August 23, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, August 22nd, 2025, 7:29 pm

ভারত ও চীন থেকে তৈরি পোশাকের অর্ডার আসছে বাংলাদেশে

 

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক কাঠামোর কারণে বাংলাদেশে বাড়ছে তৈরি পোশাকের অর্ডার। ভারতে শুল্কহার ৫০ ভাগ। বাংলাদেশে শতকরা ২০ ভাগ। ফলে ভারত ও চীন থেকে ক্রেতারা অর্ডার স্থানান্তর করছেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন নিক্কি এশিয়া।

‘বাংলাদেশ গার্মেন্ট মেকার্স গেইন অর্ডার্স অন নিউ ইউএস ট্যারিফ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আঞ্চলিক সাপ্লাই চেইন পুনর্বিন্যাসের মধ্য দিয়ে অর্ডার বেড়েছে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ পর্যন্ত। বাংলাদেশের জন্য মার্কিন শুল্কহার এখন ২০ শতাংশ, যা ভিয়েতনামের সমান এবং কম্বোডিয়ার থেকে মাত্র এক শতাংশ বেশি।

অন্যদিকে বিশ্বব্যাপী উৎপাদনকেন্দ্র চীনের ক্ষেত্রে শুল্কহার ৩০ শতাংশ (যা বেড়ে ৫০ শতাংশেরও বেশি হতে পারে) এবং ভারতের ক্ষেত্রে ২৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হচ্ছে ৫০ শতাংশ।

বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় গার্মেন্ট প্রস্তুতকারক হা-মীম গ্রুপ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প প্রাথমিকভাবে প্রস্তাবিত ৩৭ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশ করার পর তাদের কাজের অর্ডার প্রায় ১০ শতাংশ বেড়েছে। বার্ষিক ৯৩০ মিলিয়ন ডলারের টার্নওভার বিশিষ্ট কোম্পানিটি যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি থেকে আয় করে ৯২ শতাংশ।

হা-মীমের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর দেলোয়ার হোসেন বলেন, ট্রাম্পের শুল্ক কমানো না হলে আমাদের বড় বিনিয়োগ বিপদের মুখে পড়তে পারত। তিনি জানান, অর্ডার মূলত চীন ও ভারত থেকে বাংলাদেশে স্থানান্তরিত হচ্ছে। কিছু মার্কিন ক্রেতা বা তাদের প্রতিনিধিরা এখন ঢাকায় এসে আলোচনা করছেন আমরা কি অতিরিক্ত ১০ থেকে ২০ লাখ পিসের অর্ডার নিতে পারব কিনা।

স্প্যারো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম জানান, ভারতের পাশাপাশি ভিয়েতনাম থেকেও অর্ডার বাংলাদেশে স্থানান্তরের আলোচনা চলছে।

তার কোম্পানি বসন্ত মৌসুমের জন্য প্রায় ৫ শতাংশ অতিরিক্ত অর্ডার পেয়েছে। তিনি আশা করছেন আগামী গ্রীষ্মে অর্ডার ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। তিনি আরও বলেন, উচ্চমূল্যের পণ্যের অতিরিক্ত অর্ডার এসেছে, যেগুলো মূলত চীন থেকে স্থানান্তরিত হয়েছে। তবে ভিয়েতনাম সীমান্ত ভাগাভাগি এবং বৃহৎ উৎপাদনক্ষমতার কারণে এসব অর্ডারের বড় অংশ পাচ্ছে।

জায়ান্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক হাসান বলেন, চীনের বাজার শুল্ক বাড়ার কারণে তাদের শেয়ার কমছে। তার মতে, যদি ভারত বা ভিয়েতনাম বাংলাদেশের তুলনায় কম শুল্ক সুবিধা পেত, অথবা কম্বোডিয়ার মতো বিশেষ সুবিধা থাকত, তাহলে অর্ডার বাংলাদেশ থেকে সরে যেতে পারত। বরং গত কয়েক মাস স্থগিত থাকা অর্ডারগুলো এখন বাংলাদেশে আসছে।

তিনি আরও জানান, ৮০০ ডলার পর্যন্ত পণ্যের চালান যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্তভাবে প্রবেশের সুযোগ দেয়া ‘ডি মিনিমিস’ নিয়ম বিলুপ্ত হওয়ায় বাংলাদেশও উপকৃত হবে। আগে চীন এ সুবিধা পেত, যা বাংলাদেশ নিতে পারেনি অভ্যন্তরীণ কাগজপত্র জটিলতার কারণে।

এশিয়ান অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. এ. সালাম বলেন, মার্কিন শুল্ক পুনর্গঠন ক্রেতাদের মধ্যে ইতিবাচক আবহ তৈরি করেছে। তিনি আশা করেন আগামী গ্রীষ্ম ও শরৎ মৌসুমে এর সুফল স্পষ্ট হবে।

ঢাকা-ভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন, বাংলাদেশ শুল্ক সুবিধার কারণে স্বল্পমেয়াদে অতিরিক্ত অর্ডারের সুবিধা ভোগ করবে। তার মতে, কৌশলগত কারণে যুক্তরাষ্ট্র ভারত ও চীনের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক বহাল রাখবে, যা বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক। তিনি বলেন, বাংলাদেশে কাজের অর্ডার আরও বাড়তে পারে, এর কিছু ভারতের দিক থেকেও আসবে।

এমন পরিস্থিতিতে চীনা বিনিয়োগকারীরাও বাংলাদেশে নতুন বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন। চীনা কাইসি গ্রুপ ইতিমধ্যে ১১ আগস্ট বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) সঙ্গে ৪০ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ চুক্তি করেছে, যেখানে অন্তর্বাস ও আনুষঙ্গিক পণ্য উৎপাদন কারখানা গড়ে তোলা হবে।

এই অনুকূল অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ সরকার ১২ আগস্ট ঘোষণা করেছে, ২০২৬ অর্থবছরের মধ্যে পণ্য রপ্তানি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১৬.৫ শতাংশ। এছাড়া বাণিজ্য সচিব শেখ বশির উদ্দিন জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কহার আরও কমিয়ে ২০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশে নামানোর উদ্যোগ চলছে।

এনএনবাংলা/