রংপুর ব্যুরো :
রংপুরে আয়েশা খাতুন মুন্নি হত্যা মামলায় আদালতের দেয়া আদেশের দীর্ঘ ১৫ মাস অতিবাহিত হলেও প্রতিবেদন দাখিল না করায় মুন্নি হত্যার বিচার কার্যক্রম ব্যাহত ও বিলম্বিত হচ্ছে, এমন আশংকায় দ্রুত ন্যায় বিচার পেতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন (পি বি আই) রংপুর এর পুলিশ সুপার বরাবর আবেদন দাখিল করেছেন মামলার বাদী মো: বেল্লাল হোসেন। গত ৫ জুলাই দুপুরে তিনি এই আবেদন পুলিশ সুপার এ বি এম মো: জাকির হোসেন এর হাতে তুলে দেন। আবেদন গ্রহন করে পুলিশ সুপার জাকির হোসেন বলেন, ন্যায় বিচার পেতে সঠিক তদন্ত করে দোষিদের আইনের আওতায় আনতে দ্রুত আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
এদিকে আসামী পক্ষ অভিযোগ অস্বীকার করে ভিন্ন কথা বললেও বাদী সহ অনেকেই বলছেন প্রকৃত খুনি আসামীরা নিজেদের বাঁচাতে হত্যাকান্ডের আলামত নষ্ট করে এবং রাজনৈতিক প্রভাব ও টাকার বিনিময়ে গঙ্গাচড়া থানার ওসি মো: দুলাল হোসেন বিপি-৭৮০৬১০৬১০২, পুলিশ তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক মো: মমতাজুল হক বিপি-৮৩১১১৩৭০০৬ , পরিদর্শক (নিরস্ত্র) জনক চন্দ্র রায় বিপি- ৮৮১৭২০০২১৩ এবং রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগের ডাক্তার আয়শা পারভিনকে মিথ্যা ও বানোয়াট তদন্ত প্রতিবেদন ও মৃতের সুরতহাল সহ ময়না তদন্ত রিপোর্ট দিতে বাধ্য করেছেন। সেই সঙ্গে দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবীও জানিয়েছেন এলাকাবাসী সহ সচেতন মহল। সরেজমিন গিয়ে উঠে এসেছে এই চিত্র।
পি বি আই কে দেয়া আবেদনে বলা হয়েছে রংপুরের গঙ্গাচড়া থানায় দায়ের করা মামলা যার নং জি আর ১৯৩/২৩ ধারা, ৩০২/২০১/৩৪ দন্ডবিধি, পেনাল কোড ১৮৬০,তারিখ ১ জুলাই ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ এর তদন্তকারী কর্মকর্তার তদন্ত প্রতিবেদন ও মৃতের সুরতহাল এবং ময়না তদন্ত রিপোর্ট আসামী পক্ষে প্রভাবিত হয়ে দাখিল করায় বাদী মো: বেল্লাল হোসেন ২৭ মার্চ ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ তদন্ত প্রতিবেদনের প্রতি নারাজি সহ ন্যায় বিচার পেতে তদন্ত ভার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন (পি বি আই) কে প্রদানে আদালতে আবেদন জানান। রংপুরের জেলা ও দায়রা জজ আবেদন মঞ্জুর করে মুন্নি হত্যা মামলার তদন্ত ভার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন (পি বি আই) রংপুরকে প্রদান করেন। যার স্মারক নং ২৬৫২ এবং আদেশ প্রেরনের তারিখ ৩১ মার্চ ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ। কিন্তু ১৫ মাস অতিবাহিত হলেও পি বি আই রংপুর কোনও তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল না করায় মুন্নি হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম ব্যাহত ও বিলম্বিত হচ্ছে, এমন আশংকা করেই বাদী মো: বেল্লাল হোসেন দ্রুত ন্যায় বিচার পেতে পি বি আই রংপুরকে এই আবেদন করেন।
