December 3, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, December 2nd, 2025, 8:12 pm

রংপুর বিভাগে ইটভাটাগুলো প্রতিবছর পুড়ছে ১০ লাখ মেট্রিকটন কয়লা

রংপুর:

রংপুর বিভাগে ৮ জেলায় প্রায় ১ হাজার ইটভাটায় প্রায় ২০ হাজার একরের বেশি জমি গিলে খেয়েছে। এসব ইটভাটার অর্ধেকের বেশি অনুমোদন ছাড়া গড়ে উঠেছে।  ইটভাটা গুলো প্রতিবছর প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন কয়লা পুড়িয়ে পরিবেশ নষ্ট করছে। কয়লার কালো ধোয়ায় পরিবেশের ক্ষতি হলেও বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করছেন। তবে পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।

রংপুর পরিবেশ অফিস সূত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগের রংপুর, কুড়িগ্রাম,লালমনিরহাট, নীলফামালী, গাইবান্ধা,দিনাজপুর, ঠাকুরগা*, পঞ্চগড়  জেলায় ৯শ ৩৬টি  ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই অনুমোদন না নিয়ে সরকারি বিধি বিধান লঙ্খন করে দেদারছে অবৈধভাবে ইট প্রস্তুত করছে। জনগণের বসতি আবাসিক এলাকা, ফসলী জমি এমনকি প্রতœতত্ত্ব নিদর্শনসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে ইটভাটা করা হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া অবৈধভাবে ইট প্রস্তুত করছে। রংপুর বিভাগের ৮ জেলায়  ১০ লাখ মেট্রিক টন কয়লা পুড়ে প্রতি মৌসুমে প্রায় ৫/৬ শ কোটি পিছ ইট প্রস্তুত করা হচ্ছে। ভাটার ব্যবহৃত কয়লার কালো ধোঁয়া থেকে নিঃসৃত কার্বন ডাই অক্সাইড পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি মানবদেহে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেললেও স্থানীয় প্রশাসন এ ব্যাপারে কোন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। যেখানে সেখানে ইট ভাটা গড়ে ওঠায় প্রতি বছর আবাদী জমি কমছে।

রংপুরের পীরগাছায় উপজেলায়  ইটভাটার বিষাক্ত ধোয়ায় ঝলসে গেছে ১৭ একর জমি ধান খেত। ইটভাটার বিষাক্ত ধোয়া পুড়ে চিটা হয়ে গেছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন। এমএসবি ব্রিকস নামের একটি ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ৩০ জন কৃষকের প্রায় ১৭ একর জমির ধানের ক্ষেত ঝলছে গেছে। ধানের শীষগুলো ঝলসে চিটা হয়ে গেছে এবং অন্য জমির ধান গাছগুলো জ্বলে গিয়ে কালো হয়ে শুকিয়ে গেছে। এতে করে ধানের জমির আইলে বসে বিলাপ করছেন কৃষক বাদশা মিয়া। কেউ বা বাকি ধানগুলো রক্ষার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে রংপুর জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

পীরগাছা উপজেলার অন্নদানগর ইউনিয়নের বামন সর্দার গ্রামের এমএসবি ব্রিকস নামের ইটভাটার উত্তর পাশের জমিগুলোতে ঝলসে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে করে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন ওই এলাকার কৃষকরা। এছাড়াও ইটভাটার কারণে গত ৫ বছর ধরে ওই এলাকার গাছপালায় কোন ফল ধরছে না বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা।

সূত্রমতে  রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় ইট ভাটা রয়েছে  ৯৩৬টি। এর মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড় পত্র রয়েছে ২০২ টি অবৈধ রয়েছে  ৭৩৪ টি। বাকি ইট ভাটা মালিক পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে কোন ছাড় পত্র গ্রহণ না করেই পেশি শক্তি ব্যবহার করে ইট ভাটা পরিচালনা করছেন।

