June 23, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, June 23rd, 2025, 5:25 pm

যে ১১ কারণে নূরুল হুদাকে রিমান্ডে নিতে চায় পুলিশ

 

প্রহসনের নির্বাচনের অভিযোগে করা মামলায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেছে পুলিশ। সোমবার (২৩ জুন) শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক শামসুজ্জোহা সরকার এ আবেদন করেন। এ বিষয়ে দুপুর দুইটার পর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

আসামি কে এম নুরুল হুদাকে রিমান্ডে নেওয়ার কারণ হিসেবে ১১টি বিষয় উল্লেখ করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক শামসুজ্জোহা সরকার। সেসব কারণগুলো নিম্নরূপ:
এক. গ্রেফতারকৃত আসামি ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালে বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন। কিন্তু তিনি উক্ত নির্বাচন সুষ্ঠভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক সম্পন্ন করতে পারেন নাই এবং দেশকে গভীর সংকটের মধ্যে নিমজ্জিত করেছেন।

দুই. প্রশাসনকে একটি পক্ষে ব্যবহার করেছে। যাতে করে সংবিধান অমান্য করেছেন এবং শপথ ঠিক রাখতে পারেন নাই।

তিন. দণ্ডবিধি আইনের ১৭১ (ক) ধারার সংজ্ঞা মতে নির্বাচনের ছদ্মবেশ ধারণ করে দিনের ভোট রাতে সম্পাদন করার নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানকে বাধা করে নির্বাচন সম্পন্ন করেছেন। সে নির্বাচন কমিশনের প্রধান ব্যক্তি ছিলেন। তিনি অন্যান্য কমিশনার এবং বিভাগীয় ও জেলা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন।

চার. ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সরকারি আদেশ, সাংবিধানিক ক্ষমতা হ্রাস, দেশের জনগণের ভোটাধিকার লঙ্ঘন করেছে। তরুণ সমাজের ভোটে বিমুখ, ভারমূর্তি নষ্ট করেছে।

পাঁচ. গ্রেফতারকৃত আসামি ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার থাকা অবস্থায় কার পরামর্শে ও সহযোগিতায় ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিতদের দ্বারা দিনের ভোট রাতে সম্পন্ন করে মিথ্যা বিবৃতির মাধ্যমে একটি দলকে বিজয়ী ঘোষণা করেছে এবং মিথ্যা গেজেট প্রকাশ ও বাস্তবায়ন করে।

ছয়. গ্রেফতারকৃত আসামি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসাবে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একটি দলকে বিজয়ী ঘোষণা করার লক্ষ্যে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে প্রহসনমূলক নির্বাচন ব্যবস্থা গ্রহণ করে কত টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছে তা উদঘাটন করা। যাতে করে কোটি কোটি নতুন প্রজন্মের ভোটারগণ ভোট দিতে পারেনি। তাতে দেশে স্বৈরাচারীর বীজ বপন করা হয়েছিল।

সাত. নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন ও সংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হওয়া স্বত্ত্বেও গ্রেফতারকৃত আসামি সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ কে. এম. নূরুল হুদা কার ইন্ধনে ও কী স্বার্থে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্পূর্ণভাবে জনগণকে তাদের ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে।

আট. গ্রেফতারকৃত আসামি ফ্যাসিবাদের মূল নায়ক। তার কাছ থেকে পাতানো নির্বাচনের কৌশল ও জড়িতদের উদঘাটন করা দরকার।

নয়. গ্রেফতারকৃত আসামি কোন কোন সংসদ আমলে কার কার কাছ হতে কত টাকা ঘুষ গ্রহণ করে ফলাফল পরিবর্তন করে গেজেটে সাজানো ভোটের ফলাফল প্রকাশ করেছেন তার তথ্য উদঘাটন করা দরকার।

দশ. এজাহারনামীয় পলাতক ও অজ্ঞাতনামা আসামিদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ ও গ্রেফতার।

এগারো. মামলার মূল রহস্য উদঘাটন করা।

গতকাল রবিবার (২২ জুন) সন্ধ্যার দিকে রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে নুরুল হুদাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদিন স্থানীয় জনগণ তাকে আটক করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, লুঙ্গি পরিহিত নুরুল হুদাকে আটক করে জুতার মালা পরিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা।

এর আগে রোববার সকালে শেরেবাংলা নগর থানায় দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পরিচালনাকারী কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, কে এম নুরুল হুদা ও কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করে বিএনপি। দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। মামলায় সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ২৪ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়।