নিজস্ব প্রতিবেদক:
মেডিকেল কলেজসহ চিকিৎসাশিক্ষার কার্যক্রম সশরীরে শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ক্লাস শুরুর সম্ভাব্য তারিখ ঠিক করা হয়েছে আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর। বৃহস্পতিবার (২রা সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সব ধরনের সুরক্ষা নিয়ে ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে দেশের কয়েকশ’ মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বশরীরে ক্লাস খোলা হবে। এ সময় সবাইকে মাস্ক পড়তে হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। তবে পরিস্থিতি দেখে পর্যায়ক্রমে সব কিছু খোলা হবে। তিনি বলেন, আমরা বলতে চাইÑআমাদের যে বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরসরকারি মিলিয়ে মেডিকেল কলেজ, নার্সিংসহ কয়েকশ’ প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করছে আনুমানিক দেড় লাখের মতো ছাত্র-ছাত্রী। তাদের লেখাখাপড়া সশরীরে বন্ধ ছিল প্রায় দুই বছর। তবে অনলাইনে ক্লাস চলছে। গত ফেব্রুয়ারি-মার্চ থেকে বিভিন্ন কার্যক্রম বন্ধ করতে হয়েছে। লকডাউন দিতে হয়েছে কোভিড নিয়ন্ত্রণের জন্য। সেই সাথে আমাদের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে হয়েছে। মেডিকেল শিক্ষা বিভিন্ন ক্লাস বন্ধ রাখতে হয়েছে। অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম বজায় রাখতে চেষ্টা করেছি। জাহিদ মালেক বলেন, আমাদের দেড় লাখ শিক্ষার্থী মেডিকেল, নার্সিংয়ে আছে। তাদের রোগীর কাছে যেতে হবে। নইলে শিক্ষা অপূর্ণ রয়ে যাবে। সে পরিপূর্ণ শিক্ষা পাবে না। আমাদের টেকনিক্যাল কমিটি, ভিসি মহোদয়রা, মন্ত্রণালয়ের সচিব, ডিজিরাÑসবার মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের ফিজিক্যালি ক্লাস শুরু করা দরকার। না হলে অনেক বড় গ্যাপ পড়ে যাবে। নইলে আমরা ইন্টার্ন ডাক্তার পাব না। সে সব চিন্তা করে আমরা প্রথম, দ্বিতীয় এবং পঞ্চম বর্ষের ক্লাস সরাসরি নিতে যাচ্ছি। শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের টিকা দিয়েছি। তাদের সুরক্ষিত করার চেস্টা করেছি। ক্লাসে গেলে মাস্ক পড়তে হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। তিনি বলেন, প্রথম, দ্বিতীয়, পঞ্চম বর্ষের প্র্যাকটিক্যালে জড়িত শিক্ষার্থীদের জন্য আগে ক্লাস খোলা হবে। পর্যায়ক্রমে সব শিক্ষাবর্ষের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে। সব নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা করব। রোগীর কাছে শিক্ষার্থীদের যেতে হবে। তাদের যথাযথ নিরাপত্তার সাথে রোগীর কাছে নিতে হবে। সেখান থেকে তারা চিকিৎসা দেওয়া শিখবে। সেজন্য নন কোভিড রোগীদের কাছে নেবো। পর্যায়ক্রমে কোভিড রোগীদের কাছেও নেবো। এটি আমাদের আজকের সিদ্ধান্ত। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ডিজি সচিবরা জানিয়েছেন এ মাসের ১৩ তারিখ থেকে তারা ক্লাস শুরু করতে পারবেন। এটি তাদের আনুমানিক সময়। এটি আমাদের বড় একটি সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশে কোভিডের জন্য শিক্ষা ব্যবস্থায় বিপর্যয় নেমে এসেছে। আমাদের দেশেও বিভিন্ন কার্যক্রম নিতে হয়েছে। সব মিলিয়ে ৫০ হাজারের অধিক লোক নিয়োগ দিতে হয়েছে। ৪ হাজার ডাক্তার, ৮ হাজার নার্স নিয়োগ দিতে হয়েছে। এ কার্যক্রমগুলো চলমান আছে। ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমও পুরোদমে চালু আছে। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে আরও সাড়ে ১৬ কোটি ডোজ টিকা কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা সেপ্টেম্বর থেকে আগামী জানুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশে চলে আসবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। জাহিদ মালেক বলেন, আমাদের ৩ কোটি ৮৩ লাখ রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেছে। টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন ১ কোটি ৮৬ লাখ মানুষ। দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৮২ লাখ মানুষ। এ ছাড়া আমাদের হাতে ১ কোটি ২২ লাখ ডোজ টিকা আছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আগের তুলনায় করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে। সংক্রমণের হার ১১ শতাংশে নেমে এসেছে। যেটা ৩২ শতাংশ হয়েছিল। আপনারা জানেন শিল্পকারখানাসহ অনেক কিছু খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে, ভালো খবর এটাই সংক্রমণের হার কমে যাচ্ছে। হাসপাতালে প্রায় ৭৫ শতাংশ বেড এখন খালি আছে। সুতরাং রোগীর সংখ্যা অনেক কমেছে। মৃত্যুর হারও কমেছে। আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে কাজ করতে হবে। সবকিছু খুলে দেওয়ার অর্থ এ নয় যে, আমরা ঘুরে বেড়াবো। করোনা এখনও চলে যায়নি। সরকার জনগণের পাশে আছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, টিকার জন্য সরকারকে কত টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। এ কয়দিনে আমরা দেখলাম শুধু টিকার খরচ প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। সামনে আরো কিনতে হবে। আমরা যে অর্ডার দিয়েছি সেগুলো কিন্তু টাকা দিয়ে কিনতে হবে। সেখানে হাজার হাজার কোটি টাকা লাগবে। টিকা কেনার খরচ আছে, রাখার খরচ আছে, ম্যানপাওয়ার খরচ আছে। জনগণের পাশে এ সরকার আছে। টিকা কার্যক্রমের বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা চীনে অর্ডার দিয়েছি সাড়ে ৭ কোটি টিকা। প্রথমে অর্ডার দেওয়া হয় দেড় কোটি। কিছুদিন আগেই আমরা ৬ কোটি টিকা অর্ডার দিয়েছি। আগামী তিন মাসে এ ৬ কোটি টিকা চলে আসবে, প্রত্যেক মাসে ২ কোটি করে। এ ছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকে একটা প্রস্তাব আমাদের কাছে এসেছিল, সাড়ে ১০ কোটি টিকার। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ওঁর অনুমতি সাপেক্ষে এ টিকা কেনার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ সাড়ে ১৬ কোটি টিকা আমরা কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। টিকাগুলো সেপ্টেম্বর থেকে আগামী জানুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশে চলে আসবে। তিনি বলেন, ডব্লিউএইচও থেকে ৬ কোটি ৮০ লাখ টিকা আমরা বিনামূল্যে পাই, সেটা চলমান থাকবে। বুধবার (১লা সেপ্টেম্বর) আমরা ফাইজারের ১০ লাখ টিকা পেয়েছি। এটা এভাবে চলমান থাকবে। আমাদের পরিকল্পনা হলো সেপ্টেম্বর থেকে টিকা প্রাপ্তি সাপেক্ষে দেড় থেকে ২ কোটি লোককে টিকা দেওয়া হবে। বয়স্কদের অগ্রাধিকার দিয়ে টিকা দেওয়া হবে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বয়স্কদের সঙ্গে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। মডার্নার যে টিকা আমরা পাবো তার বেশিরভাগ ছাত্র-ছাত্রীদের দেওয়ার চেষ্টা করবো। আমাদের ছেলে-মেয়েরা টিকা দিয়ে স্কুলে যেতে পারলে ভালো। শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কেন মডার্নার টিকা দেওয়া হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ইউরোপ-আমেরিকাতে ফাইজার এবং মডার্নার টিকা বাচ্চাদের দেওয়া হয়েছে। তারা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বাচ্চাদের টিকা দিয়েছে। সে কারণে আমরাও এটা আমাদের দেশে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছি। চুক্তি অনুযায়ী সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে টিকা পাওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জাহিদ মালেক বলেন, আমাদের ভারতে যে অর্ডার দেওয়া ছিল, তার ২ কোটি ৩০ লাখ টিকা এখনও পাইনি, অপেক্ষায় আছি। আমরা যোগাযোগে থাকি, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের সঙ্গে যোগাযোগে থাকি, ওনারা আমাদের আশ্বস্ত করে আসছেন, আমরা টিকা পাবো। যদি কিনা আমরা এ টিকা না পাই, তাহলে অবশ্যই আমাদের টাকা-পয়সা নিয়ে আসতে হবে এবং ফেরত দিতে হবে। আমরা আশা করি টিকা পাবো।
আরও পড়ুন
টেস্ট ক্রিকেট: মরণদশা থেকে বাঁচানোর উপায় কী
আশুলিয়ায় মরদেহ পোড়ানোর মামলায় কনস্টেবল মুকুল কারাগারে
শীতে শিশুদের সুস্থ রাখবে যেসব খাবার