আব্দুর রহমান মিন্টু, রংপুর :
রংপুরে ৪৪ হিমাগার । অধিকাংশ মালিকদের কারসাজি আর সিন্ডিকেটের কারণে আলুর দাম কমছে না। শত শত টন আলু হিমাগারগুলোতে মজুদ থাকলেও শক্ত সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছে না প্রশাসন। ফলে রংপুরে চাহিদার তুলনায় প্রায় ১৪ লাখ মেট্রিক টন আলু বেশি উৎপাদন হলেও ৬০ টাকার বেশি দরে কিনতে হচ্ছে রংপুরেই।
কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, রংপুর জেলায় গত মৌসুমে ৫৩ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছিল। আলু উৎপাদন হয়েছে ১৫ লাখ ৪২ হাজার মেট্রিক টন। সেখানে রংপুর জেলায় আলুর চাহিদা মাত্র এক লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন। অতিরিক্ত ১৪ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, এই ১৪ লাখ মেট্রিক টন আলু তাহলে গেল কোথায়?
রংপুরের ৪০টি হিমাগারের মধ্যে বেশ কয়েকটিতে গিয়ে দেখা গেছে, এখনো বিপুল পরিমাণ আলু হিমাগারে মজুদ আছে। হিমাগারে থাকা বেশির ভাগ আলুর মালিক বড় ব্যবসায়ী, তাদের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ ছাড়া পাইকারি ব্যবসায়ী ও আলুচাষিও রয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হিমাগারগুলোতে প্রতিদিন শত শত ব্যবসায়ী ভিড় করছেন, অনেকেই শুধু কাগজ বিক্রি করছেন। অর্থাৎ আলুর বস্তার সংখ্যা বিক্রি করছেন। শুধু হিমাগার মালিকই নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তন থেকে আসা ব্যবসায়ীরাও এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত।
সূত্রগুলো বলছে, আলু মৌসুমের শুরুতেই তাদের কেনা পড়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি। সেই আলু এখন বিক্রি করা হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৩ টাকা কেজি দরে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে আসা পাইকাররা বলছেন, হিমাগার থেকে ৬২ থেকে ৬৩ টাকা কেজি দরে আলু কিনছেন তারা।
ঢাকার কারওয়ান বাজার থেকে আসা আলুর পাইকার মাসুদ রানা জানান, আলুর দাম বৃদ্ধির মূল কারণ মাঠের ব্যবসায়ী না, সিন্ডিকেট। তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকা থেকে এসে আলু কিনতাছি ৬৩ টাকা কেজি। এই আলু ঢাকায় নিয়ে যেতে যেতে ৬৭ থেকে ৬৮ টাকা পড়বে। ঢাকার আড়তে নিয়ে বিক্রি করছেন ৭০ টাকা কেজি দরে। আর সেই আলু ভোক্তারা কিনছেন ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে। ফলে আলুর দাম কোনোভাবেই কমছে না।
ঢাকা থেকে আসা আলুর আরেক পাইকার আশিক আলী বলেন, রংপুরের ৪০টি হিমাগার রয়েছে, প্রতিটিতে বিপুল পরিমাণ আলু মজুদ আছে। কিন্তু এসব আলুর মালিকরা সিন্ডিকেট করে অল্প অল্প করে হিমাগার থেকে বের করে বিক্রি করছেন।
এদিকে দেশের অন্যতম সবজি মার্কেট সিটি বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘হিমাগার থেকে ৬২ টাকা ও এর বেশি দরে আলু কিনে আনতে হচ্ছে। ফলে ৬৫ টাকার নিচে আলু বিক্রি করা যাচ্ছে না। কারণ, পরিবহন খরচ, মজুরি খরচসহ আরো অনেক খরচ আছে। ৬৫ টাকার নিচে বিক্রি করলে লস হচ্ছে।’
একাধিক সাধারণ ভোক্তা বলছেন, ‘আলুর যে অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে, নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোর আলু কেনাই সম্ভব হচ্ছে না। সাধারণ এই খাদ্যপণ্যটির দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।’
সাধারণ মানুষের অভিযোগ, রংপুরের হিমাগারগুলোতে প্রচুর পরিমাণে আলু মজুদ থাকলেও ভোক্তা অধিকার বা প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় এর দাম কমছে না।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রংপুরের কার্যালয়ের উপপরিচালক আফসানা পারভীন বলেন, আমরা প্রতিদিনই বিভিন্ন হিমাগার ভিজিট করছি। ইতিমধ্যে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা এক হাজার বস্তা আলু জব্দ করেছি। এ আলু ন্যায্য মূল্যে বাজারে তিনটি পয়েন্টে ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন।
হিমাগার মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, ‘এখানে হিমাগার মালিকদের দোষ নয়। কারণ ব্যবসায়ী, আলুচাষি-তারাই এখানে আলু রাখে। আমরা সেই অনুয়ায়ী বস্তাপ্রতি পাঁচ-ছয় টাকা লাভ পাই। যারা রেখেছে তারা যদি বিক্রে করে, সে ক্ষেত্রে স্টোরেজ মালিকদের করার কিছু নেই।
আরও পড়ুন
পাকিস্তান থেকে সরাসরি আসছে জাহাজ, আমদানি বেড়েছে ২১ শতাংশ
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ: পরিকল্পনা উপদেষ্টা
ডলারের বাজারে ফের অস্থিরতা, দাম বেড়ে ১২৯ টাকা