নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশে আমদানি করা ভোগ্যপণ্য গুদামজাতের কোনো নীতিমালা নেই। আর ওই সুযোগে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করছে অসাধু সিন্ডিকেট। মজুদদারীরই বাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ। অতিমুনাফা লোভী ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন পণ্য মজুত রেখে বাজারে চাহিদার কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। অথচ প্রশাসনিকভাবেও গুদাম মনিটরিংয়ের কোনো উদ্যোগ নেই। বাজার সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে গুদামে পণ্য মজুতের সুনির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়ে নীতিমালা থাকা প্রয়োজন। ফলে বাজারে পণ্যের দাম ইচ্ছামতো বাড়ানোর সুযোগ থাকবে না। বর্তমানে বেপরোয়া মজুতদারির কারণে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। ডিও একাধিকবার হাতবদল হয় আর গুদামের মাল মাসের পর মাস পড়ে থাকে। আর পণ্য মজুতদারিই বাজারে মূল্যবৃদ্ধির ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি করছে। গুদামে প্রচুর পণ্য মজুত থাকায় সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। তারপরও পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। সেক্ষেত্রে বিক্রেতাদের অজুহাত- আন্তর্জাতিক বাজারে দাম ঊর্ধ্বমুখী। অথচ কম দামে আমদানি করা পণ্যে দেশের বিপুলসংখ্যক গুদাম ভর্তি। সরকারিভাবে মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও বাজার মনিটরিং সংস্থাগুলো পণ্যের দোকানে ও আড়তে অভিযান চালালেও পণ্য মজুতের গুদামে অভিযান চালানো হচ্ছে না।
সূত্র জানায়, আমদানিকারকরা চাল, গম, ছোলা, ডালজাতীয় পণ্য, চিনি, ভোজ্য তেল দীর্ঘদিন যাবৎ গুদামে মজুত করে রাখছে। কিন্তু অনেক গুদামই মানসম্মত না হওয়ায় পণ্য অল্প দিনের মধ্যে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তারপরও বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে নিম্নমানের পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। বন্দর নগরী চট্টগ্রামে বাণিজ্যিকভাবে প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ গুদাম রয়েছে। পণ্য মজুতের গুদামগুলো নগরীর নাসিরাবাদ, ভাটিয়ারী, অলংকার মোড়, হালিশহর, মাঝিরঘাট এলাকায় রয়েছে। আর অধিকাংশ গুদামই পণ্য মজুতের জন্য মানসম্মত নয়। গুদামে পাকা ফ্লোর উঠে গেছে। ফলে মাটির ওপরে পণ্য রাখা হচ্ছে। তাতে অল্প সময়ের মধ্যে পণ্য নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া গুদামগুলোতে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র নেই। অনেক গুদামে পোকা মাকড়ের আক্রমণ থেকে পণ্যকে রক্ষার জন্য কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না। তাছাড়া গুদাম নিচে হওয়ায় বন্যা ও জলাবদ্ধতায় পানি ঢুকে পণ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
সূত্র আরো জানায়, ডিও ব্যবসার মাধ্যমে চিনি ও সয়াবিন তেলের বাজার অস্থিরতা তৈরি করা হচ্ছে। ডিওর মেয়াদ থাকে ১৫ দিনের মধ্যে গুদাম থেকে পণ্য ডেলিভারি নিতে হবে। কিন্তু ওই পণ্য ছয়-সাত মাসে ডেলিভারি নেয়া হচ্ছে না। ডিও হাতবদল হয়ে গুদামে মাসের পর মাস মাল পড়ে থাকে। মূলত অতি মজুতদারির কারণেই চালসহ ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। শিল্প গ্রুপগুলোর কোনো মিল নেই। তারপরও বেপরোয়াভাবে তারা ধান-চাল মজুত করছে। সেক্ষেত্রে শুধু নীতিমালা করলে হবে না, তার যথাযথ প্রয়োগ থাকলে পণ্যের বাজার ক্রেতাদের সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। গতবার আমদানিকৃত চাল কত দিনের মধ্যে বিক্রি করতে হবে সেজন্য সময় বেঁধে দিয়েছিল সরকার। ওই সময়ের মধ্যে অনেক আমদানিকারক চাল বিক্রি করলেও অনেকেই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চাল বাজারে বিক্রি করেনি।
এদিকে এ প্রসঙ্গে আমদানিকারকরা জানান, আইন সবার জন্য সমানভাবে প্রয়োগ হচ্ছে না। আমদানিকারকরা সরকারের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে এলসি করে চাল এনে বিক্রি করে ফেলেছে। কিন্তু অনেক আমদানিকারক ৬ মাসেও চাল বিক্রি করেনি। শুধু চাল নয়, সব ধরনের আমদানি করা ভোগ্য পণ্যের সময় নির্ধারণ করে দিয়ে মজুতদারির নীতিমালা করা প্রয়োজন।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম গুদাম মালিক সমিতির সভাপতি শফিক আহমেদ জানান, গুদামে কয় মাস পণ্য রাখা যাবে সে বিষয়ে ওয়ান ইলেভেনের সময় গুদামে পণ্য মজুতের একটি সার্কুলার জারি করা হয়েছিল। তবে সেটি এখন মানা হচ্ছে না। ডাল জাতীয় পণ্য গুদামে সর্বোচ্চ ৬ মাসের বেশি রাখা যায় না। সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় বাজার অস্থির করার সুযোগ নিচ্ছে কতিপয় ব্যবসায়ী। তাছাড়া অধিকাংশ গুদামই নিম্নমানের। ফলে কম সময়ের মধ্যে পণ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন
শেখ হাসিনাসহ ৭৫ জনের পাসপোর্ট বাতিল
চালের বাজার সহনীয় রাখতে প্রয়োজনে বিশেষ ওএমএস: অর্থ উপদেষ্টা
মেট্রোরেল সেবা ভ্যাটমুক্ত ঘোষণা,কমবে ভাড়া