May 4, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Saturday, May 3rd, 2025, 5:55 pm

মস্তিষ্ককে রিস্টার্ট দেওয়ার জাদুকরি ৭টি উপায়

অনলাইন ডেস্ক

ঘুম, চিন্তা, কাজের চাপ কিছু সময় মস্তিষ্কে জট পাকিয়ে ফেলে। মনে হয় যেন সবকিছু আটকে গেছে, কোনো নতুন ভাবনা মাথায় আসছে না, কাজ করতে ইচ্ছা করছে না। ঠিক তখনই দরকার পড়ে ‘রিস্টার্ট’ বাটনে হাত দেওয়ার। প্রযুক্তি যেমন রিস্টার্টে নতুন গতি পায়, তেমনি আমাদের মস্তিষ্কও ফিরে পেতে পারে তার প্রাঞ্জলতা।

এই লেখায় থাকছে সেই জাদুকরি কৌশলগুলো, যেগুলো অনুসরণ করলে ক্লান্ত, ধোঁয়াশাচ্ছন্ন মস্তিষ্ক ফিরে পেতে পারে তার স্বাভাবিক কাজের গতি। চলুন জেনে নেওয়া যাক কৌশলগুলো।

১. প্রাকৃতিক রিস্টার্ট বাটন ঘুম

ঘুম শুধু বিশ্রাম নয়, এটি হলো মস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় সফটওয়্যার আপডেট। হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমের সময় আমাদের মস্তিষ্ক দিনের জমানো স্মৃতিগুলো পরিপাটি করে সাজিয়ে রাখে এবং স্নায়ুকোষগুলো নতুন উদ্যমে কাজ করতে প্রস্তুত হয়।

দালাই লামার একটি উক্তি আছে, “ঘুমই হলো সবচেয়ে ভালো ধ্যান।”

তাই রাতে অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা আমাদের গভীর ঘুম দরকার। আর এভাবেই হতে পারে মস্তিষ্কের রিস্টার্ট।

২. সবুজে মন-মগজ ধুয়ে ফেলা

গবেষণা বলছে, প্রাকৃতিক পরিবেশে মাত্র ২০ মিনিট কাটালেই স্ট্রেস হরমোন বা কর্টিসলের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায় (ম্যাকমাস্টার ইউনিভার্সিটি, ২০১৯)। একটি পার্ক, গাছপালা, অথবা খোলা আকাশ – এসব যেন মস্তিষ্কের ‘ডিফ্র্যাগমেন্টেশন’ টুলস।

তাই প্রতি সপ্তাহে অন্তত একদিন প্রকৃতির কাছে আত্মসমর্পণ করাই যায়। হাঁটুন ঘাসের ওপর, শুনুন পাখির ডাক – এগুলো মস্তিষ্ককে নতুন করে শুরু করার নির্দেশনা দেয়।

৩. একদিন প্রযুক্তি থেকে সম্পুর্ণ দূরে থাকা

স্মার্টফোন, নোটিফিকেশন, সোশ্যাল মিডিয়া – সবই মস্তিষ্কে তথ্যের অতিবর্ষণ ঘটায়। আমেরিকান সাইকোলজিকাল অ্যাসোসিয়েশন এক জরিপে জানায়, ডিজিটাল মাধ্যমে নিজেকে অতিরিক্ত ব্যস্ত রাখলে কগনিটিভ ও এক্সিকিউটিভ মস্তিষ্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

মস্তিষ্ককে রিস্টার্ট দেওয়ার জাদুকরি উপায়

তাই দিনে অন্তত এক ঘণ্টা স্ক্রিনহীন সময় রাখুন। বই পড়ুন, হাঁটুন, চোখ বন্ধ করে ভাবুন কিছুই না – এই শূন্যতায়ই মস্তিষ্ককে নতুন করে কাজ করতে সাহায্য করে।

৪. গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস ও ধ্যান

মাত্র ৫-১০ মিনিটের গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস বা ধ্যান আপনার মস্তিষ্কের অ্যামিগডালাকে শান্ত করে, যা আপনার উদ্বেগ এবং আতঙ্ককে নিয়ন্ত্রণ করে। নিউরোসায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, নিয়মিত মেডিটেশনে বা ধ্যানে মস্তিষ্কের গ্রে ম্যাটারের ঘনত্ব বাড়ে, যেটি স্মৃতি ও শেখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

৫. লেখালেখি

ডায়েরিতে ভাবনা লেখা মানে মস্তিষ্কের বোঝা নামানো। মনোবিদরা বলেন, লিখলে মস্তিষ্কের ‘ওয়ার্কিং মেমোরি’ হালকা হয় এবং মন সংগঠিত হতে শেখে। দিনে অন্তত ১০ মিনিট লিখুন। আপনার ভয়, লক্ষ্য, স্বপ্ন, অথবা অন্তত আজকের দিনটা কেমন গেল। লিখে ফেলুন। এটিও মস্তিস্কের রিস্টার্টে দারুণ কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

৬. সৃজনশীল কাজ ও খেলাধুলা

সঙ্গীত, চিত্রাঙ্কন বা রান্না – যে কোনো সৃজনশীল কাজে ব্রেইনের বিভিন্ন অংশ সক্রিয় হয়। আবার ব্যাডমিন্টন বা ফুটবল খেলায় যে শারীরিক ঝাঁকুনি মেলে, তাতে এন্ডরফিন হরমোন নিঃসৃত হয়, যা ব্রেইনের ‘রিওয়ার্ড সেন্টার’কে আনন্দে জাগিয়ে তোলে। তাই নিয়মিত সৃজনশীল কাজ ও খেলাধুলা করুন।

৭. মানসিক ‘পাসওয়ার্ড’ বদলান

আমরা প্রায়ই বলি, “আমি পারি না”, “সম্ভব না”। কিন্তু এইসব শব্দ মস্তিষ্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ইতিবাচক কথাবার্তা, নতুন কিছু শেখার আগ্রহ ও কৃতজ্ঞতাবোধ – এসব ভাবনা আমাদের মস্তিষ্কেকে রিফ্রেশ করে।

শেষ কথা, মস্তিষ্ককে রিস্টার্ট দেওয়া মানে কোনো কিছু মুছে ফেলা নয়, বরং নিজেকে নতুনভাবে গুছিয়ে নেওয়া। আমাদের মনে রাখা দরকার, মানুষ কোনো যন্ত্র নয়, তাই রিস্টার্টও হতে হবে মানবিক, মননশীল আর সংবেদনশীল। কখনো ঘুমে, কখনো গানে, আবার কখনো নির্জনে বসে থেকে।