শরিফ ওসমান হাদির হত্যার প্রতিবাদে খুলনায় ছাত্রশিবির আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, “ভারতীয় আধিপত্যবাদ এবং কালচালার ফ্যাসিজমের বিরোধিতার কারণে শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যা করা হয়েছে। তাই, বাংলাদেশের সচেতন ছাত্র-জনতা জীবন দিয়ে হলেও ভারতের আগ্রাসন রুখে দেবে। ভারতীয় আগ্রাসনমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের মাধ্যমে ওসমান হাদির স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হবে।”
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র, বিপ্লবী জুলাই যোদ্ধা শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, খুলনা মহানগর শাখা।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকাল ৪টায় নগরীর বায়তুন নূর মসজিদ চত্বর থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শিববাড়ি মোড়ে এ কর্মসূচি শেষ হয়। মিছিলের পূর্বে বায়তুন নূর জামে মসজিদের উত্তর গেটে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
মহানগর ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি রাকিব হাসানের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক মহানগর সভাপতি ও মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি আজিজুল ইসলাম ফারাজী।
বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আজিজুল ইসলাম ফারাজী বলেন, আমরা ইতিহাসের পাতায় দেখেছি, ফ্যাসিবাদীরা ও জুলুমবাজরা বিপ্লবীদের গুপ্তভাবে হত্যা করে। যারা ফ্যাসিবাদ, জুলুম এবং সাংস্কৃতিক ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, তাদের হত্যার জন্য বারবার নীলনকশা করা হয়েছে। ওসমান হাদিকেও সেভাবেই হত্যা করা হয়েছে। জুলাই আন্দোলনের পর অনেক জুলাই যোদ্ধা নৈতিকতা বিসর্জন দিলেও আমাদের নেতা হাদি তার নৈতিকতার সর্বোচ্চ অবস্থান ধরে রেখেছিলেন।’
সভাপতির বক্তব্যে মহানগর সেক্রেটারি রাকিব হাসান বলেন, জুলাই আন্দোলনে অগ্রভাগে থেকে যারা কাজ করেছে, তাদের মধ্যে শরিফ ওসমান হাদি অন্যতম। মধ্যযুগীয় কায়দায় তার মাথায় গুলি করে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এই ক্ষতি হয়তো বাংলাদেশ আর কখনো পূরণ করতে পারবে না। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে যারা কাজ করবে, তাদের পেছনে অনুপ্রেরণাদায়ী ভূমিকা পালন করবেন ওসমান হাদী। তার জনপ্রিয়তা যখন বুদ্ধিজীবী মহল থেকে শুরু করে গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে পড়ে, তখন একটি পক্ষ তা মেনে নিতে পারেনি।’
সমাবেশ থেকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরে শরিফ ওসমান হাদিকে কবরস্থ করা, দ্রুত সময়ের মধ্যে খুনীদের বিচার সম্পন্ন করা, জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তা দেওয়াসহ বিভিন্ন দাবি পেশ করেন। সেই সাথে সমাবেশ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিও করা হয়।
এ সময় ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা ‘আমরা সবাই হাদি হবো, গুলির মুখে কথা কবো’, ‘সাঈদী আবরার হাদি, শেষ হয়নি আজাদী’, ‘ভারতের আগ্রাসন, রুখে দাও জনগণ’, ‘আওয়ামী লীগের দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘লাল জুলাইয়ের হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার’–সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
মহানগর ছাত্রশিবিরের দপ্তর সম্পাদক ইসরাফিল হোসেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহানগর সাহিত্য সম্পাদক আহমেদ সালেহীন, প্রচার সম্পাদক এস এম বেলাল হোসেন, এইচআরডি সম্পাদক কামরুল হাসান, প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুর রশিদ, ছাত্র অধিকার সম্পাদক ইমরানুল হক, পাঠাগার সম্পাদক সেলিম হোসেন, ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক গোলাম মুয়িজ্জু, মাদরাসা সম্পাদক হাফেজ মুজাহিদুল হক, বিজ্ঞান সম্পাদক জে আই সাবিত, স্কুল সম্পাদক আদনান মল্লিক যুবরাজ, গবেষণা সম্পাদক ফারহান তূর্য, ক্রীড়া সম্পাদক সুলাইমান আবিদ, সমাজসেবা সম্পাদক হাফেজ নাঈম হোসাইন প্রমুখ।
বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে মহানগর ছাত্রশিবিরের সর্বস্তরের জনশক্তিসহ সাধারণ ছাত্র-জনতা অংশগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়। গুলিটি তার মাথায় লাগে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। ১৮ ডিসেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাহাদাতবরণ করেন এই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অগ্রসেনানী।

আরও পড়ুন
হোমনায় তিতাস নদীর ভাঙনে কৃষি জমির ব্যাপক ক্ষতি, হুমকির মুখে বসতবাড়ি!
হিমেল হাওয়ায় কাঁপছে রাজশাহী বাড়ছে রোগ সাথে ভোগান্তি
বালু উত্তোলনে হুমকির মুখে ধলাই নদীর বাঁধ ও ব্রিজ