আব্দুর রহমান মিন্টু, রংপুর : কৃষি ভান্ডার রংপুর অঞ্চলজুড়ে বিস্তীর্ণ এলাকায় বাদাম চাষ হচ্ছে। যেদিকে দু-চোখ যায় শুধু সবুজ বাদামের ক্ষেত দেখা যায়। সবুজ পাতায় দোল খাচ্ছে বাদামের গাছ। অল্প বিনিয়োগে লাভ বেশি হওয়ায় দিনদিন বাদাম চাষ জনপ্রিয় হচ্ছে।
রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় রংপুর দিনাজপুর, ঠাকুরগাও, পঞন্গড়, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী জেলায় চলতি মৌসুমে বেশির ভাগ জমিতে বিনা-৪, বারি-৬, বারি-৮ ও বারি-৯ জাতের বাদাম চাষ হয়েছে।ফলে তিস্তা , ব্রক্ষণপুত্র, নদীবেষ্টিত গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার চরাঞ্চলে গাইবান্ধা সুন্দরগজ্ঞ উপজেলায় বাদাম চাষে দিন বদলের স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। এদিকে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে বাদামের বাম্পার ফলনের আশা করছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ। তবে সারাদেশে চলমান প্রচন্ড দাবদাহ ও খরায় ফলন কিছুটা ব্যাহত হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
কৃষকরা জানান, চরাঞ্চলে চাষ হওয়া অন্যান্য ফসলের তুলনায় বাদাম চাষে লাভ বেশি ও বাজারে ভালো চাহিদা থাকায় দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে বাদাম চাষে। চলতি মৌসুমে বেশির ভাগ জমিতে বিনা-৪, বারি-৬, বারি-৮ ও বারি-৯ জাতের বাদাম চাষ হয়েছে। প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে চলতি মৌসুমে তিস্তার চরে প্রায় ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার বাদাম উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন তারা।
সরেজমিনে কাউনিয়া উপজেলার তিস্তা নদীতে ভেসে ওঠা চরাঞ্চল তালুক সাহাবাজ চর, ঢুষমারা চর, গনাই চর, হয়বতখা চর, বিশ্বনাথ চর, হারাগাছ নাজিরদহ চর এলাকায় দেখা গেছে বাদামের ব্যাপক আবাদ হয়েছে। বালুচরে দিগন্ত মাঠ জুড়ে বাদাম ক্ষেত। যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই বাদামের সবুজ ক্ষেত। বাদামের সবুজ পাতা হলুদ হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে কৃষকরা। বাদাম গাছের পাতা হলুদ হলেই বাদাম তোলার উপযোগী হয়। তখন কৃষক ও কৃষাণীদের দম ফেলার ফুরসত থাকবে না। তবে খরস্রোতা তিস্তার পানি নিয়ে আতঙ্কে আছেন কৃষকরা। হঠাৎ করে নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে কৃষকদের স্বপ্ন শেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
একই চিত্র দেখা গেছে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘণ্টা, লক্ষ্মীটারী, মর্নেয়া, আলমবিদিতর, কোলকোন্দ এবং পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ও তাম্বুলপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চলগুলোতে।
বাদাম চাষিদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, এক বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করতে খরচ হয় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা, ভালো ফলন হলে প্রতি বিঘা জমিতে ৭ থেকে ৮ মণ পর্যন্ত বাদাম উৎপাদন হয়। প্রতি মণ বাদাম সাড়ে ৪ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বাজারদরে বিক্রি হয়।
