March 20, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Saturday, January 18th, 2025, 4:14 pm

মেহেরবানি করে চাঁদাবাজি করবেন না, কর্মী সম্মেলনে জামায়াতের আমির

কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিচ্ছেন জামায়াতের : আমির শফিকুর রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক:
চাঁদাবাজি, দখলদারি থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘মেহেরবানি করে এই কাজটা করবেন না। আমাদের শহীদদের আত্মা কষ্ট পাবে, মানবতা অপমানিত ও লাঞ্ছিত হবে।’

আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী নগরের হাজী মুহাম্মদ মহসীন সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে (ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দান) কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।

শফিকুর রহমান বলেন, ‘রাজশাহী একটি শিক্ষানগরী। ৫ তারিখের পরে আশা করি রাজশাহীতে কোনো চাঁদাবাজি হয়নি। এখানকার মানুষ ভদ্র, বিনয়ী, সৎ, কেউ চাঁদাবাজি করে না। ঠিক না?’ তাঁর বক্তব্যের জবাবে কর্মীরা বলে ওঠেন, ‘করে করে, চাঁদাবাজি করে।’
জামায়াতের আমির বলেন, ‘এখানেও চাঁদাবাজি হয়, ফুটপাত, হাটবাজার, বালুমহাল, জলমহাল, বিভিন্ন যানবাহনের স্ট্যান্ড—সব কটিতে দখলদারি হয়? তাহলে আমাদের শহীদের রক্তের প্রতি এটা কী ধরনের ভালোবাসা, সম্মান। মেহেরবানি করে এই কাজ করবেন না। আমাদের শহীদদের আত্মা কষ্ট পাবে, মানবতা অপমানিত ও লাঞ্ছিত হবে। আমাদের সন্তানেরা এত এত জীবন কেন দিল, পঙ্গু কেন হলো? তারা চেয়েছে, সমাজ থেকে সব ধরনের দুঃশাসন ও দুর্নীতির কবর রচনা হোক।’

শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের জীবন্ত সন্তানেরা, যারা শহীদ হওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হয়ে নেমেছিল, তারা অন্তরে বড় কষ্ট পাবে। তবে এই বিনয়ী অনুরোধ যাঁরা না মানবেন, তাঁদের জেনে থাকা উচিত, আমাদের যুদ্ধ শেষ হয়নি। আমাদের সন্তানেরা এখনো স্লোগান দিচ্ছেন, “আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ।” এই লড়াই চলবে যতক্ষণ না এই জমিনে ইনসাফ কায়েম না হবে।’

এ সময় পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াত শুনিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, ‘বাংলাদেশে শতকরা ৯১ শতাংশ মুসলিম–অধ্যুষিত দেশ। এর মানে এই নয়, মুসলমানরা ছাড়া এ দেশে আর কেউ শান্তিতে বসবাস করতে পারবে না, কেউ এ দেশে সম্মানের সঙ্গে থাকতে পারবে না, নাগরিক অধিকার ভোগ করতে পারবে না। অথচ ইসলাম সমস্ত মানবতার জন্য সব অধিকারের একমাত্র গ্যারান্টি। বর্তমানে দুনিয়ায় বিভিন্ন ধরনের মতবাদ চালু আছে। কোথাও সমাজতন্ত্র, কোথাও ধর্মনিরপেক্ষতা, পুঁজিবাদ, কোথাও আছে ফ্যাসিবাদ। এগুলো সব মানুষের গড়া।’

শফিকুর রহমান আরও বলেন, ‘আমাদের অপরাধ, আমরা কেন বললাম, সব ক্ষমতার মালিক একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। সার্বভৌমত্বের একমাত্র মালিক আল্লাহ। বিগত সরকার এই অপরাধে নির্বাচন কমিশন থেকে আমাদের নিবন্ধন কেড়ে নিয়েছে। তারা আল্লাহর সার্বভৌমত্ব মানে না। তারা নিজেদেরই সার্বভৌম মনে করেছিল। সার্বভৌম মানে সর্বময় ক্ষমতার মালিক। তো এত ক্ষমতার মালিক দেশ ছেড়ে পালালেন কেন? সেই ক্ষমতার দাপটে কেয়ামত পর্যন্ত টিকে থাকার চেষ্টা করতেন। আপনাদের পলায়ন, পরাজয়ী এটা প্রমাণ করেছে, সর্বময় ক্ষমতার একমাত্র মালিক আল্লাহ। ক্ষমতা ও ইজ্জত দেওয়ার মালিক তিনি, কেড়ে নেওয়ার মালিকও তিনি। যারা সম্মানিত মানুষকে অপমানিত করবে, আল্লাহ তাদের সম্মান ও রাজত্ব দুটোই কেড়ে নেন।’