আরো জানা গেছে, একটি ইট ভাটায় গড়ে ৬ থেকে ১০ একর জমির প্রয়োজন হয়। সেই হিসেবে এই অঞ্চলের ইট ভাটাগুলো প্রায় ২০ হাজার একর জমি গিলে খেয়েছে। প্রতি  মৌসুমে একটি ইট ভাটা গড়ে ১৫ থেকে ২০ লাখ পিছ ইট প্রস্তুত করতে পারে।  সূত্র মতে একটি ইট ভাটা প্রতি মৌসুমে গড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ মেট্রিক  টন কয়লা জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করে। সেই হিসেবে প্রতি মৌসুমে ১৫ থেকে ১৬ রঅখ মেট্রিকটন  কয়লা পুড়ছে। কয়লার কালো ধোঁয়া জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক এবং পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে পরিবেশ রক্ষার দাবি উঠলেও এ পর্যন্ত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।

রংপুর জেলা ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম আজিজুলক হক বলেন, রংপুর বিভাগে বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে। এসব কাজে রংপুরের ভাটা থেকে বিপুল সংখ্যক ইট স্বল্পমূল্যে সেখানে সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে করে সরকারের উন্নয়ন ব্যয় কমছে। তিনি বলেন ইটশিল্পের সঙ্গে রংপুরের লাখ লাখ শ্রমিক জড়িত রয়েছে। বিভিন্ন সময় অভিযানের নামে ইটভাটায় প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর হানা দিয়ে জেল-জরিমানা আদায় করছে। এটি যদি বন্ধ করা না হলে,  ঈদের পর বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবে ইট প্রস্তুতকারক মালিক-শ্রমিকরা।

মানবাধিকার ও পরিবেশ আন্দোলন মাপার কেন্দ্রীয় প্রধান নির্বাহী রংপুরের সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট মুুনর চৌধুরী জানান রংপুর বিভাগের ইট ভাটা গুলো আইন মেনে চলছে না । মালিকরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা গ্রুলোকে বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে ইট উৎপাদন করছে। ভাটা মালিকরা কোন নিয়ম কানুনের কোন তোয়াক্কা করছেনা না ।  এতে পরিবেশের জন্য  হুমকি হয়ে দাঁয়িয়েছে।  পরিবেশ দূষণে বৃদ্ধি পাচ্ছে ।

রংপুরের জেলা প্রশাসক এনামুল হাবিব  জানিয়েছেন, রংপুর জেলায় মোট ২৪০টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ১৭২টিই অবৈধ পরিবেশগত লাইসেন্স না থাকা এবং প্রয়োজনীয় শর্ত না মেনে অবৈধভাবে এসব ভাটা ইট উৎপাদন করছে। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি মাটির ওপরের অংশ তুলে নেওয়ায় জমির উর্বরতা নষ্ট হয় কৃষিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি উচ্চ আদালত সারা দেশের সব অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদে নির্দেশ দিয়েছে। এ কারণে অবৈধ ভাটায় ইট উৎপাদন বন্ধে অভিযান শুরু হয়েছে।

মঙ্গলবার পরিবেশ অধিদপ্তর রংপুর বিভাগীয় পরিচালক নুর আলম  বলেন, রংপুর বিভাগে বৈধ ইট ভাটা ২০২টা অবৈধ ৭শ৩৪ টা । তিনি আর ও বলেন এ বছর বিএসটিআই সহযোগীতায় নীলফামারী ও কুড়িগ্রাম জেলায় পৃথক ২টিঁ করে ৪ টি অভিযান পরিচালিত হয়েছে । এতে ৩০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে ।সম্প্রতি অবৈধ ভাবে ইট ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর এবং বিএসটিআই অভিযান পরিচালনা অব্যাহত থাকবে। এর পরও একশ্রেণীর মানুষ থেমে নেই অবৈধ ইটভাটার  ব্যবসা করছে । রাজনৈতিক কারণে রমরমা ব্যবসা করছে । #