October 29, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, October 29th, 2025, 7:39 pm

ভূমিদস্যুদের দখলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি, ‎বুড়ি তিস্তায় সেচ ও রিজার্ভার উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ

 

মোঃ আতোয়ার রহমান, নীলফামারী প্রতিনিধি

নীলফামারীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অধিগ্রহণকৃত বিপুল পরিমাণ জমি দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় ভূমিদস্যুদের দখলে রয়েছে। এর ফলে বুড়ি তিস্তা নদীর ওপর সেচ ও রিজার্ভার উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ হয়ে পড়েছে। এতে সরকারের কোটি টাকার উন্নয়ন উদ্যোগ বাস্তবায়ন ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

‎পাউবো সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৬-৬৭ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠিত নীলফামারী পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় বুড়ি তিস্তা এলাকার বিভিন্ন স্থানে মোট ১২১৭.৬১ একর (৪৯২.৫০ হেক্টর) জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এসব জমি সরকারি (বিএস) রেকর্ডেও পাউবোর নামে রয়েছে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওই জমির বড় অংশ স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দখলে চলে যায়।

‎পাউবোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি মোট ৬৬৭ একর জমি দখলমুক্তের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু দখলদারদের বাধার কারণে উচ্ছেদ অভিযান সম্পূর্ণ করা সম্ভব হয়নি। বরং ওই জমিতে বর্তমানে ঘরবাড়ি, দোকানপাট নির্মাণ এবং কৃষিকাজ চলছে। একাধিকবার উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েও স্থায়ী সমাধান পাওয়া যায়নি।

পাউবোর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘দখলদাররা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রশাসনের সহায়তা ছাড়া জমি উদ্ধার সম্ভব নয়। এর ফলে প্রকল্পের কাজ বিলম্বিত হচ্ছে এবং সরকারি অর্থের অপচয় ঘটছে।’

‎অন্যদিকে দখলদারদের সংগঠন ‘বুড়ি তিস্তা বাঁচাও কৃষক সমিতি’র সভাপতি বাদল মিয়া স্বপন জানান, ‘আমাদের প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ পরিবার ৩ থেকে ১০ দিঘা করে জমিতে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করি। জলাশয়ের কাজ শুরু হলে আমরা জীবিকা হারাব, পথে বসে যাব।’

স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, ‘সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নদী ও খালের উন্নয়ন প্রকল্প নিচ্ছে, কিন্তু ভূমিদস্যুদের বাধার কারণে কাজ এগোচ্ছে না। প্রশাসন চাইলে একদিনেই জমি উদ্ধার সম্ভব।’

‎নীলফামারী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আতিকুর রহমান বলেন, “বুড়ি তিস্তা জলাশয় পুনঃখনন, পুনর্বাসন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় ২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ‘তুসুকা রিসোর্স লিমিটেড’কে মাছ চাষের জন্য লিজ দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে ২০২২ সালে টেন্ডারের মাধ্যমে প্রকল্পটি পাঁচটি প্যাকেজে বিভক্ত করে তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ওয়ার্ক অর্ডার প্রদান করা হয়। কিন্তু কাজ শুরু করার কয়েক দিনের মধ্যেই ভূমিদস্যুদের নেতৃত্বে সংগঠিত হামলায় কয়েকজন শ্রমিক আহত হন এবং স্কেবেটরসহ কর্মীদের ডেরায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।”

তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার পর পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হয়েছে, যা বর্তমানে আদালতে চলমান। অধিগৃহীত জমি দখলমুক্ত করতে বোর্ডের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

‎এ প্রসঙ্গে ‎নীলফামারীর পুলিশ সুপার এএফএম তারিক হোসেন খান বলেন, ‘বুড়ি তিস্তা এলাকার কিছু ব্যক্তি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)- এর সরকারি সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন। জেলা প্রশাসনের অনুরোধ পেলে আমরা প্রয়োজনীয় পুলিশি ব্যবস্থা নিয়ে উচ্ছেদ অভিযান চালাবো।’

এএফএম তারিক হোসেন খান আরও বলেন, ‘এসব দখলের অভিযোগের বিরুদ্ধে আইনগত উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে এবং অনাহূত দখলদারদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি উদ্ধার ও উন্নয়ন প্রকল্প সচল রাখতে প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।’

এনএনবাংলা/