রংপুর ব্যুরো:
রংপুর প্রেসক্লাবে প্রশাসকের মাধ্যমে অবৈধভাবে সদস্য অর্ন্তভূক্তিতে নিষেধাজ্ঞার রায় বহাল রেখেছে আদালত। উচ্চ আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকা এবং বাদী-বিবাদী পক্ষের যুক্তি-তর্ক ও প্রমাণাদি গভীরভাবে পর্যালোচনা করে মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) বিকেলে রংপুর সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের বিচারক ফারহানা খান এ রায় দেন। আদালতের এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশসহ প্রেসক্লাব ন্যায় বিচার প্রাপ্তিতে এক ধাপ এগিয়ে গেছে বলে মনে করছেন সাংবাদিকরা।
মামলা ও প্রেসক্লাব সূত্রে জানা যায়, রংপুর প্রেসক্লাব পেশাজীবী সংগঠন হলেও রহস্যজনক কারণে ৩৩ বছর আগে প্রেসক্লাবকে রেজিস্ট্রেশন দেয় সমাজসেবা অধিদপ্তর। এরপর নিজস্ব গণতন্ত্রে পরিচালিত প্রেসক্লাব কখনো রেজিস্ট্রেশন নবায়ন করেনি, সমাজসেবা অধিদপ্তরও রেজিস্ট্রেশন নবায়নের জন্য কখনো তাগিদ দেয়নি। গণঅভ্যূত্থানের পর কিছু বিতর্কিত-অপসাংবাদিক ও প্রেসক্লাব থেকে দূর্নীতির দায়ে বহিস্কৃতরা অবৈধভাবে সদস্য পদ পেতে মরিয়া হয়ে উঠে। তারা পরিকল্পিতভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ সমাজসেবা অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে প্রেসক্লাবে অবৈধভাবে প্রশাসক নিয়োগ করে। এনিয়ে প্রেসক্লাব কমিটি উচ্চ আদালতে রীট পিটিশন দাখিল করেন। প্রেসক্লাবকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের অপতৎপরতায় প্রশাসক তার উপর অর্পিত তর্কিত দায়িত্বেরও অতিরিক্ত এবং অতি উৎসাহী হয়ে প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্রের তোয়াক্কা না করে গত ১৩ মে প্রেসক্লাবে সাধারণ সদস্য অন্তর্ভূক্তির নোটিশ জারি করেন। এতে সদস্য অন্তর্ভূক্তির ক্ষেত্রে প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠার প্রথম গঠনতন্ত্রের শর্তাবলী উল্লেখ করা হয়। অথচ সদস্যদের সম্মতিক্রমে ও আইনানুগ পন্থায় প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্র একাধিকবার সংশোধন হয়েছে। বর্তমান প্রশাসক ৮ জুলাই অবৈধভাবে সদস্য অন্তর্ভূক্তির জন্য খসড়া তালিকা প্রকাশ করবে জেনে প্রেসক্লাব কমিটি বাধ্য হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন এবং সেই কার্যক্রমে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার জন্য যথেষ্ট প্রমাণাদি আদালতে দাখিল করেন। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে ৯ জুলাই প্রশাসকের বিরুদ্ধে কেন অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রদান করা হবে না তা নোটিশ প্রাপ্তির ৭ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য প্রশাসককে নির্দেশ দেয় আদালত। কিন্তু ১৪ জুলাই প্রশাসক নোটিশ পাওয়ার পরও ৭ দিনের মধ্যে কোন লিখিত আপত্তি আদালতে দাখিল করেনি। ফলে আদালত গত ২৪ জুলাই প্রশাসককে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত রংপুর প্রেসক্লাবে সদস্য অন্তর্ভূক্ত করা থেকে বিরত থাকার আদেশ দেন। এ ঘটনায় প্রশাসক আদালতে আপিল করলে ২১ আগস্ট উভয় পক্ষের আইনজীবি শুনানীতে অংশ নেন। ২৬ আগস্ট বিকেলে আদালতের বিচারক প্রশাসকের সদস্য অন্তর্ভূক্তিতে পূর্বের নিষেধাজ্ঞার আদেশ বহাল রাখেন।
বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. জোবাইদুল ইসলাম বলেন, তর্কিত প্রশাসকের অবৈধভাবে সদস্য অন্তর্ভূক্তির বিষয়ে আমরা সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে আবেদন করেছিলাম। আদালত সন্তুষ্ট হয়ে প্রশাসককে শোকজ করেছিল। বিবাদী প্রশাসক শোকজের জবাব পর্যন্ত দেয়নি। আদালত তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে প্রশাসকের মাধ্যমে সদস্য অন্তর্ভূক্তির বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। প্রেসক্লাব নিয়ে সমাজসেবার সাথে উচ্চ আদালতে মামলা চলমান থাকায় তাড়াহুড়ো করে সদস্য নেয়ার কোন কারণ নেই। গঠনতন্ত্র বর্হিভূতভাবে প্রেসক্লাবের কাঠামো ধ্বংস করার চক্রান্ত আমরা রোধ করে দিয়েছি।
তিনি বলেন, প্রেসক্লাবে জুলাই বিপ্লব, শেখ হাসিনার অপশাসন, রংপুরের ফ্যাসিস্টদের অপকর্মের অনেক ডকুমেন্ট রয়েছে। সাংবাদিকরা অভিযোগ করেছেন, সদস্যদের প্রেসক্লাব থেকে বের করে প্রশাসক সেই ডকুমেন্ট, তথ্য নষ্ট করছে বলে শংঙ্কা রয়েছে। প্রেসক্লাব নিয়ে খেলার চেষ্টা করলে রংপুরবাসী মেনে নেবে না। তাই অবিলম্বে প্রেসক্লাবের কমিটির কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হোক।
বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. মাহে আলম বলেন, প্রেসক্লাবের তর্কিত প্রশাসক ফুল হেয়ারিং করে সদর কোর্ট তার আদেশ দোতরফা সূত্রে মঞ্জুর করেছেন। এতে করে তর্কিত প্রশাসক সদস্য অন্তর্ভূক্তি করতে যাচ্ছিলেন, সেটি বন্ধ হলো। এ থেকে প্রতীয়মান হয় প্রেসক্লাব ন্যায় বিচার পেতে যাচ্ছে। গণঅভ্যূত্থান পরবর্তী তাদের ন্যায় বিচার পেতেই হবে। প্রেসক্লাব যারা বন্ধ করে রেখেছে তারাই অবৈধ।
আব্দুর রহমান মিন্টু
রংপুর ব্যুরো চীফ
আরও পড়ুন
মুরাদনগরে মাদ্রাসায় যাওয়ার জন্য বেরিয়ে নিখোঁজ মারুফা
রংপুরে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান সম্পন্ন
কালীগঞ্জের নবাগত (ইউএনও) এ.টি.এম কামরুল ইসলাম