হিন্দুস্তান টাইমস:
অবশেষে অপেক্ষার পালা ঘুচেছে। বাংলাদেশ সময় গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টা ৫৭ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা উপকূল থেকে ৫০ মাইল দূরে সমুদ্রে অবতরণ করেছে নভোচারী সুনিতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোরকে বহনকারী ক্যাপসুল।
সুনিতা ও বুচ মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার নভোচারী। এই দুজন গত বছরের জুন থেকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) ছিলেন। আট দিনের মহাকাশ মিশনে সেখানে গিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু বোয়িংয়ের স্টারলাইনার মহাকাশযানে ত্রুটির কারণে তাঁরা সেখানে আটকে পড়েন।
সুনিতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোর আট দিনের অভিযানে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে গিয়েছিলেনফাইল ছবি: এএফপি
এর মধ্যে ৯ মাস গড়িয়ে যায়। অবশেষে সুনিতা ও বুচকে ফিরিয়ে আনতে গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে একটি মিশন পাঠায় নাসা ও ধনকুবের ইলন মাস্কের মহাকাশ প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স।
আইএসএসের অবস্থান পৃথিবী থেকে প্রায় ২৫৪ মাইল বা ৪০৯ কিলোমিটার ওপরে। প্রায় ২৫ বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নভোচারীরা সেখানে যাতায়াত করছেন। সেখানে থাকা ফুটবল মাঠের সমান গবেষণাগারটি পরিচালনা করে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া।
সুনিতার বয়স ৫৯ বছর। বুচের ৬২ বছর। তাঁরা দুজনই শুরুতে মার্কিন নৌবাহিনীর পরীক্ষামূলক নতুন যান চালানোর পাইলট ছিলেন। পরে নাসায় যোগ দেন।
মাসের পর মাস মহাকাশে থাকলে পেশি ও হাড়ক্ষয় শরীরের ওপর বেশকিছু চাপ ফেলে। পানীয়র মাত্রা বদলানোর ফলে কিডনির সমস্যা হতে পারে। দৃষ্টির সমস্যাও হতে পারে। নাসা এ বিষয়গুলোর ওপর নজর রেখেছিল।
তবে প্রশ্ন হলো, সেখানে তাঁরা কী খেয়েছেন? আসুন জেনে নেই—
গত বছরের ১৮ নভেম্বর সুনিতাদের নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক পোস্ট। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, আইএসএসে আটকে থাকা নাসার নভোচারী বুচ আর সুনিতা পিৎজা, রোস্ট করা মুরগির মাংস আর চিংড়ির ককটেল খাচ্ছেন।
সুনিতারা যেই মহাকাশযানে (বোয়িংয়ের স্টারলাইনার) চেপে আইএসএসের পাড়ি জমিয়েছিলেন, সেটার সঙ্গে সম্পৃক্ত একজন নিউইয়র্ক পোস্টের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি জানান, সুনিতারা এতটুকুই তাজা খাবার খেতে পেতেন, যতটুকু খাদ্যতালিকায় পুষ্টিমান বজায় রাখার জন্য জরুরি।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনফাইল ছবি: রয়টার্স
সংশ্লিষ্ট একজন বিশেষজ্ঞ জানান, সুনিতারা সকালের নাশতায় সিরিয়াল, গুঁড়া দুধ, পিৎজা, রোস্ট করা মুরগির মাংস, চিংড়ির ককটেল আর টুনা মাছ খাওয়ার সুযোগ পেতেন। তাঁরা দুজন কতটা ক্যালরি গ্রহণ করছেন, সেটা নাসার চিকিৎসকেরা পর্যবেক্ষণ করতেন।
সুনিতা ও বুচের জন্য আইএসএসে তাজা ফল ও সবজি ছিল। কিন্তু তিন মাসের মধ্যে সেটা ফুরিয়ে যায়। গত বছরের নভেম্বরে ওই সূত্র জানান, শুরুতে তাজা ফল ছিল। তবে মাস তিনেকের মধ্যে তা শেষ হয়ে যায়। তাঁদের ফল আর শাকসবজি থাকে প্যাকেটজাত বা হিম করে শুকানো।
আইএসএসে সুনিতা-বুচ ডিম আর মাংস খেতেন। তবে সেসব পৃথিবীতে রান্না করা সংরক্ষিত খাবার। স্টেশনে তাঁরা শুধু সেগুলো গরম করে নিতেন। এ ছাড়া স্যুপ, স্টু আর ক্যাসেরোলের মতো খাবার শুকনা অবস্থায় নিয়ে গিয়েছিলেন। পরে সেখানে ৫৩০ গ্যালনের ট্যাংকে থাকা সুপেয় পানি দিয়ে সেসব খাবার গরম করা হতো। আইএসএসে নভোচারীদের প্রস্রাব ও ঘাম পুনর্ব্যবহার করে সুপেয় পানিতে পরিণত করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা স্পষ্ট করেই বলছেন, আইএসএসে পুষ্টিকর খাবারের অভাবে কারও ওজন কমেনি। তাঁদের মতে, সেখানে পর্যাপ্ত খাবার রয়েছে। এমনকি সুনিতাদের মতো কোনো অভিযান যদি আকস্মিকভাবে বিলম্বিত হয়, তাহলেও খাবারের অভাব হবে না। বিলম্বিত অভিযানের ক্ষেত্রে বাড়তি সরবরাহের পরও আইএসএসে একেকজন নভোচারীর জন্য দৈনিক ৩ দশমিক ৮ পাউন্ড খাবার মজুত রয়েছে।
এদিকে সুনিতাদের ফিরিয়ে আনার জন্য নাসা ও স্পেসএক্সের উদ্ধার অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ক্রু-১০ ’। এতে নতুন চারজন নভোচারীকে পাঠানো হয়। তাঁরা আইএসএসে পৌঁছান। পরে গতকাল সুনিতা ও বুচ পৃথিবীর পথে রওনা হন। সঙ্গে ছিলেন আরও দুই নভোচারী—যুক্তরাষ্ট্রের নিকোলাস হেগ ও রাশিয়ার আলেকজান্ডার গর্বুনভ।
আরও পড়ুন
করজাল বাড়াতে সারাদেশে স্পট অ্যাসেসমেন্ট শুরু
বাংলাদেশিদের ভিসা দিচ্ছে না ভারত, সুযোগ নিচ্ছে চীন
ক্যাম্প ন্যুর উদ্বোধনেই বার্সায় ফিরছেন মেসি?