কাউনিয়া উপজেলার চরগনাই গ্রামের বাদাম চাষি আলেফ উদ্দিন বলেন, তিনি চলতি মৌসুমে ১২০০ শতাংশ জমিতে বাদামের চাষ করেছেন। ‘বর্তমানে বাদামের অবস্থা বেশ ভালো। প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে বাম্পার ফলন পাবো। তবে ভয়ে আছি নদীর পানি বাড়া নিয়ে। পানি বাড়লে স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে। ’
একই ধরনের কথা বলেছেন কাউনিয়া বিশ্বনাথ গ্রামের বাদাম চাষি সিরাজুল ইসলাম, গোলাম মোস্তফা, পাঞ্জরভাঙ্গা এলাকার পস্পেন্দ্র চন্দ্র রায়, দিনেশ রায়সহ কয়েকজন। তারা বলেন, যদি বৃষ্টি ও নদীর পানিতে বাদাম তলিয়ে না যায় তাহলে লাভের মুখ দেখব। টেপামধুপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘চরের মানুষেরা ব্যাপক হারে বাদাম চাষ করছেন। চাষিদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া হলে তারা বাদাম চাষে আরও আগ্রহী হবেন। ’
গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী এলাকার আবু বক্কর মিয়া ও সাবের আলী বলেন, ‘এবারের মতো প্রতিবছর যদি কৃষি বিভাগ ভালোমানের বীজের ব্যবস্থা করে তবে তিস্তার চরে বাদামের চাষ আরও বাড়বে। ’ কাউনিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ তানিয়া আকতার জানিয়েছেন, আবহাওয়া ভালো থাকায় বাদামের বাম্পার ফলনের আশা করছি। গত বছর বাদামের ভালো দাম পাওয়ায় এবার কৃষকরা বেশি করে বাদাম চাষ করেছে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানান, গতবারের চেয়ে এবার চাষ বেড়েছে। কৃষি বিভাগ ২শ জন বাদাম চাষিকে বিনামূল্যে বীজ ও পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করে আসছে। তিনি বলেন জেলায় ১৪ শ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়েছে । উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েফে ১৩ হাজার মেট্রিকটন । বিনা রংপুর কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডক্টর মোহাম্মদ আলী জানান রংপুর বিঅগের ৮ জেলা বাদাম চাষ করাপ হয়েছে ।
রোববার বিনা রংপুর কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডক্টর মোহাম্মদ আলী জানান রংপুর এবং পঞ্চগড় জেলার মোট ৯৫ জন কৃষককে প্রদর্শনের আওতায় রাখা হয়েছে। তিনি বলেন বিনা উদ্ভাবিত ফলনশীল জাত সমূহ যেমন চিনা চিনা বাদাম-৪, ৬, ৮ এবং ১০। এসব এসব জাতের প্রায় ৬০০০ কেজি বীজ কৃষক পর্যায়ে বিতরণ এবং বিক্রয় করা হয়। রংপুরের বিভিন্ন উপজেলা যেমন গংগাচড়া, কাউনিয়া এবং পীরগাছায় প্রচুর চরাঞ্চল রয়েছে। এসব চরাঞ্চলর প্রায় ৪০০ বিঘা জমিতে বিনা উদ্ভাবিত চিনাবাদাম জাতের আবাদ রয়েছে। এছাড়াও চর এলাকার কৃষকেরা নিজের এসব জাতের চাষাবাদ করে করে থাকেন। তিনি আরও বলেন চরাঞ্চল ব্যতীত সমতলের জেলা পঞ্চগড় এর দেবিগঞ্জ বোদা এবং সদর উপজেলায় বিনাবাদাম-৮ এর প্রায় দুই টন বীজ সরবরাহ করা হয় জা দ্বারা প্রায় ৩৫০ বিঘা জমিতে চিনা বাদাম উৎপাদন সম্ভব। এই সকল উৎপাদন এলাকা হতে ১১ টন বীজ বাদাম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
আরও পড়ুন
খুলনায় প্রেস সচিবকে আটকে রেখেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ও এনসিপির নেতা কর্মীরা
খুলনার উন্নয়নে অন্তর্বর্তী সরকারের বিশেষ দৃষ্টি আছে: প্রেস সচিব
কুড়িগ্রামের সোনাহাট স্থলবন্দর সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