আব্দুর রহমান মিন্টু, রংপুর : অনাবাদি, পতিত জমি এবং বসতবাড়ির আঙ্গিনায় পারিবারিক পুষ্টিবাগান স্থাপন (ইফনাপ) প্রকল্পের আওতায় এবং নিজ উদ্যোগে আরও সম্প্রসারণ করে।রংপুরের গঙ্গাচড়ায় কমিউনিটি বেইজড ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন করে সাফল্য এনেছে শামীম মিয়া। স্বল্প পরিশ্রমে শিক্ষিত এ যুবকের মাসিক আয় হচ্ছে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। তা দিয়ে সাচ্ছন্দে পরিবার নিয়ে সুখে দিন কাটছে শামীমের। মো. শামীম মিঞা (৩৮) গঙ্গাচড়া থানা পাড়ার মো. মকবুল হোসেনের পুত্র। এইচএসসি পাশ করার পর জীবন জীবিকার তাগিদে সৌদি আরব যান। সৌদি আরবে কয়েক বছর কাজ করার পর করোনা কালীন সময়ে বাড়িতে চলে আসেন। মহামারী করোনা কেটে গেলেও আর সৌদি আরবে না যেয়ে নিজে আয়ের পথ খুঁজেন। উপজেলার কৃষি, প্রাণী সম্পদ, সমাজসেবা, সমবায়, যুব উন্নয়ন দপ্তরে যোগাযোগ করেন এবং পরামর্শ চান কিভাবে তিনি আয়মুলক কাজ করবেন। প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা তাকে গরু পালনে পরামর্শ দেয়। শামীম সে পরামর্শে ১ টি গাভী কিনেন। তাকে কিছুদিন পালন করার পর সে গাভী বাচ্চা দেয়। কিন্তু শামীম ভাব ছিলেন গাভী পালন করে লাভ করা দীর্ঘ মেয়াদী ও আগে টাকা খরচ করতে হয়। অন্য কোন আয়ের পথ না থাকায় এ খরচ করার মত তার খুব কষ্ট হত। শামীম উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করেন। কৃষি অফিসার তাকে গরুর গোবর থেকে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনের পরামর্শ দেয় এবং ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনে সহযোগিতা করবে বলে জানায়। শামীম উপজেলা কৃষি অফিসারের পরামর্শে নিজে কয়েকটি রিং কিনে কেঁচো সংগ্রহ করে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন শুরু করেন এবং উপজেলা কৃষি অফিসারকে অবগত করেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার তার ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন স্থান পরিদর্শন করেন এবং তাকে সহযোগীতা করার জন্য সেখানে কৃষক গ্রুপ করার উদ্যোগ গ্রহন করেন। “অনাবাদি পতিত জমি ও বসত বাড়ির আঙ্গিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন (১ম সংশোধিত) প্রকল্পের আওতায় গঙ্গাচড়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ৩০ জন কৃষক নিয়ে গঙ্গাচড়া থানা কৃষক গ্রুপের কার্যক্রম শুরু করে। এই কৃষক গ্রুপের মাধ্যমে উপজেলা কৃষি অফিস শামীমকে ২০২৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারী ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনে কমিউনিটি বেইজড প্রদর্শনী দেয়।স্থাপন করে দেয় ভার্মি কম্পোস্ট পিট, ১০টি রিং ও ৪টি হাব। এছাড়া দেওয়া হয় ১টি মেকানিকাল সেপারেশন মেশিন। শামীম মিঞা উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগীতা, পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা পেয়ে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনের কাজ পুরোদমে শুরু করেন। এদিকে শামীম ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনের জন্য আরো দুটি ছোট গরু কিনেন। নিজের তৈরি করা ১৮ রিংসহ প্রদর্শনীর ১০টি রং ও ৪টি বড় হাবে নিজের গরুর গোবর থেকে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন শুরু করেন। মাত্র ৪০/৪১ দিনের মধ্যে রিং থেকে উত্তোলন করে সেপারেশন মেশিন দিয়ে কেঁচো ও ভার্মি কম্পোস্ট পৃথক করেন। এই উৎপাদনকৃত ভামি কম্পোস্ট প্রতি কেজি ১৫/১৬ টাকা দরে বিক্রি করেন। এছাড়া কেঁচোও বৃদ্ধি হয় তা দেড় হাজারেও বেশী টাকা দরে প্রতি কেজি বিক্রি করেন। শুরুতে শামীম কম ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন করলেও এখন তার উৎপাদন হচ্ছে ৯’শ থেকে ১ হাজার কেজি, আর কেঁচো ১০/১২ কেজি। এছাড়াও ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনে প্রয়োজনের বাহিরে অতিরিক্ত গরুর গোবর বিক্রি করেন। শামীম মিঞা জানান, বিদেশের আয় থেকে সংসারের খরচ যেয়ে সামান্য টাকা জমা হয়েছিলো। বাড়িতে এসে সে জমানো টাকা বসে খেয়ে অনেকটা হতাশায় পড়ে ছিলাম। উপায় না পেয়ে সরকারি বিভিন্ন অফিসে যোগাযোগ করি। এখন আমার সে হতাশার দিন কেটে দিয়েছে উপজেলা কৃষি অফিস। আমার ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনে তেমন খরচ হয়না।
রিংয়ে গোবর দিতে ও তুলতে ১টি করে দুটি লেবার খরচ, বিদ্যুৎ বিল এবং গরুর খাবার সব মিলে ৫/হাজার টাকা খরচ হয়। বর্তমানে ১১টা গরু ও ১৫ ছাগল আছে। গোবর রিংয়ে দেওয়ার পর উত্তোলন না করা পর্যন্ত আর সেখানে তেমন কোন কাজ নেই। এ সময় গুলো আমি দিনে দু-তিন বার গরু-ছাগলের দেখা শুনা করি। বাকী সময় নিজের মত করে কাটাই। তবে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনের আগে এটা বিক্রির জন্য বিভিন্ন জনের সাথে যোগাযোগ করতে হয়। সবজির বাগান, ফল ও ফুলের বাগান, নার্সারীসহ কৃষককে জানালে তারা ক্রয় করে নিয়ে যায়। সার বিক্রিতে কৃষি বিভাগ সহযোগীতা করে থাকে। এ সারের গুনাগুন সব সার থেকে ভাল হওয়ায় এর চাহিদা বাড়ছে। শামীম বলেন, বিদেশে থেকে যে আয় করতাম তার চেয়ে আমার বাড়িতে বসে বেশী আয় নিজে করছি। আর গরুকে স্বাভাবিক খামার দেই। কারণ গরু মোটাতাজা করণ আমার কাজ নয়, গোবর নেওয়ার জন্য পালন করি। ছোট থেকে গরু বড় হলে সেটা বিক্রি করে আবার ছোট কিনি। এতে যেটা লাভ হয় সে টাকা গরুর খাবারের খরচ উঠে আসে। এর সাথে ছাগল পালনে বাড়তি লাভ আসে। সবমিলিয়ে মাসে আমার ২০ হাজার টাকারও বেশী আয় হয় যা দিয়ে সাছন্দে পরিবারের সবাইকে নিয়ে দিন কাটছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ শাহিনুর ইসলাম বলেন, জৈব সার হলো মাটির প্রাণ। তাই ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য জৈব সার অত্যাবশ্যকীয়। মাটিতে জৈব উপাদান বৃদ্ধির জন্য গংগাচড়া থানাপাড়া কৃষক গ্রুপের সদস্য মোঃ শামীম মিয়ার সাফল্য অন্যান্য কৃষকের জন্য অনুকরণীয় হয়ে দাঁড়িযেছে। সাধারণ কৃষকরা তার কাছ থেকে জৈব সার ক্রয় করে জমিতে প্রয়োগ করছে এবং নিজেরাই জৈবসার উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। কৃষি বিভাগ থেকে সার্বক্ষণিক জৈব সারের উৎপাদনের কলা কৌশল সম্পর্কে মাঠপর্যায়ে কারিগরি সেবা দিচ্ছে।
আরও পড়ুন
মোংলা বন্দরে জাহাজ থেকে চুরি করা মালামালসহ তিনজন আটক
এই অ্যাওয়ার্ড শুধু স্বীকৃতি নয়, সকলের জন্য অনুপ্রেরণা : উপাচার্য
কালীগঞ্জে বাণিজ্যিক ভাবে চাষ হচ্ছে ড্রাগন ফল