জামায়াতের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে দলটির আমির বলেন, ‘সাড়ে ১৫ বছর খুন, গুম করে ওদের পিপাসা নিবারণ হয়নি। শেষ পর্যন্ত ২৪-এর পয়লা জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত এই সময়টায় তারা সারা দেশে মহাতাণ্ডব চালিয়েছে। কী চেয়েছিল আমাদের কলিজার টুকরা সন্তানেরা। কী এমন ছিল তাদের দাবি। তারা গদি ধরে টান দেননি। তারা বলেছিল, কোটা রাখেন, তবে যুক্তিসংগত সংস্কার করে। সহ্য হলো না মুগর বাহিনীকে ঢুকিয়ে দিল। এরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে ছেলেদের তো পেটালোই, কলিজার টুকরা মেয়েদেরও পেটানো হলো। ফায়ার ওপেন করল। গুলি করা হলো। এরা যেন মানুষ নয়। পশু শিকার গোশত খাবে, এমন মনমানসিকতা। কতজন আদম সন্তানকে দুনিয়া ছাড়া করেছে, কেউ হিসাব দিতে পারবে না। আমরা যেখানেই শহীদের খবর পেয়েছি, ছুটে গিয়েছি। কিন্তু সবার কাছে যেতে পারিনি। কারণ, সবার খোঁজ পাওয়া যায়নি। যাঁরা রক্ত দিয়ে আজকের এই পরিবেশ দিয়ে গেছেন, তাঁদের কাছে আমরা সারা জাতি ঋণী ও কৃতজ্ঞ।’

শহীদদের কোনো দলীয় পরিচয় নয় উল্লেখ করে শফিকুর রহমান বলেন, ‘সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেন, আপনাদের দলের কয়জন শহীদ হয়েছেন? আমি বলেছি, যাঁরা শহীদ হয়েছেন, আমরা তাঁদের দলের মানুষ। যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁরা সবাই আমাদের দলের মানুষ। জামায়াতে ইসলামী হিসেবে আমাদের দল নয়, মানবজাতি হিসেবে আমাদের দল। তাঁদের কোনো দলীয় পরিচয়ে আমরা সংকীর্ণ পরিসরে নামাতে চাই না। তাঁরা আমাদের জাতীয় সম্পদ, জাতীয় বীর। তাঁদের মাথার ওপর শ্রদ্ধায় তুলে রাখতে চাই।’

এর আগে সকাল ৯টার পর মাদ্রাসা মাঠে কর্মী সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজশাহীর শহীদ সাকিব আনজুমের বাবা সাইদুল হক।

দীর্ঘ ১৫ বছর পর রাজশাহীতে বড় পরিসরে জামায়াতের এ কর্মী সম্মেলন হচ্ছে। সকাল থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জামায়াতের নেতা-কর্মীরা সম্মেলনস্থলে আসেন। এতে সভাপতিত্ব করেন মহানগর জামায়াতের আমির মো. কেরামত আলী। সঞ্চালনা করেন মহানগরের সেক্রেটারি মো. এমাজ উদ্দিন মণ্ডল।

কর্মী সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মো. সাহাবুদ্দিন, মো. মোবারক হোসাইন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।

কর্মী সম্মেলনের পর আজ দুপুরে চিকিৎসক সমাবেশ এবং বেলা তিনটায় মহিলা সদস্য সমাবেশ হবে। মাগরিবের নামাজের পর ব্যবসায়ীদের নিয়ে রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ভবনে একটি সমাবেশ করবে দলটি।