April 28, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, April 28th, 2025, 4:38 pm

রংপুরে ইটভাটার বিষাক্ত ধোয়ায় পুড়লো কৃষকের সোনালী স্বপ্ন: ঝলসে গেছে ২৬ একর জমি ধান খেত

আব্দুর রহমান মিন্টু, রংপুর ব্যুরো : রংপুরের পীরগাছায় ওপীরগজ্ঞে ইটভাটার বিষাক্ত ধোয়া পুড়ে চিটা হয়ে গেছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন। ঝলসে গেছে ২৬ একর জমি ধান খেত ।পীরগাছায় এমএসবি ব্রিকস নামের একটি ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ৩০ জন কৃষকের প্রায় ১৭ একর জমির ধানের ক্ষেত ঝলছে গেছে। সদ্য বের হওয়া ধানের শীষগুলো ঝলসে চিটা হয়ে গেছে এবং অন্য জমির ধান গাছগুলো জ¦লে গিয়ে কালো হয়ে শুকিয়ে গেছে। এতে করে ধানের জমির আইলে বসে বিলাপ করছেন কৃষক বাদশা মিয়া। কেউ বা বাকি ধানগুলো রক্ষার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে রংপুর জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

রংপুরের পীরগাছা উপজেলার অন্নদানগর ইউনিয়নের বামন সর্দার গ্রামের এমএসবি ব্রিকস নামের ইটভাটার উত্তর পাশের জমিগুলোতে ঝলসে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে করে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন ওই এলাকার কৃষকরা। এছাড়াও ইটভাটার কারণে গত ৫ বছর ধরে ওই এলাকার গাছপালায় কোন ফল ধরছে না বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা।
গতকাল দুপুরে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কিছু কিছু ধানের ক্ষেত সোনালী রং ধারন করেছে।

দূর থেকে দেখে মনে হবে যেন পাকা ধানের ক্ষেত। অথচ কাছে গেলেই দেখা যায়, সব ঝলছে চিটায় পরিনত হয়েছে। যে জমিগুলোর ধান এখনো বের হয়নি সেগুলোও পুড়ে বিবর্ন রুপ ধারন করেছে। ধানের ক্ষেতের মাঝখানে এসময় কেঁদে কেঁদে আল্লাহর কাছে বিচার দিচ্ছেন কৃষক বাদশা মিয়া (৫৫)। তার বক্তব্য, গত তিন বছর ধরে ঘরের ধানের ভাত খেতে পারেন না। ইটভাটার বিষাক্ত ধোয়ায় সব শেষ হয়ে গেছে। ধানের শীষ বের হলেই ইটভাটা মালিক ষড়যন্ত্র মূলক ভাবে তাদের ক্ষতি করছে। এত যতেœ করা ফসল নষ্ট হওয়ায় তারা এখন দিশেহারা। এ বছর কি খাবেন, কিভাবে চলবেন সেই চিন্তায় গোটা পরিবার। এসময় একে একে আসতে থাকেন ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিকরা। কৃষক মদন, সুরেশ চন্দ্র, দ্বীননাথ, নিখিল চন্দ্র, ইউসুফ আলী, রওশন, সিদ্ধার্থ, রঞ্জিত, সুশান্ত, আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা ক্ষতিপূরণ চাই না। আমরা এর স্থায়ী সমাধান চাই। প্রতিবছর ধান পুড়ে যাবে, আর তারা ক্ষতিপূরনের আশ্বাস দিয়ে পার পেয়ে যাবে। এসব জমির অধিকাংশ মালিক হিন্দু ধর্মের। তাই ভাটা মালিক বিএনপি দলীয় প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় তার লোকজন কৃষকদের হুমকি-ধামকি দিচ্ছে।

তারা আরও অভিযোগ করে বলেন, তারা যেন এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করেন সেজন্য ইটভাটার মন্টু নামের একজন তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকী দিচ্ছেন। এ বিষয়ে ইটভাটা পক্ষের অভিযুক্ত শহিদুল ইসলাম মন্টু হুমকী-ধামকী প্রদানের বিষয়টি অস্বীকার করেন। তবে ইটভাটা ম্যানেজার মোনা চন্দ্র বর্মন বলেন, আমরা কাউকে হুমকি-ধামকি দেইনি। ভাটা মালিককে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তিনি এটা সমাধনের চেষ্টা করছেন।

ভাটা মালিক মমিনুল ইসলাম বলেন, আমি বিএনপি করি এটা কোন বিষয় না। আমার ভাটার কারণে ক্ষতি হয়ে থাকলে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। এ ব্যাপারে ওই ব্লকের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো: আহসানুল হক বলেন, একেবারে পুড়ে যাওয়া জমিগুলো ধান হওয়ার সম্ভাবনা নেই। যেগুলো কম পুড়েছে সেগুলোতেও চিটা ধান বের হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, আপাতত ইটভাটার কারণে জমিগুলোর এ অবস্থা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তারপরও আমরা সরেজমিনে তদন্ত করে কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুর জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (অফিস প্রধান) কমল কুমার বর্মন বলেন, তারা অভিযোগ পেলে সরেজমিনে তদন্ত করে ওই ভাটার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।

পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজমুল হক সুমন বলেন, আইন অনুযায়ী ইটভাটা বন্ধ থাকার কথা। কিভাবে চালু আছে তা খতিয়ে দেখা হবে। কৃষকদের ক্ষতির বিষয়ে আদালতের শরনাপন্ন হওয়ার সুযোগ আছে। এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের মাধ্যমে খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ।

এদিকে রংপুর পীরগঞ্জে বিষাক্ত ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় ৮০ জন কৃষকের ৯ হেক্টর উঠতি বোরো ফসলের জমি পুড়ে গেছে । বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সাদেকুজজামান সরকার। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার কুমেদপুর ইউনিয়নের ৩০০ মিটার পর পর মোয়াজ্জেম হোসেন,ফারুক মন্ডল এবং আব্দুস সালামের ৩ টি ইটভাটা । আব্দুস সালামের ইটভাটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হয়ে শিবপুর গ্রামের জোনাব আলীর পুত্র মাহবুব মিয়ার ৪৫ শতক, মিটার পাড়া গ্রামের মৃত সমেস উদ্দিনের পুত্র আঃ গফুর মিয়ার ৫৪ শতক, বাজে শিবপুর গ্রামের কোব্বাছ আলীর পুত্র বুলু মিয়ার ২৭ শতক, একই গ্রামের মজিবর রহমানের পুত্র রুবেল মিয়ার ৪৫ শতক, কাঞ্চনপুর গ্রামের আব্দুর রশিদের পুত্র সিয়াম মিয়ার ২১ শতক সহ প্রায় তিনটি গ্রামের প্রায় ৪০ জন কৃষকের ৩৬ বিঘা জমির আধা পাকা ধান ঝলসে গেছে । ভুক্তভোগী কৃষকেরা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করলে, কৃষি অফিসার পরিদর্শন করে মাঠ পর্যায়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা তপন কুমার এবং আশরাফুল আলমকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা তৈরির নির্দেশ প্রদান করেন । এ বিষয়ে ইটভাটা মালিক আ.লীগের দোসর মোয়াজ্জেম হোসেন বিষযটি এডিযে যান । আরো জানা যায় ভুক্তভোগী কৃষকগণ ইটভাটা মালিকের নিকট ক্ষতিপূরণ চাইলে তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধামকী প্রদান করে । এবংভুক্তভোগী কৃষকগণ ক্ষতিপূরণ চাইলে ভাটা মালিকগণ দিচ্ছে দিবে বলে কালকে ফোন করছেন।