October 17, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, October 16th, 2025, 7:09 pm

মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাইলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

 

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখারপুল এলাকায় ছয়জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাইলেন এই মামলার সাক্ষী এলজিআরডি ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।খবর (বাসস)

চানখারপুল হত্যা মামলায় বৃহস্পতিবার সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেয়ার পর আজ বৃহস্পতিবার আবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ অবশিষ্ট জবানবন্দিতে তিনি এই শাস্তি চান। এরপর আসামী পক্ষ থেকে তাকে জেরা করা হয়। আসিফ মাহমুদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ট্রাইব্যুনাল এই মামলায় পরবর্তী সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ২৬ অক্টোবর দিন ধার্য করেন।

ট্রাইব্যুনালে এই মামলায় প্রসিকিউসন পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামীম শুনানি করেন। এসময় অপর প্রসিকিউটর ও আসামী পক্ষের আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।

২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে কোটা পুনর্বহালের হাইকোর্টের রায় এবং পরবর্তীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরে গত বৃহস্পতিবার এলজিআরডি ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সাক্ষীর জবানবন্দিতে বলেছেন, আমি চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সমন্বয়ক ছিলাম। আন্দোলনের একপর্যায়ে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন আমাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করতে যোগাযোগ শুরু করে। ডিবি কার্যালয়ে আটকে রাখার সময় আমাদের বার বার বলা হয় যে, প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে আমাদেরকে ডিবি কার্যালয় তুলে আনা হয়েছে। আন্দোলন প্রত্যাহারে রাজি না হলে আমাদের হত্যা করা হবে মর্মে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশ রয়েছে। তবে তারা (ডিবি) দয়া করে আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছেন।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখারপুলে হতাহতের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সেদিন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তার জবানবন্দিতে বলেছেন, ওইদিন আমার সামনেই পুলিশের গুলিতে দু’জন নিহত হন। পরবর্তীতে জানতে পারি সেখানে ওইদিন ছয়জন আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। সেদিন ওখানে পুলিশ চাইনিজ রাইফেল ও শর্ট গান দিয়ে গুলি করে। সেদিন বেলা দেড়টার দিকে আমরা জানতে পারি শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে।

চানখারপুলের হত্যাকাণ্ডের জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃবৃন্দ ও গুলি চালানো পুলিশ ও কমান্ড কর্তৃপক্ষ দায়ী বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গত বৃহস্পতিবার জবানবন্দি দেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

গত বছরের ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখারপুল এলাকায় ছয়জনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত ১৪ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনাল-১ ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আট আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেন। এই মামলায় যে আট আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হয়েছে তারা হলো: সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম, রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল, শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক মো. আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ও মো. নাসিরুল ইসলাম। এই আসামির মধ্যে প্রথম চারজন পলাতক। অন্য চারজন গ্রেফতার।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে আওয়ামী লীগ সরকার, তার দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। জাজ্বল্যমান এসব অপরাধের বিচার এখন অনুষ্ঠিত হচ্ছে দু’টি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।

এনএনবাংলা/