নিজস্ব প্রতিবেদক:
সুরা নাসর কোরআনের ১১০তম সুরা। মদিনায় অবতীর্ণ এ সুরাটির আয়াত সংখ্যা ৩টি। সুরা নাসরের অপর নাম সুরা ‘তাওদী’ বা বিদায়ী সুরা। কারণ সুরাটিতে নবিজির (সা.) মৃত্যু নিকটবর্তী হওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, যখন সুরা নাসর নাজিল হলো, তখন আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফাতেমাকে (রা.) ডেকে বললেন, আমাকে আমার মৃত্যুর কথা জানানো হয়েছে। এ কথা শুনে ফাতেমা (রা.) কাঁদতে লাগলেন। তখন আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে বললেন, কেঁদো না, আমার পরিবারের মধ্যে তুমি সবার আগে আমার সাথে মিলিত হবে। এ কথা শুনে তিনি হাসলেন।
আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কয়েকজন স্ত্রী এ ঘটনা দেখে বললেন, হে ফাতেমা, একবার তোমাকে আমরা কাঁদতে দেখলাম, এরপরই আবার হাসতে দেখলাম, ব্যাপারটা কী? তখন ফাতেমা (রা.) বললেন, রাসুল (সা.) আমাকে বললেন যে, তাকে তার মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছে, তা শুনে আমি কেঁদেছিলাম। এরপর তিনি আমাকে বললেন, কেঁদো না, আমার পরিবারের মধ্য থেকে তুমিই সর্বপ্রথম আমার সাথে মিলিত হবে। তখন আমি হাসলাম।
আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরও বলেছেন, আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় এসে গেছে। আর ইয়েমেনবাসীরাও এসে গেছে। তখন একজন লোক বলল, হে আল্লাহর রাসুল! ইয়েমেনের অধিবাসী কারা? তিনি বললেন, তারা হলো নরম হৃদয়ের অধিকারী। ইয়েমেনেই রয়েছে ইমান আর ইয়েমেনীদের জন্যই রয়েছে হিকমাহ বা প্রজ্ঞা। (সুনানে দারেমী: ৮০)
আরেকটি বর্ণনায় ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ওমর (রা.) আমাকে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের সাহাবিগণের সাথে তার কাছে প্রবেশাধিকার দিয়েছিলেন। (আমার বয়স অল্প হওয়ায়) তারা এটাকে মনে-প্ৰাণে মেনে নিতে পারছিলেন না। তারা বলেই ফেললেন, এই ছেলে আবার আমাদের সাথে কেন? আমাদের তো তার সমবয়সী সন্তান-সন্ততি আছে। ওমর (রা.) বললেন, তোমরা তো জান সে কোত্থেকে এসেছে। তারপর একদিন তিনি তাদের মজলিসে তাকে ডেকে পাঠালেন। আমি বুঝতে পারলাম যে, তিনি আমাকে তাদের মাঝে ডেকে আমাকে তাদের সাথে রাখার ব্যাপারটি স্পষ্ট করতে চাচ্ছেন।
ওমর (রা.) বললেন, তোমরা মহান আল্লাহর বাণী, ‘ইযা জাআ নাসরুল্লাহি ওয়াল ফাতহ’ অর্থাৎ যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় এলো, এর ব্যাখ্যা সম্পর্কে কী বল? তাদের কেউ বলল, আমাদের বিজয় লাভ হলে যেন আমরা আল্লাহর প্রশংসা ও তাঁর কাছে ক্ষমা চাই তা-ই বলা হয়েছে। আবার তাদের অনেকেই কিছু না বলে চুপ ছিল।
তখন তিনি আমাকে বললেন, ইবনে আব্বাস! তুমি কি তাই বলো? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তাহলে কী বল? আমি বললাম, এটা তো রাসুলের মৃত্যুর সংবাদ, যা তাকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় এসে যাবে’ আর এটাই হবে আপনার জীবন শেষ হয়ে যাওয়ার আলামত, সুতরাং আপনি আপনার রবের সপ্ৰশংস তাসবিহ পাঠ করুন এবং তাঁর কাছে ক্ষমা চান; কেননা তিনিই তো তওবা কবুলকারী।
ওমর (রা.)দিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তুমি যা বললে এ সুরা সম্পর্কে আমিও তাই জানি। (সহিহ বুখারি: ৪৯৭০)
(১)
اِذَا جَآءَ نَصۡرُ اللّٰہِ وَالۡفَتۡحُ
ইযা-জাআ নাসরুল্লা-হি ওয়াল ফাতহ।
যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়
(২)
وَرَاَیۡتَ النَّاسَ یَدۡخُلُوۡنَ فِیۡ دِیۡنِ اللّٰہِ اَفۡوَاجًا
ওয়ারাআইতান্না-ছা ইয়াদখুলূনা ফী দীনিল্লা-হি আফওয়া-জা-।
এবং তুমি মানুষকে দলে দলে আল্লাহ্ র দীনে প্রবেশ করতে দেখবে
(৩)
فَسَبِّحۡ بِحَمۡدِ رَبِّکَ وَاسۡتَغۡفِرۡہُ اِنَّہٗ کَانَ تَوَّابًا
ফাছাব্বিহবিহামদি রাব্বিকা ওয়াছতাগফিরহু ইন্নাহূকা-না তাওওয়া-বা-।
তখন আপনি আপনার পালনকর্তার পবিত্রতা বর্ণনা করুন এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাকারী।
সুরা নাসরই কোরআনের অবতীর্ণ সর্বশেষ সুরা। এরপর এক/দুটি আয়াত অবতীর্ণ হলেও কোনো সম্পূর্ণ সুরা অবতীর্ণ হয়নি।
এ সুরায় আল্লাহর তিনটি নির্দেশ অর্থাৎ আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা, প্রশংসা ও আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা এভাবে করা যায়,
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي
সুবাহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা আল্লাহুম্মা-গফিরলী
হে আল্লাহ, আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি, আপনার প্রশংসা করছি। হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করে দিন!
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, এই সূরা নাজিল হওয়ার পর আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রত্যেক নামাজের পর এই দোয়া পাঠ করতেন (সহিহ বুখারি: ৭৯৪)
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় মরদেহ পোড়ানোর মামলায় কনস্টেবল মুকুল কারাগারে
শীতে শিশুদের সুস্থ রাখবে যেসব খাবার
দীর্ঘদিন পর ফেরা তারকারা