October 7, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, November 22nd, 2023, 7:31 pm

ভাঙা রাস্তায় ভয়ে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের চলাচল

জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সাগরনাল ইউনিয়নে অবস্থিত কাশিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি জুড়ী নদীর তীরবর্তী এলাকায় পড়েছে। নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ মাড়িয়ে ওই প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা। বিদ্যালয়ের সামনে রাস্তার একাংশ ভাঙনে ক্রমশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি ওই স্থানে বড় ভাঙন দেখা দিলে আতংকিত হয়ে পড়েন বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা। এতে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অনেকটা কমে গেছে। এ পরিস্থিতিতে ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। এ দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কাশিনগর এলাকায় কয়েকটি ভাঙনকবলিত স্থানে তীর সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু, নির্ধারিত সময়সীমা অতিবাহিত হয়ে গেলেও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এখনো কাজ শুরু করতে পারেনি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কাশিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়েছে ১৯৬২ সালে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী সংখ্যা ৭৫ জন। বিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে জুড়ী নদীটি প্রবাহিত। শুষ্ক মৌসুমের কারণে নদীতে পানি কম। বিদ্যালয়ের ঠিক সামনে নদীর বাঁধের প্রায় ৭০ ফুট জায়গা ভেঙে গেছে। ভাঙনকবলিত স্থানে দুটি বাঁশঝাড় কিছু মাটি ধরে রেখেছে। শিক্ষার্থীসহ এলাকার লোকজন ঝুঁকি নিয়ে বাঁশঝাড়ের পাশ দিয়ে চলাচল করছেন। কয়েক জন শিক্ষক সেখানে দাঁড়িয়ে খুদে শিক্ষার্থীদের হাত ধরে স্থানটি পার করে দিচ্ছেন। ভাঙনকবলিত স্থানের আশপাশে বালুভর্তি বেশ কিছু জিও ব্যাগ রাখা।

কাশিনগর গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য পরিদর্শক প্রভাত চন্দ্র নাথ বললেন, ‘বর্ষায় উজানের পাহাড়ি ঢল জুড়ী নদী দিয়ে নামে। তখন প্রবল স্রোতেও থাকে। এই স্থানে বিগত কয়েক বছর ধরে একটু একটু করে ভাঙছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উদ্যোগে কিছু কাজ করা হয়েছিল। কিন্তু, তা পুরো টেকসই হয়নি। এরই মধ্যে ১০-১৫ দিন আগে ভাঙনে বাঁধের বড় একটি অংশ ধসে পড়ে যায়। এখন স্কুলের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে।’

প্রভাত চন্দ্র নাথ আরো বলেন, ভাঙনকবলিত স্থানে পাউবোর উদ্যোগে কাজ করানোর কথা। কিন্তু এ কাজে অনেক বিলম্ব হচ্ছে। কাজটি দ্রুত শুরু করা গেলে এমন পরিস্থিতি হতো না।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বাতী রানী দেবনাথ বলেন, বাঁধের রাস্তাটিই বিদ্যালয়ে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। সাম্প্রতিক ভাঙনের পর থেকে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বেশ কমে গেছে। অভিভাবকেরা ভয়ে সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠান না। সামনে বিভিন্ন শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা। শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতে ফলাফলে প্রভাব পড়তে পারে।

পাউবোর সূত্রে জানা গেছে, জুড়ী নদীর কাশিনগর এলাকায় ভাঙনকবলিত ১১০ মিটার জায়গায় তীর সংরক্ষণের কাজ গত বছরের (২০২২) জুন মাসে শুরুর কথা ছিল। প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে ‘হাসান সিটি’ নামের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এ কাজ পায়। এ বছরের (২০২৩) জুন মাসে কাজ সম্পন্নের কথা ছিল। কিন্তু, তা না হওয়ায় আগামী বছরের (২০২৪) ২৪ জুন পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হয়।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি সাজ্জাদ হোসেন জানান, বালু ও ব্লক তৈরির স্থান সংকটের কারণে কাজে বিলম্ব হচ্ছে। তবে, বর্ধিত সময়সীমার মধ্যেই তাঁরা কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।

জুড়ী এলাকায় দায়িত্বে থাকা পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন জানান, তীর সংরক্ষণের কাজের জন্য প্রায় তিন হাজার বালুভর্তি জিও ব্যাগ লাগে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিও ব্যাগে বালুর পরিমাণ কম দিয়েছিল। তাই, সেগুলোর ওজন ঠিক করতে বলা হয়েছে। কাজ দ্রুত শুরু করতে তাদের বার বার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে।