নিজস্ব প্রতিবেদক:
আমানত শব্দের অর্থ বিশ্বস্ততা, আস্থা, নিরাপত্তা, আশ্রয়, তত্ত্বাবধান ইত্যাদি। বাংলা ভাষায় সাধারণভাবে ‘আমানত রক্ষা করা’ বলে কারো কাছে কোনো সম্পদ, অর্থ, বস্তু গচ্ছিত রাখা হলে বিশ্বস্ততার সাথে তা রক্ষা করা এবং মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া বোঝানো হয়।
কিন্তু ইসলামের পরিভাষায় ‘আমানত’ শব্দের অর্থ আরও ব্যাপক। এটি শুধু গচ্ছিত রাখা অর্থের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নয়। যাবতীয় হক ও দায়-দায়িত্ব বিশ্বস্ততা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করা এবং প্রত্যেক ধর্তব্য ও বিবেচ্য বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা এর অন্তর্ভুক্ত। যে কোনো ধরনের ভেজাল, দুর্নীতি, অন্যের হক নষ্ট করা, নিজের দায়িত্বে অবহেলা করা, বিশ্বাস ভঙ্গ করা ইসলামে আমানতের খেয়ানতের মধ্যে পড়ে।
ইসলামে আমানত রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ ফরজ কর্তব্য। অমানতের খেয়ানত করা মহাপাপ। একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য হলো সব ধরনের আমানতের ব্যাপারে যত্নবান থাকা। কোরআনে সুরা মুমিনুনের শুরুতে মুমিনদের গুণ বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
وَ الَّذِیۡنَ هُمۡ لِاَمٰنٰتِهِمۡ وَ عَهۡدِهِمۡ رٰعُوۡنَ
হকদারদের কাছে তাদের হক বা আমানত পৌঁছে দেওয়া ও ন্যায়বিচারের নির্দেশ দিয়ে আরেকটি আয়াতে আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়াতাআলা বলেন,
اِنَّ اللّٰهَ یَاۡمُرُکُمۡ اَنۡ تُؤَدُّوا الۡاَمٰنٰتِ اِلٰۤی اَهۡلِهَا وَ اِذَا حَکَمۡتُمۡ بَیۡنَ النَّاسِ اَنۡ تَحۡکُمُوۡا بِالۡعَدۡلِ
আমানতদারিতারকে কোরআনে আল্লাহর নবি-রাসুল এবং আল্লাহর নৈকট্যশীল ফেরেশতা হজরত জিবরাইলের (আ.) এর বিশেষ গুণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সুরা শুআরায় কয়েকজন রাসুলের আলোচনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, তারা তাদের উম্মতদের বলেছেন,
إِنِّي لَكُمْ رَسُولٌ أَمِينٌ فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ
সুরা তাকভীরে জিবরাইলকেও ‘আমিন’ অর্থাৎ আমানতদার বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
اِنَّهٗ لَقَوۡلُ رَسُوۡلٍ كَرِیۡمٍ ذِي قُوَّةٍ عِندَ ذِي ٱلۡعَرۡشِ مَكِينٖ مُّطَاعٖ ثَمَّ أَمِينٖ
আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিভিন্ন হাদিসেও আমানত রক্ষার গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার প্রায় প্রতিটি খুতবায় বলতেন, যার মধ্যে আমানতদারিতা নেই, তার ঈমান নেই, যার কাছে নিজের ওয়াদা বা কথার মূল্য নেই, তার দীন বলতে কিছু নেই। (মুসনাদে আহমদ)
আমানতের খেয়ানতকে মুনাফিকদের একটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, চারটি স্বভাব যার মধ্যে পাওয়া যাবে, সে খালিস মুনাফিক বলে গণ্য হবে। যে ব্যক্তি কথা বলার সময় মিথ্যা বলে, অঙ্গীকার করলে ভঙ্গ করে, প্রতিশ্রুতি দিলে বিশ্বাসঘাতকতা করে, ঝগড়ার সময় গালাগালি করে। যার মধ্যে এগুলোর কোন একটি স্বভাব পাওয়া যাবে, তার মধ্যে নিফাকের একটি স্বভাব পাওয়া গেল, যতক্ষণ না সে তা পরিত্যাগ করে। (সহিহ বুখারি: ৩১৭৮)
আরও পড়ুন
খরগোশের গোশত খাওয়া নিয়ে হাদিসে যা বলা হয়েছে
মাওলানা সাদের অনুসারীদের সড়ক অবরোধ : রাজধানীতে তীব্র যানজট
বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