July 5, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Saturday, July 5th, 2025, 7:53 pm

যৌন নির্যাতনের কারণে নিখোঁজের ২১ দিন পর কিশোরী রিতু পিবিআই হেফাজতে

রংপুর ব্যুরো:
রংপুরের সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র (বালিকা) থেকে নিখোঁজের ২১ দিন পর কিশোরী রিতু আদালত চত্বরে আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীদের শরণাপন্ন হন। পরে তাকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (পিবিআই)-এর কাছে হস্তান্তর করা হয়।

রিতু আদালতে জানান, পুনর্বাসন কেন্দ্রে তার উপর শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন চালানো হয়েছে। নির্যাতনের ভয়ে তিনি অন্য তিন কিশোরী—স্মৃতি, কৃতি ও আশার সঙ্গে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় রংপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা (মিস কেস নং-২/২৫) গ্রহণ করেছে এবং পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য ২৯ জুলাই তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।

কেন্দ্রের ভিতরের ভয়াবহতা সম্পর্কে রিতু গণমাধ্যমকে জানান, সমাজসেবা কার্যালয় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের সহায়তায় প্রতি সপ্তাহে বিভিন্ন পুরুষ কেন্দ্রে প্রবেশ করে এবং বিভিন্ন মেয়েকে ধর্ষণ করে। রিতু জানান, ১৫ জুন তাকে ধর্ষণের শিকার হতে হতো, কিন্তু সুযোগ বুঝে তিনি পালিয়ে যান।

রিতুর ভাষ্যমতে, নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মেয়েরা পালিয়ে গেলেও পুনর্বাসন কেন্দ্রের কর্মকর্তারা তাদের খুঁজে বের করে ফের নির্যাতনের চেষ্টা করে। এমনকি গণমাধ্যমে বক্তব্য দেয়ায় কিশোরী স্মৃতির চুল কেটে তাকে অপমান করা হয়।

অন্যদিকে  ২৯ জুন আদালত গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে রংপুর পুনর্বাসন কেন্দ্রে কিশোরীদের উপর নির্যাতনের ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দেয়। আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, কেন্দ্র থেকে পালানো ৪ কিশোরীর ঘটনাপ্রবাহ জনস্বার্থে অনুসন্ধান করা প্রয়োজন।

পিবিআই রংপুরের পরিদর্শক মিন্টু চন্দ্র বণিক জানান, চারজন নিখোঁজ কিশোরীর মধ্যে তিনজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। রিতুকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্ত করা হচ্ছে এবং আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী জোবাইদুল ইসলাম বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনস্থ এই কেন্দ্রে দীর্ঘদিন ধরে অনাথ ও অভিভাবকহীন মেয়েদের উপর ভয়াবহ নির্যাতন চলেছে। কেউ মারা গেলে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে, কোনও ময়নাতদন্ত হয়নি।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ পাবে এবং যেই হোক, যতো বড় কর্মকর্তা হোক, দোষী প্রমাণিত হলে আইনের আওতায় আনা হবে।

প্রসঙ্গত, ১২ জুন রাতে দেওডোবা ডাংগীর পাড় এলাকার পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে নিখোঁজ হন কিশোরী নিতু, স্মৃতি, কৃতি ও আশা। ১৫ জুন স্মৃতি ও কৃতিকে উদ্ধার করে পুনরায় কেন্দ্রে পাঠানো হলে তাদের পরিবার তীব্র আপত্তি জানায়। পরে আদালতের নির্দেশে স্মৃতি তার পরিবারের জিম্মায় যায়। এখনো কিশোরী আশা নিখোঁজ রয়েছে।

এই ঘটনায় দেশের মানবাধিকার ও শিশু সুরক্ষা সংগঠনগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছে।