October 12, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, October 12th, 2025, 12:31 am

রংপুরে ভেজাল গুড় উৎপাদনের দায়ে ব্যবসায়ীকে ২ লাখ টাকা জরিমানা

রংপুর ব্যুরো:

রংপুর মহানগরীর দর্শনায় ভেজাল গুড় উৎপাদনের অভিযোগে মেসার্স ‘মা-বাবার দোয়া’ গুড় কারখানার মালিক নুর মোহাম্মদকে ২ লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেছে ভ্রাম্যমান আদালত।রংপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়।অভিযানে রংপুর জেলা কার্যালয় এবং পুলিশের একটি দল সহযোগিতা করে। এসময় কারখানায় বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক, ইন্ডাস্ট্রিয়াল কালার, পঁচা মিষ্টি ও নিম্নমানের উপাদান ব্যবহার করে গুড় উৎপাদনের প্রমাণ মেলে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম জানান, “মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উপায়ে অবৈধ পণ্য ব্যবহার করে গুড় প্রস্তুত করা হচ্ছিল। যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। সুতরাং অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ অনুসারে দুই লক্ষ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে তিন মাসের জেল দিয়েছি এবং কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ভেজাল ও নিম্নমানের খাদ্য উৎপাদনের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করে এমন কোনও প্রতিষ্ঠানকে ছাড় দেওয়া হবে না।”
এদিকে স্থানীয় এলাকাবাসী প্রশাসনের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে জানান,  দীর্ঘদিন ধরে এই কারখানায় ভেজাল গুড় তৈরি হচ্ছিল, যা বাজারে ছড়িয়ে পড়ছিল বিভিন্ন হাটবাজারে। আখের রসের পরিবর্তে ময়দা, চিনি, হাইড্রোজ, সোডা ও গো-খাদ্য চিটাগুড়, নালি ও চিনি দিয়ে নকল গুড় তৈরি করা হচ্ছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এই ভেজাল গুড়  তৈরি হচ্ছে সারা বছর। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রশাসনের  নজরেও রয়েছে অবৈধ এই গুড় তৈরি কারখানার যাবতীয় তথ্য।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দীর্ঘ কয়েক বছর থেকে রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার  খালাশপীরহাট সংলগ্ন ঠাকুদাস লক্ষিপুর (তেলি পাড়া)  গ্রামে এই কারবার চলছে। উক্ত গ্রামের মৃত নুরু মিয়ার ছেলে হাফিজার রহমান আখ মৌসুমের শুরু থেকেই গুড় তৈরির করেন। আখের আবাদ না থাকলেও তার কারখানায় বারোমাস  তৈরি করা হয় ভেজাল গুড়। মানবদেহের ক্ষতিকর বিভিন্ন উপকরণ মিশিয়ে চুল্লীতে আগুন দিয়ে কড়াইয়ে প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে গুড়। ২/ ৩ জন শ্রমিক গুড় তৈরি করে মাটির পাত্র বা মাটিচর মটকায় মজুদ করে রাখে। এরপর এলাকার চাহিদা মিটিয়েও আশপাশের এলাকায় তা সরবরাহ করা হয়।  অপরদিকে উপজেলার চতরাহাট এলাকায় যাদবপুর গ্রামের মৃত  ইসমাইল হোসেনের ছেলে মোনাজ্জল হোসেন ও একই পদ্ধতীতে আখের রস ছাড়াই গুড় তৈরি করছে দীর্ঘদিন থেকে। তিনিও নিয়মিত নির্বিঘ্নে ভেজাল গুড় তৈরি করে বিক্রি করছেন স্থানীয় বাজারে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রতি সপ্তাহে সোমবার এবং বৃহস্পতিবার দিনভর ভেজাল গুড় তৈরি করেন তিনি। গুড় তৈরির সময় বাড়ির গেট দিয়ে এ কাজ করা হয় মর্মে অভিযোগ রয়েছে।  কারখানায় যাতে বহিরাগত কেউ ঢুকতে না পারে এবং গুড়ের ঘ্রান যাতে কেউ না পায় সেজন্যই এ ব্যবস্থা। এ বিষয়ে অভিযোগ দিলেও প্রশাসনের লোকজন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলেও তারা অভিযোগ করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কারখানায় একজন  শ্রমিক জানান, খালাশপীর (তেলী পাড়া) কারখানায় নালি গুড়,চিটা গুড়, সুজি, ময়দা,পানি, চিনি এবং বিষাক্ত রং দিয়ে তৈরি করা হয় ভেজাল  গুড়। এই গুড় এলাকায় বিক্রি করা হয় না এমনকি আমরা নিজেরাও কেউ খাই না। আখ মৌসুমে এখানে আখের রস দিয়ে গুড় তৈরি করা হয়। মাঠে আখ না থাকলে বিকল্প পদ্ধতিতে গুড় তৈরি করা হয়। উপজেলা প্রশাসন এই কারখানার খোঁজখবরও নেয় না। উপজেলা স্যানেটারি ইন্সপেক্টর গোলাম মোস্তফা নাকি এখান থেকে মাসোযারা গ্রহন করেন নিয়মিত। স্থানীয় লোকজন বলছেন, প্রশাসনের কোন প্রকার তদারকি নেই কারখানাগুলোতে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ভেজাল গুড় তৈরির জন্য উপজেলা স্যানেটারি ইন্সপেডক্টর মুলত দায়ী।  কারখানায় নোংরা পরিবেশে খালি গায়ে হাতের ও শরীরের ঘাম নিয়ে গুড় তৈরি কাজে ব্যাস্ত থাকেন শ্রমিকেরা। এ ব্যাপারে কারখানার মালিকরা সাংবাদিকদের সাথে  কোন কথা বলতে রাজি হননি। বরং উল্টো প্রতিবেদক দেখে দ্রুত পালিয়ে যান।
উপজেলা স্যানেটারি পরিদর্শক গোলাম মোস্তফা বলেন, আমি গুড় তৈরির কারখানায় গিয়ে গুড় তৈরির কাজ বন্ধ করতে বলেছি। এরপরও যদি কেউ ভেজাল গুড় তৈরি করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।