আব্দুল বারী স্বপন, গঙ্গাচড়া (রংপুর):
পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে এদেশের মুক্তিকামী মানুষ। পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর বর্বচিত হত্যা ও ধর্ষনে শিকার মা-বোনের ইজ্জত বিনিময়ে হলেও দেশকে পরাধীনতার হাত থেকে মুক্ত করতে হবে। দেশ প্রেমিক সকল পেশার মানুষ নিজেদের মায়ামমতা ত্যাগ করে স্বাধীনতা যুদ্ধে লড়াই করছে, আর আমি ঘরে বসে থাকব এ হতে পারেনা। আমাকেও মাতৃভূমি রক্ষায় এ লড়াই লড়তে হবে। এমন প্রতিজ্ঞা নিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়ে লড়াই করেছেন আনোয়ার উদ্দিন। দেশ শত্রুমুক্ত হয়ে বিজয় অর্জন করার পর স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্র। রংপুরের গঙ্গাচড়া ইউনিয়নের দোলাপাড়া গ্রামের মৃত হোসেন আলীর পুত্র মো. আনোয়ার উদ্দিন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তার বয়স ৩০ বছর। দেশকে পরাধীনতার হাত থেকে মুক্ত করতে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিতে স্ত্রী ও ১ বছরের সন্তানকে বাড়িতে রেখে লালমনিরহাটের সীমান্ত দিয়ে চলে যান ভারত। সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে ৬ নং সেক্টরের অধীনে লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযুদ্ধ করেন। দেশ বিজয় অর্জন করে। মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহনের স্বীকৃত হিসেবে পান সে সময়ে দেশ রক্ষা বিভাগ থেকে ৬ নং সেক্টরের আঞ্চলিক অধিনায়ক ও বাংলাদেশ সস্ত্রবাহিনীর অধিনায়ক মুহাম্মদ আতাউল গনি ওসমানী কর্তৃক বীর সৈনিকের স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্র। যার এফএফ নম্বর-৮০/২৬, ক্রমিক নং-১১৬৫৬৭। কিন্তু এখন পর্যন্ত পাননি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে গেজেট ভুক্ত স্বীকৃতি। এখন বয়স প্রায় ৯০ বছরের কাছাকাছি। কথা ঠিকমত বলতে পারেন না। কষ্টে জীবন যাপন করা এ বীর মুক্তিযোদ্ধা এখনও দিন কাটছে কোন রকম। ২০০১ সালে যাচাই-বাছাই করে খসড়া তালিকায় অনুমোদিত হলে আর্থিক সংকটের কারণে যোগাযোগ করতে না পারায় সে সময় সনদপত্র সংগ্রহ করতে পারেন নাই। এরপর ২০১৪ সালে আবার যাচাই-বাছাই হলে সে তালিকায় তার ক্রমিক নং-২৫। ২০১৪ সালের যাচাই-বাছাই অনলাইনকৃত সনদপত্র সংগ্রহ করলে সেটি বাড়িতে আগুনে পুড়ে যায় এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্র হারিয়ে যায়। ফলে তার যাচাই-বাছাইয়ে আটকে থাকে গেজেট ভুক্ত। পরবর্তীতে স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্র খুঁজে পেয়ে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের মহাপরিচালকের কাছে ২০২৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর গেজেট ভুক্ত করার জন্য আবেদন করেন। অদ্যবদি সে আবেদনে এখনও নেওয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা। বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার উদ্দিনের স্ত্রী ফাতেমা বেগম জানান, বয়স যখন ৩০ বছর, তখন যুদ্ধ দেখে ওনি থামতে পারেন না। আমাকে বলেন আর বসে থাকা যায়না। পাকিস্তানীরা যা শুরু করছে এদের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে। তখন সে আমাকে ও ১ বছরের সন্তানসহ পরিবারের অন্যদের সাথে বাড়িতে রেখে লালমনিরহাট দিয়ে ভারত যায়। ট্রেনিং নিয়ে লালমনিরহাটের দহগ্রাম, সীতাই, তালপট্টিসহ বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধ করে। ওনার কমান্ডার ছিল আনিচুর রহমান ও ক্যাপ্টেন নাননু মিয়া। সহযোদ্ধা আকতার রহমান, নুরুল হকসহ অনেকে। দেশ স্বাধীন হবার বিশদিন পর্যন্ত বাড়িতে না আসায় আমরা ধরে নিয়ে ছিলাম ওনি বেঁচে নাই। বিশ দিন পর হাসিমুখে বাড়িতে এসে বলে আমাদের দেশ স্বাধীন আমরা শত্রুদের পরাজিত করেছি এবং তার যুদ্ধের গল্প বলে। তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্র পাওয়ার পর সে সময় কয়েক বছর রেশনসহ বিভিন্ন সাহায্য সরকারিভাবে পেয়েছি। পরে এগুলো বন্ধ হয়। তারপর সংসার চালানোর তাগিদে কাজ করে। সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের আবার যাচাই-বাছাই করে সহযোগিতা দিলেও আমার স্বামীর অর্থ অভাবে যাচাই-বাছাই পর্যন্ত শেষ হয়। এখন তার বয়স ৯০ কাছাকাছি ঠিকমত কথা বলতে ও হাটতে পারেনা। কোন রকম বলে আমার কাগজ হইছে, আমি দেখে মরব। ছেলে আব্দুল লতিফ বলেন, বাবার যাচাই-বাছাইয়ে নাম থাকে কিন্তু যোগাযোগ করার কারণে গেজেট হয় না। আমি বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে যোগাযোগের উদ্যোগ নিলে তখন সনদপত্রটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলনা। সনদপত্র খুঁজে পাওয়ার পর বাবাকে গত বছর ঢাকা নিয়ে গিয়ে জামুকায় আবেদন করি। সেখান থেকে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় গেলেও এখনও গেজেট ভুক্ত করা হয় নাই। এখনতো বাবা চলতে পারেনা। বর্তমান সরকারের কাছে আমার বাবা তার স্বীকৃতি দেখে যাওয়ার আশা পুরনের দাবি জানাচ্ছি।
আরও পড়ুন
রূপসা নদীতে ১০ দলের অংশগ্রহণে হবে গ্রাম বাংলা ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ
সোনাগাজীতে পুলিশি নির্যাতনে নিহত যুবদল নেতার পরিবারকে ঘর দিচ্ছেন তারেক রহমান
পাবনায় পুলিশের কাছ থেকে আ.লীগ নেতাকে ছিনতাই ঘটনায় মামলা; আটক ১৬