মামলার এজাহার ও সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে ১৪ বছর আগে রংপুরের গঙ্গাচড়ার বেতগাড়ী ইউনিয়নের সাতআনি শেরপুর ফখরপাড়ার মো: আজগার মুন্সির পুত্র মো: রশিদুল ইসলাম এর সাথে বিয়ে হয় ফেনী জেলার দাগনভুঞার হিরাপুর গ্রামের মৃত কাশেম মিয়া ও তহুরা বেগমের একমাত্র কন্যা আয়েশা খাতুন মুন্নির বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে মুন্নি স্বামীর বাড়িতে থাকতো। ১৪ বছর এর বৈবাহিক জীবনে মুন্নি কোলে আসে ২ মেয়ে ও ১ ছেলে। এজাহারে আরো বলা হয়, বিয়ের সময় দেড় ভরি স্বর্নের অলংকার এবং অসুস্থ্য মায়ের চিকিৎসার জন্য মুন্নির মামা মুন্নির স্বামীকে ৩ লাখ টাকা প্রদান করলে স্বামী তা মুন্নির মায়ের চিকিৎসা না করে অবহেলা করায়, মুন্নি প্রতিবাদ করলে মুন্নিকে সহ্য করতে হয় স্বামীর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। অন্যান্য দিনের মতো ২০২৩ সালের ৩০ জুন কোরবানী ঈদের পরের দিন শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে মুন্নি নিজের মেয়েকে শাসন ও মায়ের সু চিকিৎসার জন্য স্বামীকে বললে, শুরু হয় মুন্নির উপর প্রথমে অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ এবং পরে শারীরিক নির্যাতন। স্বামী, দেবর,শাশুরী সহ বাড়ির অন্যান্যরা আধাপাকা টিন শেড ঘরের ভিতরে মুন্নিকে জোরপুর্বক নিয়ে বাঁশের ফালাটি ও লোহার রড দিয়ে এলোপাথারি মার ডাং করে। এতে মুন্নি মৃত্যবরন করলে তারা পরিকল্পিতভাবে আলামত নষ্ট করে এবং এ্যাম্বুলেন্স ডেকে মেডিকেল নিয়ে যাওয়ার কথা বলে মেডিকেল না নিয়ে বাড়িতে ফেরত আনে এবং মুন্নি গলায় শাড়ি পেচিয়ে ফাঁস দিয়ে আত্বহত্যা করেছে এই অপপ্রচার চালিয়ে পালিয়ে যায়। তবে তাৎক্ষনিক মুন্নির মেয়ে রাইশা এলাকাবাসীর সকলের সামনে তার মা মুন্নিকে কাকা,বাবা মার ডাং করে মেরে ফেরেছে বললে সকলেই প্রকৃত সত্য জেনে ফেলে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ ৫৬ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যরে এবং সাড়ে ৪ ইঞ্চি গড় ব্যাসের বাঁশের লাঠি জব্দ সহ লাশ ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। খবর পেয়ে ফেনীতে থাকা মুন্নির মামা মো: বেল্লাল হোসেন রংপুরে এসে দাফনকাজ সম্পন্ন করে বাদী হয়ে গঙ্গাচড়া থানায় এজাহার দাখিল করেন।
বাদী সহ অনেকেই বলছেন রাজনৈতিক প্রভাব ও টাকার বিনিময়ে প্রকৃত খুনি আসামীরা নিজেদের বাঁচাতে গঙ্গাচড়া থানার ওসি মো: দুলাল হোসেন বিপি-৭৮০৬১০৬১০২, পুলিশ তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক মো: মমতাজুল হক বিপি-৮৩১১১৩৭০০৬ , পরিদর্শক (নিরস্ত্র) জনক চন্দ্র রায় বিপি- ৮৮১৭২০০২১৩ এবং রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগের ডাক্তার আয়শা পারভিন মিথ্যা ও বানোয়াট তদন্ত প্রতিবেদন ও মৃতের সুরতহাল সহ ময়না তদন্ত রিপোর্ট দিতে বাধ্য করেছেন। এ অবস্থায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন (পি বি আই) রংপুর এর নিরপেক্ষ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের মাধ্যমে আদালত দ্রুত সময়ে মুন্নি হত্যা মামলায় প্রকৃত দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির আদেশ দিবেন এমন প্রত্যাশা করছে সচেতন মহল সহ বাদী ও এলাকাবাসী।
আরও পড়ুন
ভারতের ইন্ধনে সরকার উৎখাত ষড়যন্ত্রে লিপ্ত এনবিআর- রাশেদ প্রধান
কুড়িগ্রাম ২২-বিজিবির বৃক্ষরোপন কর্মসূচী-২০২৫ পালিত
কয়রার পর্যটন কেন্দ্রটি বদলে দেবে এই অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য – খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম