়

মোহাম্মদ আলী, জনসংযোগ কর্মকর্তা

দেশের উত্তর জনপদের উচ্চ শিক্ষার বাতিঘর হিসেবে পরিচিত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর। এই অঞ্চলের গণমানুষের দীর্ঘ আন্দোলন ও সংগ্রামের ফসল এটি। আশা-আকাঙ্খা এবং প্রত্যাশার বিশ্ববিদ্যালয় হাটি হাটি পাঁ পাঁ করে আজ ১৭ বছরে পদার্পন করছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠার ১৬ বছরে কাঙ্খিত প্রত্যাশা অনেকাংশেই পূরণ হয়নি, বরং বৈষম্যে কাবু হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে জীবন দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি ছাত্র শহীদ আবু সাঈদ। তার এই চেতনা ধারণ করে অন্তত এখন থেকেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্য মুক্ত হোক।

বাংলাদেশের ইতিহাসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এটিই একমাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০৮ সালের ১২ অক্টোবর, এইদিনে বিশ্ববিদ্যারয়টির যাত্রা শুরু হয়। প্রতিষ্ঠাকালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ছিলো রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়। পরবর্তী আওয়ামী সরকারের আমলে নাম পরিবর্তন করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর নামকরণ করা হয়।

৩০০ শিক্ষার্থী ও ১২ জন শিক্ষক নিয়ে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে ২০০৯ সালের ৪ এপ্রিল শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়টি অনুষদের অধীনে ২২টি বিভাগে প্রায় আট হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ২০৫ জন। উচ্চতর গবেষণার জন্য ড. ওয়াজেদ ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট থাকলেও শুরু থেকেই রয়েছে প্রায় অচলাবস্থা। এখনো কাউকে ডিগ্রি প্রদান করা সম্ভব হয়নি। শিক্ষার্থীদের জন্য মোট চারটি আবাসিক হল, প্রশাসনিক ভবন, চারটি একাডেমিক ভবন, কেন্দ্রিয় লাইব্রেরি, মসজিদ, ক্যাফেটেরিয়া ভবনসহ আবাসিক স্থাপনা রয়েছে অপ্রতুল। খুব সহজেই বলা যায়, প্রতিষ্ঠার ১৫ বছরে এই অর্জন যথেষ্ঠ নয়। কারণ, ৭৫ একরের এই ক্যাম্পাসে যেসব স্থাপনা ব্যবহার করা হচ্ছে তা ২০০৮ সালের স্থাপন প্রকল্পের আওতায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দেওয়া। স্থাপন প্রকল্প ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ আওয়ামী শাসনামলে আর কোনো প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়নি। একটি প্রকল্প পাওয়া গেলেও তা অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে।

এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে- ‘মানসম্পন্ন শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে মানবতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে বর্তমান ও ভবিষ্যতে, নেতৃত্ব প্রদানে সক্ষম মানবসম্পদ সৃষ্টির লক্ষ্যে, প্রধান বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের জ্ঞান আহরণ; লিখিত, মৌখিক ও ইলেকট্রনিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে উৎকর্ষ অর্জন এবং সর্বাধুনিক প্রায়োগিক কলাকৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে যুগোপযোগী জ্ঞান বিতরণ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য।’ কিন্তু এই লক্ষ্য অর্জনে বরাবরই বৈষম্যের শিকার হয়েছে বিশ^বিদ্যালয়টি।

প্রতিষ্ঠাকালীন ১৫ বছরের জন্য অনুমোদিত পরিকল্পনায় (অর্গানুগ্রাম) ২০২৪ সালের জুন মাসের মধ্যে এখানে আটটি অনুষদে ৪৭টি বিভাগ চালু হওয়ার কথা। কিন্তু এ পর্যন্ত ছয়টি অনুষদের অধীনে খোলা হয়েছে মাত্র ২২টি বিভাগ। আইন অনুষদ এবং কৃষি অনুষদ খোলাই হয়নি। এছাড়াও আরো অনেক যুগোপযোগী বিভাগ খোলা হয়নি।
প্রতি ১৪ শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও এখানে প্রায় ৩৩জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে রয়েছে একজন শিক্ষক। ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা বঞ্চিত। শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের মধ্যে ৪০জন আবাসন সুবিধা পেলেও কর্মচারীদের জন্য কোনো আবাসন সুবিধা গড়ে ওঠেনি। শিক্ষার্থীদের জন্য ক্লাস রুম সংকট প্রকট। এখনো পর্যন্ত অডিটরিয়াম, জিমনেশিয়াম এবং টিএসসি নির্মাণ করা হয়নি। লাইব্রেরি ভবনটিও যথেষ্ঠ নয়। পর্যাপ্ত বই কেনা হলে হয়তো রাখারও জায়গা হবে না। পরিবহন ব্যবস্থাপনাতেও সংকট রয়েছে। বার্ষিক বাজেট বরাদ্দেও এই বিশ^বিদ্যালয় অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় অনেক পিছিয়ে। বিগত ১৬ বছরে উন্নয়ন বরাদ্দ লক্ষ করলে সহজেই বুঝা যায় এই বিশ্ববিদ্যালয় কী পরিমাণে বৈষম্যের শিকার।

এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বিগত সরকারের আমলে উন্নয়ন বঞ্চিত হলেও যেহেতু এটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রতিষ্ঠিত সুতরাং বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে অনেক প্রত্যাশা। ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন একজন উপাচার্য নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে মতবিনিময় করেছেন। বিশ^বিদ্যালয়ের সংকট, সমস্যা ও সম্ভাবনা সম্পর্কে তিনি অবগত হয়েছেন। আশাকরি, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাথে আলোচনা করে বিগত ১৬ বছরের ঘাটতি পূরণ করতে পারবেন।
তাছাড়া, দেশের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের প্রথম শহীদ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে তিনি জীবন দিয়েছেন। সুতরাং শহীদ আবু সাঈদের বিশ্ববিদ্যালয় বাজেট বরাদ্দে কিংবা উন্নয়ন প্রকল্পে অন্যান্য বিশ^বিদ্যালয়ের তুলনায় বৈষম্য হবে না, এমনটিই প্রত্যাশা।

লেখক: অতিরিক্ত পরিচালক (জনসংযোগ) ও অফিস প্রধান
জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা বিভাগ
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর