জেলা প্রতিনিধি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। মধু মাসে লিচুর নাম শুনতেই জিভে পানি আসতে থাকে, টসটসে রসালো লিচু, খেতে ভারী স্বাদ। কলম করা লিচু গাছে ১ বছর পর থেকে লিচুর ফুল ধরতে শুরু করে, কিন্তু ২ বছর ফাক দিয়ে ফল বাজারে তুললে ভাল হয়, একটি লিচু গাছ একাধারে ৪০/৫০ বছর পর্যন্ত লিচু ধরে থাকে। বছরের ডিসেম্বরের শেষ সময়ে ফুল আসতে শুরু করে এবং মে মাসের শুরুতে কিছু কিছু দেশীয় প্রজাতির লিচু বাজারজাত আসতে থাকে এবং মে মাসের মাঝা মাঝি সময়ে পুরোদমে লিচু বিক্রি শুরু হয়ে এক মাসের মধ্যেই লিচুর বাজার শেষ। ভরা মৌসুমে লিচু বাজারে পাওয়া যায়, কিন্তু নিজ হাতে গাছ হতে লিচু খাওয়ার মজাই আলাদা, তাইতো ভরা মৌসুমে লিচু বাগান গুলোতে ঘোরার জন্য প্রায় সব বয়সী মানুষের আনাগোনা লক্ষ করা যায়।
পাহাড়ি উচু লাল মাটি লিচু চাষের খুবই উপযোগী, সুস্বাদু হওয়ায় এর চাহিদা ও আবাদ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। লিচুর ভাল ফলনের আশায় কৃষক বুকবাধে ও লিচু গাছের নিবিড় পরিচর্যা করে থাকে, এবারও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। সুপ্রাচীন কাল থেকে পাহাড়ি উচু এলাকায় লিচুর আবাদ হয়ে থাকলেও ২০০১ সাল থেকে অত্র এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে এর আবাদ শুরু হয়।
জেলায় ৩ টি উপজেলায় লিচুর আবাদ হয়ে থাকে, এর মধ্যে বিজয়নগরে ৪১৪ হেক্টর, আখাউড়ায় ৭০ হেক্টর, ও কসবায় ২০ হেক্টর,ভূূমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে।
এলাকার লিচু চাষীরা জানান, লিচু গাছের জন্য পরিমাণ মতো সার কিটনাশক, এবং সময় সময় গাছের গোড়ায় পানি একান্ত দরকার, সব কিছু ঠিক থাকলে সঠিক মাত্রায় ফলন আশা করা যায়। বৈরী আবহাওয়া ৩৯ ডিগ্রী তাপমাত্রা অতিখরা ও অনাবৃষ্টি, শীলা বৃষ্টি এবং পানির উৎস না থাকায় কৃষক লিচু গাছের গোড়ায় প্রয়োজন মতো পানি সর্বরাহ করতে না পাড়ায়, এ বছর লিচুর চামড়া ফেটে অনেক ফল নষ্ট হয়েছে, অনেক কৃষক জানান, লিচু গাছের রোগ বালাই দমনে ভালো মানের কীটনাশক গাছের জন্য খুব দরকার, এলাকার কীটনাক বিক্রেতারা অতি মুনাফার আশায় কম দামের নকল বিষ সর্বরাহ করায় এতে করে গাছের পোকা দমন ও রোগবালাই দুর হচ্ছে না, ফলে গাছ থেকে বিপুল হারে ফল ঝরতে থাকে। আর এসব কারণে কৃষক আশানুরুপ ফল পাওয়া থেকে বঞ্ছিত হচ্ছে ফলন কিছুটা কম হয়েছে।
এ বিষয়ে বিজয়নগর উপজেলার উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল আলম জানান, উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নের মধ্যে পাহাড়পুর ইউপি, বিষ্ণুপুর ইউপি, চম্পকনগর ইউপি ও সিঙ্গারবিল ইউপিতে বেশী আবাদ হয়েছে, তন্মধ্যে শুধু পাহাড়পুরে ২০০ হেক্টর জমিতে এর আবাদ হয়েছে। পাহাড়ি লাল বেলে মাটি লিচু চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। চাষীরা জানান, এখানে বিভিন্ন জাতের লিচুর আবাদ হয় থাকে দেশীয়, চায়না ২, চায়না থ্রি, বোম্বাইয়া , এলাচি ও পাটনা। তনমধ্যে চায়না থ্রী ও বোম্বাইয়া জাতের লিচুর আকারে বড়, সুমিষ্ট স্বাদ হওয়ায় এর চাহিদাও বেশি।
সরেজমিনে বাজার ঘুরে জানাযায়, বিজয়নগর উপজেলার আউলিয়া বাজার ও চম্পকনগর বাজার এর পাইকারী হাট, ভোর ৫ টা থেকে সকাল ৯ টা পর্যন্ত এ হাট বসে, ছোট- বড় যান নিয়ে ভোর রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পাইকাররা বাজারে চাষীদের লিচু নিয়ে নিয়ে আসার অপেক্ষায় থাকে, পাইকারি লিচু হাজার হিসেবে দাম নির্ধারণ হয়, সাইজে বড় ও সু মিষ্ট হওয়ায় চায়না ৩ ও বোম্বাইয়া এর দাম ২৮০০ থেকে ৩০০০ টাকা, অন্যান্য লিচুর বাজার দর টাকা ১৮০০ টাকা। লিচু খুচরা ”শ” হিসেবে বিক্রি হয়। খাটিঙ্গা গ্রামের জালাল উদ্দীন বলেন, প্রচন্ড খরা ও অনাবৃষ্টির কারণে এ বছর লিচুর শাঁস কম হওয়ায়, আকারে ছোট হয়েছে। পাহাড়পুর ইউপির প্রায় প্র্রতিটি বাড়ির আঙিনায় ও আশপাশের ভিটা বাড়িতে লিচু গাছ দেখা যায়।
এ বিষয়ে আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম জানান, এবছর লিচুর আকার কিছুটা ছোট কিন্তু ফলন বেশী, উপজেলয় ৩ টি ইউপিতে লিচু বেশী আবাদ হয় আখাউড়া উত্তর, আখাউড়া দক্ষিণ,ও মনিয়ন্দ। এছাড়াও প্রায় বাড়িতে লিচু গাছ রয়েছে।
এ বিষয়ে কসবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজেরা বেগম জানান, ২০ হেক্টর জমিতে এর আবাদ হয়েছে, লিচু চাষীরা তাদের কাঙ্খিত ফলন পেয়ে অনেক খুশি।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি অফিসার সুশান্ত সাহা জানান, বৈরী আবহাওয়াতেও এবছর ২৭৫০ মেট্রিকটন লিচু লক্ষমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে। লিচু চাষীদের সার, রোগবালাই, কীটনাশক,বাজার ইত্যাদি সার্বক্ষনিক পরামর্শ দিয়ে কৃষকের পাশে রয়েছে কৃষি বিভাগ, পরিপক্ষ একটি গাছ থেকে লক্ষ রাকার লিচু বিক্রি করা যায়, সব মিলিয়ে লিচু লাভ জনক ফল, উত্তরোত্তর এর চাহিদা বাড়ছে। কাঙ্খিত ফলনে কৃষকের খুশিতে আমরা ও খুশি।
আরও পড়ুন
শেরপুর ও ময়মনসিংহে আকস্মিক বন্যা, তলিয়ে গেছে ১৬৩ গ্রাম
আরও বেড়েছে ডিমের দাম, সবজির দামও ঊর্ধ্বমুখী
ময়মনসিংহে মোবাইল বিস্ফোরণে চিকিৎসকের মৃত্যু