নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মোল্যা রেজাউল করিম। দুর্নীতির বরপুত্র এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলো তদন্ত শুরু করছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।
সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযান চালিয়েছে চট্টগ্রামে এই কর্মকর্তার দফতরে৷ তদন্তে দুর্নীতির প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে বলে জানায় দুদক। অথচ এসব তদন্ত কার্যক্রমকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে এবার বন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের অর্জন নিজের অর্জন বলে প্রচার করার অভিযোগ উঠেছে মোল্যা রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে৷
শুধু তাই নয়। চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাবেক বন সংরক্ষকদের আমলের অর্জনগুলো তার নিজের অর্জন বলে দেধারছে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন মোল্যা রেজাউল। এতে ক্ষোভ তৈরী হয়েছে চট্টগ্রাম অঞ্চলে বন বিভাগের কর্মরতদের মাঝে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম অঞ্চলে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারিরা জানান, বনভূমি উদ্ধার অভিযানের কৃতিত্ব অভিযানে অংশগ্রহণকারী সহকারি বন সংরক্ষক, রেঞ্জ কর্মকর্তা, ফরেস্টারসহ বিভিন্ন পদে কর্মরত কর্মচারিদের৷ বিভাগীয় বন কর্মকর্তারা সাধারনত অভিযানে উপস্থিত থাকেন না। তবে প্রতিটি অভিযান বিভাগীয় বন কর্মকর্তার নির্দেশে পরিচালিত হয়ে থাকে৷
এসব উচ্ছেদ অভিযানে অনেক সময় ভূমিদস্যুদের হামলায় আহত, রক্তাক্ত হয় অভিযানে অংশগ্রহণকারীরা৷ নিহতের ঘটনাও ঘটে৷ যেখানে সফল অভিযানের কৃতিত্ব কখনো বিভাগীয় বন কর্মকর্তারা নেন না, সেখানে বিভাগীয় বন কর্মকর্তাদের ডিঙ্গিয়ে উচ্চ পদস্থ কোন কর্মকর্তা এসব অর্জন নিজের বলে জাহির করা মানে নিচু মানসিকতার পরিচয়৷ এতে মাঠ পর্যায় বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় কঠোর পরিশ্রম করা, জীবনের ঝুঁকি নেয়া কর্মকর্তা-কর্মচারিরা কাজের আগ্রহ হারায় ৷ প্রাপ্য সম্মান থেকেও বঞ্চিত হয়।
তারা আরো জানান, বন বিভাগের সাত জন কর্মকর্তার যোগসাজসে চট্টগ্রাম অঞ্চলে একটি সিন্ডিকেট গড়ে ওঠেছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলের নিম্ন পদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারিদের কোণঠাসা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে মোল্লা সিন্ডিকেট। এতে মাঠ পর্যায় চেইন অব কমান্ড বলতে কিছু নেই। সৃষ্টি হয়েছে অস্থিতিশীল পরিবেশ। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা।
অনুসন্ধান বলছে, বন উপদেষ্টার নির্দেশনায় গত বছরের ২৬ আগস্ট থেকে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষকের উপস্থিতিতে একটি উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে পতিত আওয়ামীলীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী হাসান মাহমুদ ও তার ভাই এরশাদের দখলে থাকা গয়াল ফার্ম, বিনোদন পার্কসহ ২১২ একর বনভূমির মধ্যে থেকে ১০৫ একর বনভূমি উদ্ধার করা হয়।
অথচ মোল্যা রেজাউল করিম গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক পদে যোগদান করেও ওই উচ্ছেদ অভিযানটি তার বলে প্রচার করছেন। তিনি যোগদানের পর চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৭ হাজার একর বনভূমি উদ্ধার হয়েছে বলেও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। অথচ সম্প্রতি কক্সবাজার সফরে গিয়ে বন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, ‘কক্সবাজারে ৭’শ একর বন, ১৫৫ একর বন নিয়ে একজন ব্যক্তির নামে বিল্ডিং হচ্ছে, ২০ একরে ফুটবল ট্রেনিং সেন্টার হওয়ার কথা ছিলো। কক্সবাজার থেকে ১২ হাজার একর বনভূমি তথাকথিত উন্নয়ন থেকে ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহার থেকে বন বিভাগকে ফিরিয়ে দেয়া হবে। এই প্রক্রিয়াটি চুড়ান্ত করা হয়েছে।’
এসব ব্যাপারে জানতে চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক মোল্যা রেজাউল করিমের মুঠোফোনে কল করলে তিনি রিসিভ করেননি
আরও পড়ুন
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর গঠন
নিরীহ লোককে মামলা দিয়ে হয়রানি করা যাবে না: আইজিপি
রোহিঙ্গাদের জন্য সাড়ে তিন মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিল জাপান