December 27, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, October 30th, 2024, 5:35 pm

ভারতে এক দিনে একটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ৬৬,৯২,৫৩৫%, কেন এই নজিরবিহীন বৃদ্ধি

অনলাইন ডেস্ক

এক দিনেই একটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ৬৬,৯২,৫৩৫ শতাংশ বা প্রায় ৬৭ লাখ শতাংশ। এ কাণ্ড ঘটেছে ভারতের মুম্বাইয়ে। সেখানকার শেয়ারবাজারে ছোট এক কোম্পানি এলসিড ইনভেস্টমেন্টসের শেয়ারের দাম এক দিনের লেনদেনে এতটাই বেড়েছে যে সবার চোখ কপালে উঠেছে। এটিই এখন ভারতের সবচেয়ে দামি শেয়ার।

চাঙা বাজারে শেয়ারের দাম বাড়া স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে তার একটা সীমা থাকে। এলসিড ইনভেস্টমেন্টসের শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধিকে বলা যায়, কল্পনাকেও হার মানিয়েছে। কোনো শেয়ারের দাম এক দিনে ৬৭ লাখ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি অনেকটা অচিন্তনীয়। ফলে তরুণ থেকে বয়স্ক বিনিয়োগকারীরা রীতিমতো ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন।

ইকোনমিক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, স্বল্প পরিচিত এলসিড ইনভেস্টমেন্টসের শেয়ার ২০২৪ সালে মাত্র একবারই কেনাবেচা হয়েছিল। মুম্বাইয়ের স্টক এক্সচেঞ্জে গত ২১ জুন কোম্পানিটির মাত্র ৫০০ শেয়ারের হাতবদল ঘটে। তখন প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৩ দশমিক ৫৩ রুপি।

গতকাল মঙ্গলবার সেই শেয়ারই বিক্রি হয়েছে প্রতিটি ২ লাখ ৩৬ হাজার ২৫০ রুপিতে। খুব সামান্যসংখ্যক শেয়ার অবশ্য হাতবদল হয়েছে—মাত্র ২৪১টি। সেদিন হঠাৎ করে শেয়ারের দামে যে বিশাল উল্লম্ফন ঘটেছে, তা একটি নজিরবিহীন ঘটনা। কারণ, এক দিনে এলসিডের শেয়ারের দাম বেড়েছে ৬৬,৯২,৫৩৫ শতাংশ।

প্রতিটি শেয়ারের দাম ২ লাখ ৩৬ হাজার রুপিতে উঠে যাওয়ার কারণে এলসিড ইনভেস্টমেন্টের শেয়ার এমনকি এমআরএফকেও ছাড়িয়ে গেছে। এমআরএফের প্রতিটি শেয়ারের দাম ১ লাখ ২০ হাজার রুপি। প্রশ্ন হলো, একটি শেয়ারের দাম এক দিনে ৬৭ লাখ শতাংশ কীভাবে বাড়ল, যখন শেয়ারবাজারে মূল্য খুব বেশি বৃদ্ধির ঠেকাতে একটি ঊর্ধ্বসীমা ঠিক করা আছে।

এলসিড ইনভেস্টমেন্টসের মালিক কে
মুম্বাইভিত্তিক এলসিড একটি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক কোম্পানি। এশিয়ান পেইন্টসের মালিকদের ৭৫ শতাংশ হিস্যা রয়েছে এই কোম্পানিতে। এ ছাড়া হাইড্রা ট্রেডিং ও থ্রিএ ক্যাপিটাল সার্ভিসেস যথাক্রমে ৯ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ ও ৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ শেয়ারের মালিক।

এলসিড আবার এশিয়ান পেইন্টসের ১ দশমিক ২৮ শতাংশ শেয়ারের মালিক, যার মূল্যমান ৩ হাজার ৬০০ কোটি রুপি। ব্যাংকবহির্ভূত এই আর্থিক কোম্পানির মোট বাজার মূলধন ৪ হাজার ৭২৫ কোটি রুপি। অর্থাৎ কোম্পানিটির বাজার মূলধনের ৮০ শতাংশই এশিয়ান পেইন্টসের দখলে। গত অর্থবছরে তাদের আয় ছিল ২৩৫ কোটি রুপি, যার বেশির ভাগ এসেছে লভ্যাংশ থেকে। আর মুনাফার পরিমাণ ছিল ১৭৬ কোটি রুপি।

শেয়ার দাম কেন ৩ রুপি ছিল
২০১১ সাল থেকেই এলসিডের শেয়ার দাম ছিল কমবেশি ৩ রুপি করে। তবে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি বুক ভ্যালু ছিল ৫ লাখ ৮৫ হাজার ২২৫ রুপি। এই বিশাল পার্থক্যের কারণে চলতি শেয়ারধারীরা কোনোভাবেই কম দামে শেয়ার বিক্রি করতে চাইতেন না। এ কারণে শেয়ারবাজারে এলসিড ইনভেস্টমেন্টসের শেয়ার একেবারেই বিক্রি হতো না বলা যায়।

আর যেহেতু শেয়ারধারীরা এই কোম্পানির শেয়ার হাতছাড়া করতে অনাগ্রহী ছিলেন, তাই এক দশকের বেশি সময় ধরে এর দাম এক অঙ্কের ঘরে পড়ে ছিল।

তাহলে এক দিনে কেন এত দাম বাড়ল
এলসিড শেয়ারধারীদের জীবনে পরিবর্তন ঘটে ভারতের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবির এক সিদ্ধান্তের কারণে। সেবি নির্দেশ দিয়েছিল, স্টক এক্সচেঞ্জগুলোকে একটি বিশেষ লেনদেন সেশন পরিচালনা করতে হবে, যার মাধ্যমে শেয়ারের প্রকৃত মূল্য খুঁজে বের করা হবে। এর ফলে এলসিডের মতো আরও যেসব হোল্ডিং কোম্পানি রয়েছে, তাদের মূল্য জানা যাবে।

এর অংশ হিসেবে বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ (বিএসই) ও ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জে (এনএসই) চলতি সপ্তাহে একটি বিশেষ অকশন সেশন পরিচালনা করে। হোল্ডিং কোম্পানিগুলোর জন্য এ ক্ষেত্রে দামের কোনো সীমা আরোপ করা ছিল না। উদ্দেশ্য ছিল, বাজারে তারল্য বাড়ানো এবং কোম্পানিগুলোর সঠিক মূল্য খুঁজে বের করা।

এলসিড ছিল এমন এক কোম্পানি, যার শেয়ার খুবই কম বিক্রি হতো এবং বিক্রি হলেও তা হতো বুক ভ্যালুর চেয়ে অনেক কম দামে। ফলে প্রকৃত দাম খুঁজে পাওয়ার বিশেষ লেনদেনে এটির শেয়ারের দাম ৬৭ লাখ শতাংশ বেড়ে যায়। এই বৃদ্ধি ছিল ভারতের শেয়ারবাজারে এক দিনে কোনো শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির একটি রেকর্ড।

গতকাল সামান্যসংখ্যক শেয়ার হাতবদলের পর আজ বুধবার সকালে এলসিডের শেয়ার কেনাবেচা হয়নি বললেই চলে।