September 15, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, September 15th, 2025, 5:13 pm

ভোটের মাঠে চতুর্মুখি হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখার অপেক্ষায় মুরাদনগরবাসী

মুরাদনগর(কুমিল্লা) প্রতিনিধিঃ

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে নির্বাচনি ডামাডোল। ভোটের মাঠে চতুর্মুখি হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখার অপেক্ষায় মুরাদনগরবাসী। নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা-৩, মুরাদনগর আসনের ৫ বার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার অনুসারীরা হামলা মামলায় মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। প্রতিদিনই এই দুই নেতার কর্মী-সমর্থকরা সভা সমাবেশ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরস্পরকে কথায় কথায় আক্রমণ করছে। সংসদ নির্বাচনে মুরাদনগর উপজেলা আসনে নানা সমীকরণ থেকে এমন উত্তেজনা সৃষ্টি হচ্ছে। কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী। অপরদিকে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া গ্রামের বাড়ী মুরাদনগর উপজেলা আন্দিকোট ইউনিয়ন আকুবপুর গ্রামের ভূঁইয়া বাড়ী। তিনি এ আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই দুই নেতার অনুসারীদের দ্বন্দ্বের ফাঁকে নীরবে উপজেলার প্রতিটি গ্রামে গঞ্জের ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী এবং সাবেক উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ হাকিম সোহেলসহ দলীয় নেতাকর্মীরা। ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ হাত পাখা মার্কা মনোনীত প্রার্থী আহমেদ আবদুল কাইয়ুমসহ দলীয় নেতাকর্মীরা সভা, পথ সভা, জনসংযোগ ও লিফলেট বিতারণ করে ভোট চাইছেন।

নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা-৩, মুরাদনগর উপজেলা আসনে ২২ টি ইউনিয়ন ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৯৪ হাজার ৮ শ’ ৪৪ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ২লাখ ৫৫ হাজার ১শ’৪১ জন, মহিলা ভোটার ২লাখ ৩৯ হাজার ৬শ’ ৯৯ জন, হিজড়া ৪ জন। ভোটার কেন্দ্র সংখ্যা ১৫৭টি, ভোট কক্ষের সংখ্যা ৯৩১টি।

জানা গেছে, কুমিল্লা-৩, মুরাদনগর উপজেলা আসনটি বিএনপির ভোটব্যাংক। বিএনপি দিকে তাকিয়ে আছেন সাধারণ ভোটাররা। মুরাদনগর উপজেলায় বিএনপি বিপুল নারী- পুরুষের জনসমর্থন রয়েছে। এখানে জামায়াতের জনসমর্থন ও সাংগঠনিক অবকাঠামো খুবই সুদৃঢ রয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি’র) সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করছে। রয়েছে ভোটব্যাংক।

সাধারণ মানুষ বলছেন, গণতন্ত্র ফিরে আসুক, দূর্নীতি মুক্ত হউক, সন্ত্রাস মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে উঠুক। আইনের শাসন গড়ে উঠুক।

স্থানীয়রা বলছেন, এ আসন থেকে যিনি ধানের শীষ প্রতীক পাবেন, তার জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে বেশি। ত্রয়োদশ নির্বাচনে কায়কোবাদ ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পাবেন এবং নির্বাচিত হবেন বলে আশাবাদী তার অনুসারীরা।

বহু প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠাতা, শিক্ষানুরাগী ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ীক গোলাম কিবরিয়া সরকার বলেন, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া মুরাদনগর উপজেলাকে উন্নয়ন উন্নত শিখরে পৌঁছাতে চেয়েছেন, তিনি মুরাদনগর উপজেলা কয়েক শত রাস্তা নির্মাণ ও পূর্ণ নির্মাণ করেছেন, পাশাপাশি স্কুল কলেজ মাদ্রাসা ও মন্দিরের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ করে যাচ্ছেন।

আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া মুরাদনগর উপজেলা আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন বলে তার কর্মী সমর্থকরা দাবি করলেও বিষয়টি নিয়ে এখনো মিডিয়ার সামনে অথবা জনসভায় মুখ খোলেননি স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা। এই দুই নেতার অনুসারীরা প্রকাশ্যেই দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন হরহামেশাই। দুই নেতার অনুসারীদের মাঝে হামলা-মামলা সংঘর্ষের ঘটনা ও ঘটেছে সম্প্রতি। এতে জনসাধারণ আতংকিত উৎকন্ঠায় রয়েছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন সভা- সমাবেশ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিয়ে পরিস্থিতি সংঘাতের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ব্যাপক সংঘাতের আশঙ্কা দৃশ্যমান হচ্ছে। তবে কি এ আসন থেকে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া নির্বাচনে লড়বেন? নাকি তিনি মুরাদনগর উপজেলা রাস্তা, ব্রীজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ- মাদ্রাসায়, মঠ, মন্দিরের উন্নয়ন কাজ করেই সীমাবদ্ধতায় থাকবেন? মুরাদনগরে উপজেলা এমন নানা আলোচনা ও প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। এসব দ্বন্দ্ব এড়িয়ে জনগণের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী ইউসুফ হাকিম সোহেল। মিষ্টিভাষী এ তরুণ প্রার্থীকে নিয়ে অনেকেই ইতিবাচক মন্তব্য করছেন।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মুরাদনগর উপজেলার প্রধান সমন্বয়কারী মিনহাজুল হক বলেন, মুরাদনগরে কায়কোবাদের অনুসারীরা আমাদের সব ধরনের কর্মকান্ডে বাধা দেয়। আমাদের বিরুদ্ধে আজেবাজে মন্তব্য করে। নির্বাচনের পর কোথায় যাবেন বলে জনসভায় প্রকাশ্যে হুমকি ধমকি দিচ্ছেন। মুরাদনগর উপজেলা আসন থেকে এনসিপির প্রার্থী থাকবে। আমরা এ আসনে নির্বাচন করার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। প্রতিটি ইউনিয়নে আমাদের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির লোকজন ভোটারদের এনসিপিকে ভোট দেওয়া জন্য উদ্ভোদ্ব করছেন।

মুরাদনগর উপজেলা বিএনপি আহবায়ক মহিউদ্দিন অঞ্জন বলেন, এনসিপির সাথে আমাদের কোনো দ্বন্দ্ব নেই। তবে এনপিপির ওপর ভর করেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আমরা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কথা বলছি। মুরাদনগর উপজেলায় কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদের বিকল্প নেই। তিনি ৫ বারের সংসদ সদস্য। গত ৪০ বছর ধরে মুরাদনগরের মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, রাস্তা ঘাট, স্কুল কলেজ মাদ্রাসা, মন্দির অবগত আছেন। গরিব দুঃখী মানুষের সেবা করছেন। আগামী নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জুলাই অভ্যুত্থানের পর অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ভাবে মুরাদনগর উপজেলা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। কেন্দ্রীয় মহাসমাবেশসহ বেশ কিছু সভা- সমাবেশ করেছে দলটি। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে পিছিয়ে নেই জামায়াতের প্রার্থী।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মুরাদনগর উপজেলা শাখা আমীর আনম ইলইয়াস হোসাইন বলেন, দেশপ্রেম গণতন্ত্র স্বাধীনতার মূল্যবোধ বিক্রি করে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার দেশ চালিয়েছে। মানুষের অধিকার হরণ করেছে। এখন সময় এসেছে মানুষ জামায়াতে ইসলামীকে দেশ গড়ার সুযোগ হাতে তুলে দেবে।

জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ হাকিম সোহেল বলেন, জামায়াতে ইসলামী একটি আদর্শ নিয়ে চলে।আমরা ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষের কাছে যাচ্ছি। তাদের সাড়াও পাচ্ছি। আল্লাহ সহায় হলে হলে ইনশাআল্লাহ জামায়াত মানুষের সেবা করার সুযোগ পাবে। ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে অনেক রক্তের বিনিময়ে। পুনরায় যেন কোনো ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দিতে না পারে সেই লক্ষ্যে আমরা জনগণকে সচেতন করছি। আমি জনগণের সেবক হওয়ার চেষ্টা করছি। জনতাই আমাদের শক্তি। সেই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমৃত্যু মুরাদনগরবাসীর সেবা করে যেতে চাই। আল্লাহ চাইলে আমরা সেই সুযোগ পাবো। এমন একটা সমাজ চাই, যে সমাজে ন্যায় সমাজ। সমাজে সন্ত্রাস, দূর্নীতি থাকবে না। কারও হক আমাদের পকেটস্থ হবে না। পরকালে জবাবদিহি করতে হবে।

ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী মহাসচিব মনোনীত প্রার্থী মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম (এমএ) বলেন, আমার বাড়ী  মুরাদনগর উপজেলা আকুবপুর ইউনিয়নের কুড়েরপাড় গ্রামের মরহুম মো. ওয়াহেদ আলী মুন্সি ছেলে।  ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ হাত পাখা মার্কায় ভোট চেয়ে পথসভা ও গণসংযোগ করেন। আন্দোলন যুব আন্দোলন ছাত্র আন্দোলন আন্দোলনের নেতা কর্মীরা। বিভিন্ন হাট বাজারে দোকানদারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় ও হাতপাখার ভোট চেয়ে লিফলেট বিতরণ করেন।