জেলা প্রতিনিধি, রংপুর (মিঠাপুকুর) :
৯টি মামলায় ১৪ জনকে আসামী করে ৬৩ লক্ষ টাকার মামলা দায়ের করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সুদের টাকা চক্রবৃদ্ধি হারে আদায় করতে ফাঁকা চেক ও স্ট্যাম্পকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ২ লাখ ২৫ হাজার টাকার বিপরীতে ৬৩ লক্ষ টাকার মামলা করেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয়দের সূত্রমতে, রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ১৬ নং মির্জাপুর ইউনিয়নের মুরাদপুর গ্রামের মৃত মোজাম্মেল হকের ছেলে আনোয়ারুলের দীর্ঘদিন ধরে চলছে রমরমা সুদের ব্যাবসা । চড়া সুদে টাকা নিয়ে পরিশোধ করতে না পারলে চক্রবৃদ্ধি হারে বৃদ্ধি সুদের টাকার পরিমান বাড়িয়ে মামলার রোষানলে ফেলছে টাকা গ্রহীতাদের। ফলে কেউ পালিয়ে বেড়াচ্ছেন আর কেউ মামলার ঘানি মাথায় নিয়ে আতঙ্কে দিনাতিপাত করছেন। এ অবস্থায় তার হাত থেকে পরিত্রাণ চায় স্থানীয়রা। সাদা স্ট্যাম্প ও ফাঁকা চেক এ সই নিয়ে প্রত্যেকটি মামলা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
মামলার রোষানলে পরা আনারুল হক জানান সুদের টাকা দিতে না পারলে চক্রবৃদ্ধি হারে বৃদ্ধি পায়। ফাঁকা চেক জমা দিয়ে ১৫ হাজার টাকা নিয়েছিলাম বিপরীতে ৫ লক্ষ টাকার মামলা দিয়ে আমাকে দিশেহারা করেছে।
অন্যদিকে আব্দুল মাবুদ মিয়া ও তার স্ত্রী ফেরদাউসী বলেন আমরা যখন টাকা নিয়েছি মাত্র ১ লক্ষ। এই জন্য আমাদেরকে আনোয়ারুল ইউনিয়ন ব্যাংক এ নিয়ে যেয়ে হিসেব নাম্বার খুলে নেয়। তারপর আামাদের সই নিয়ে পুরো চেক বই নিজের কাছে রেখে দেয়। ২৫ লক্ষ টাকার মামলার মুখোমুখি হয়ে আমাদের বাঁচা মরা সমান হয়ে গেছে।
ইমাদপুর মসজিদপাড়ার সাবিনা বেগম তার দুই মেয়ে সুরাইয়া ইসলাম ও সানজানা ইসলামের বিরুদ্ধে তিন লক্ষ টাকার মামলা করেন দাদন ব্যবসায়ী আনোয়ারুল। তার পরিবারের ৩ সদস্যের নামে মামলা করায় শহীদুল ইসলাম জানান আমি বিদেশ থাকাকালীন আমার স্ত্রী ৫০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন সুদখোর আনোয়ারুলের কাছে। আমার শশুরের মাধ্যমে
১ লাখ ৪০ হাজার পরিশোধও করেছি।ফাঁকা চেক তার কাছে থাকায় ৩ লক্ষ টাকার মামলা দিয়েছে।
শাহজাহানের বিরুদ্ধে পাঁচ লক্ষ টাকার মামলা করেন পক্ষান্তরে তিনি বলেন, আমি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার বিনিময়ে ২০ শতাংশ জমি নামে করে দেওয়ার পরও আমার নামে মামলা দিয়েছে এই জন্য আমি ভিটামাটি ছেড়ে বাইরে অবস্থান করছি।
একই এলাকার ইয়াকুব আলী ও তার ছেলে আউয়াল মিয়ার বিরুদ্ধে ৫ লক্ষ টাকা অর্থ আত্মসাতের মামলার বিষয়ে তারা বলেন, অভাবের তারনায় মাত্র ৫০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন।
১ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন জাহানারা বেগমের স্বামী পরিশোধ করার পরও জুলুম করে সই নেওয়ায় সে স্ট্রক করে তিন দিন পরে মারা যান। মৃত জয়দুল মামলা থেকে বাচলেও বিধবা জাহানারা ও তার ছেলে আজ মামলার ঘানি টানছেন।
বুজরুক নুরপুরের রোস্তম আলী ও তার স্ত্রী রিনু বেগমের নামে ৫ লক্ষ টাকার চেক ডিজঅনার মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের মেয়ে রুমানা বলেন, আমরা মা মেয়ে সুদারু আনোয়ারুলের কাছে টাকার জন্য গিয়েছিলাম ফাঁকা চেক ও স্ট্যাম্পে সই নিয়ে পরের দিন টাকা দেওয়ার কথা বললেও না দিয়ে মামলা করেন। আমাদের কাছে এ সংক্রান্ত ভিডিও রয়েছে।
খোর্দ্দ শেরপুরের জয়দাল মিয়া জানান, তার বিরুদ্ধে ২ টি মামলা করেছেন সুদখোর আানোয়ারুল। ৮ লক্ষ টাকার চেক ডিজঅনার মামলার বিষয়ে বলেন মূলত ২ লক্ষ টাকা নিয়েছিলাম ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন। চেক ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও না দিয়ে মামলা করেন।
মামলাবাজ আনোয়ারুল ইসলাম ছাড়াও তার ছেলে আরিফ হাসানকে(২৩) দিয় পূর্ব মুরাদপুর এলাকার আব্দুল হাসেমের বিরুদ্ধে ৬ লক্ষ টাকার মামলা করেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমার ছেলে বিদেশ যাওয়ার জন্য ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা সুদের ওপর নেয় এবং আমার কাছে ফাঁকা স্ট্যাম্পে সই নেয়।ইতোমধ্যে আমি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছি তবুও মামলা দিয়েছেন। বৃদ্ধ বয়সে এখন কোর্টে দৌড়াদৌড়ি করে বেড়াচ্ছি।
দাদন ব্যবসায়ী আনারুলের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে ব্ক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে মিঠাপুকুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোস্তাফিজার রহমান বলেন, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আরও পড়ুন
খুলনা বিভাগে ভোক্তা-অধিকারের অভিযান : ১৭টি প্রতিষ্ঠানকে ২ লাখ ২২ হাজার টাকা জরিমানা
খুবিতে ‘উচ্চ শিক্ষায় অ্যাক্রেডিটেশন’ বিষয়ে উদ্বুদ্ধকরণ কর্মশালার উদ্বোধন
তালতলীতে ১০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা