January 10, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, January 9th, 2025, 7:25 pm

মুমিন ও কাফের দুই বাগান মালিকের ঘটনা

আল্লাহ তাআলা তাকে দু’টি আঙ্গুরের বাগান দান করেছিলেন

অনলাইন ডেস্ক:
আল্লাহ তাআলা যখন নেয়ামত দান করেন, তখন তিনি চান বান্দা তার নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করুক। মুখে তার প্রশংসা করুক, তার দয়া স্বীকার করুক, কাজেও তার বিধান ও নির্দেশনার আনুগত্য করুক। আল্লাহ তাআলার দেওয়া সম্পদ লাভ করলে তার নির্দেশ অনুযায়ী জাকাত দেওয়া, সদকা দেওয়া আল্লাহর তাআলার শুকরিয়া বা কৃতজ্ঞতা। সুস্থ থাকলে নামাজ পড়া ও রোজা রাখাও আল্লাহর তাআলার শুকরিয়া আদায়ের অন্তর্ভুক্ত।

আল্লাহ তাআলার নেয়ামত পেয়ে তা নিজের কৃতিত্ব বলে জাহির করা, দম্ভ ও অহংকার করা, ওই নেয়ামতের হক আদায় না করা আল্লাহ তাআলার না-শোকরি বা অকৃতজ্ঞতা গণ্য হয়।

বান্দা শুকরিয়া আদায় করলে আল্লাহ তাআলা নেয়ামত বৃদ্ধি করে দেন, আর বান্দা যদি অকৃতজ্ঞ হয়, তাহলে আল্লাহ শাস্তি হিসেবে নেয়ামত উঠিয়ে নেন। কোরআনে শোকর আদায় করলে নেয়ামত বাড়িয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ও অকৃতজ্ঞতার জন্য কঠোর শাস্তির ঘোষণা দিয়ে আল্লাহ বলেন, তোমরা যদি কৃতজ্ঞতা আদায় কর তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদেরকে আরও বাড়িয়ে দেবো, আর যদি তোমরা অস্বীকার করো, তাহলে আমার আজাব অবশ্যই কঠিন। (সুরা ইবরাহিম: ৭)

সুরা কাহাফে আল্লাহ তাআলা উদাহরণ হিসেবে দুজন বাগান মালিকের ঘটনা বর্ণনা করেছেন, তাদের একজন যাকে আল্লাহ তাআলা বেশি সম্পদ দান করেছিলেন, সে এই নেয়ামতের জন্য আল্লাহ তাআলার শোকর আদায়ের বদলে অকৃতজ্ঞ ও দাম্ভিক হয়ে উঠেছিল। ফলে তার ওপর আল্লাহর শাস্তি নেমে আসে। তার বাগান ধ্বংস হয়ে যায়।

আল্লাহ তাআলা বলেন, তুমি তাদের কাছে দুই ব্যক্তির দৃষ্টান্ত বর্ণনা কর যাদের একজনকে আমি দিয়েছিলাম দু’টি আঙ্গুরের বাগান, আর ওগুলোকে খেজুর গাছ দিয়ে ঘিরে দিয়েছিলাম আর ও দু’টির মাঝে দিয়েছিলাম শষ্যক্ষেত। দু’টি বাগানই ফল দিত, এতে এতটুকু ত্রুটি করত না। এ দু’য়ের মাঝে আমি ঝর্ণাধারা প্রবাহিত করেছিলাম।

লোকটির উৎপাদন ছিল প্রচুর। একদিন কথাবার্তা বলার সময় সে তার প্রতিবেশীকে বলল, আমি সম্পদে তোমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ, আর জনবলে তোমার চেয়ে শক্তিশালী। নিজের ওপর জুলুম করে সে তার বাগানে প্রবেশ করল। সে বলল, আমি ধারণা করি না যে, এটা কোনো দিন ধ্বংস হয়ে যাবে। আমি মনে করি না যে কেয়ামত হবে। আর যদি আমাকে আমার প্রতিপালকের কাছে ফিরিয়ে নেয়া হয়ই, তাহলে অবশ্য অবশ্যই আমি পরিবর্তে আরো উৎকৃষ্ট স্থান পাব।

কথায় কথায় তার সঙ্গী বলল, তুমি কি তাঁকে অস্বীকার করছ যিনি তোমাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর শুক্র-কীট থেকে, অতঃপর তোমাকে পূর্ণাঙ্গ দেহসম্পন্ন মানুষ বানিয়ে দিয়েছেন? তিনিই আল্লাহ, আমার রব। আমি আমার রবের সাথে কাউকে শরিক করি না।

তুমি যখন মনে করলে সম্পদে ও সন্তানে আমি তোমার চেয়ে কম, তখন তোমার উদ্যানে প্রবেশ করে কেন তুমি বললে না, মাশাআল্লাহ! আল্লাহর তওফিক ছাড়া কোনো শক্তি নেই। আমি আশা করি আমার রব আমাকে তোমার বাগানের চেয়ে উত্তম কিছু দান করবেন আর তোমার বাগানের ওপর আকাশ থেকে কোনো বিপদ পাঠিয়ে দেবেন, ফলে তা শূন্য ময়দানে পরিণত হবে। অথবা বাগানের পানি ভূ-গর্ভে চলে যাবে এবং তুমি কখনও তা ফিরিয়ে আনতে পারবেনা।

তারপর তার ধন-সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেল এবং সে তাতে যা ব্যয় করেছিল তার জন্য হাতে হাত রেখে আক্ষেপ করতে লাগল, যখন তা ধ্বংস হয়ে গেল। সে বলতে লাগল হায়! আমি যদি কাউকে আমার রবের সাথে শরিক না করতাম!

আল্লাহ ছাড়া তাকে সাহায্য করার কোন দলবলও ছিল না, আর সে নিজেও এর মোকাবিলা করতে পারল না। এ ক্ষেত্রে সাহায্য করার ক্ষমতা সত্যিকার আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট; পুরস্কার দানে ও পরিণাম নির্ধারণে তিনিই শ্রেষ্ঠ। (সুরা কাহাফ: ৩২-৪৪)

এ ঘটনাটি থেকে আমরা বুঝতে পারি আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার সম্পদ-প্রতিপত্তি দান করলে দাম্ভিক ও অহংকারী হয়ে ওঠা, অন্যদের তাচ্ছিল্য করা অত্যন্ত গর্হিত ও নিন্দনীয় কাজ। এ ধরনের গর্হিত কাজের কারণে দুনিয়াতেই আল্লাহ তাআলার শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে। সম্পদ আল্লাহ তাআলার দান। সম্পদ লাভ করলে বিশ্বাসে, কথায় ও কাজে আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করা উচিত। সম্পদের সদ্ব্যবহার করা উচিত। তাহলে আল্লাহ তাআলা নেয়ামত স্থায়ী করবেন এবং আরও বাড়িয়ে দেবেন।