April 21, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, January 23rd, 2025, 3:03 pm

রংপুর বিভাগ চালের দাম বাড়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষ

আব্দুর রহমান মিন্টু, রংপুর : শস্যভান্ডার খ্যাত রংপুরে এখন আমনের ভরা মৌসুম। এর মধ্যেই পাইকারি ও খুচরাতে চালের দাম বেড়েছে। গত ২৫ দিনে বস্তপ্রতি ৩৫০-৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এতে খুচরা পর্যায়ে চিকন চালের দাম কেজিতে সাত-আট টাকা এবং মোটা ও মাঝারি চালের দাম আট-দশ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তার মধ্যে আগের কেনা মজুতকৃত চালের কেজিতেও আট-দশ দাম বাড়িয়েছেন আড়তদাররা। রংপুর বিভাগে চালের দাম বাড়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষজন।
রংপুর বিভাগের অন্যতম বড় চালের মোকাম রংপুর সিটি বাজার ও মাহিগঞ্জ মোকামে গিয়ে দেখা গেছে, ৫০ কেজির প্রতি বস্তা চালে ৩০০-৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ফলে পাইকারিতে ১৫ দিনের আগের ৪২ টাকার মোটা চাল এখন ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি ৭০ টাকার নাজিরশাইল বেড়ে ৮০, কাটারিভোগ ৭২ থেকে ৮২, মিনিকেট ৭০ থেকে ৭৮, জিরাশাইল ৬৪ থেকে ৬৮, বিআর ৫৬ থেকে ৬৪, গুটি স্বর্ণা ৫০ থেকে বেড়ে ৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই হিসাবে নাজিরশাইলের বস্তায় বেড়েছে ৫০০ টাকা। এই দামে দুই মোকাম থেকে পাঁচ-১০ কেজি করে চাল কেনা যাচ্ছে। তবে খুচরা বাজারে কেজিতে দুই টাকা করে বেড়েছে।
খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, মিল পর্যায়ে চালের দাম বেড়েছে। এর প্রভাবেই খুচরা ও পাইকারিতে দাম বেড়েছে। বেশি দামে কিনতে হওয়ায় বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের।
মিল মালিকদের দাবি, আমনের ভরা মৌসুমে ধানের দাম বাড়ায় চালের দাম বাড়িয়েছেন। বেশি দামে ধান কিনে চাল করতে উৎপাদন খরচ বেশি পড়ায় প্রতি বস্তায় ২৫০-৩০০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছেন তারা। সেটি খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা ৩৫০-৪০০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। ফলে খুচরাতেও দাম বেড়েছে।
পাইকারি ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা দাম বাড়ানোর কারণ দেখালেও বাস্তবতা হলো দাম বাড়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষজন। অনেকের মোটা চাল কিনতে কষ্ট হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। গত রবিবার জেলার বড় দুটি পাইকারি মোকাম ও দুটি বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
চাল কিনতে বাজারে আসা সাধারণ মানুষজন বলছেন, মিল ও আড়তগুলোতে হাজার হাজার বস্তা চাল মজুত থাকলেও দাম বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। মিল মালিক ও আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে দাম বাড়িয়ে গত ১৫ দিনে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। দাম বাড়ায় স্বল্পআয়ের মানুষজন বিশেষ করে শ্রমজীবী, কৃষিজীবী ও দিনমজুরসহ মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো ভোগান্তিতে পড়েছেন। আবার নিম্নবিত্তের মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে দাম। এখন মোটা চাল কিনতেও কষ্ট হচ্ছে তাদের।সিটি বাজার ও মাহিগঞ্জ মোকামের আড়তদাররা বলছেন, মিল মালিকরা হাজার হাজার বস্তা চাল মজুত রেখে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে চালের দাম বাড়িয়েছেন। আবার বলছেন ধানের দাম বেড়েছে। এজন্য দাম বাড়িয়েছেন। ফলে তাদের কাছ থেকে বেশি দামে কিনে বেশিতে বিক্রি করছেন আড়তদাররা।
তবে সরেজমিনে সিটি বাজার ও মাহিগঞ্জ মোকামেও কয়েক হাজার বস্তা চালের মজুত দেখা গেছে। এর মধ্যে আগের কেনা চালের দামও বাড়িয়েছেন আড়তদাররা। কেন মজুতকৃত চালের বাড়িয়েছেন, তার জবাব দেননি কেউ। এ নিয়ে কথা বলতে চাইলেও কোনও আড়তদার বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
আগে কম দামে কিনে মজুতকৃত চালের দাম কেন কেজিতে আট-দশ টাকা বাড়িয়েছেন জানতে চাইলে সাহেব আলী বলেন, ‘বড় বড় মোকামে দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’
মজুত রাখা বেআইনি তারপরও কেন রাখা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের মালিকের আদেশ। এখানে আমরা কর্মচারী। আমাদের যেভাবে বলা হয়, আমরা সেভাবে করি।’
একইভাবে মাহিগঞ্জের অন্তত ৫০টি আড়তে ৩০-৪০ হাজার বস্তা আগের কেনা চাল মজুত আছে বলে জানিয়েছেন আড়তদারের দুজন ব্যবস্থাপক। তারা জানিয়েছেন, সংকট দেখিয়ে গত ২৫ দিনে আগের কেনা চাল দিয়ে কয়েক কোটি টাকা লাভ করেছেন তারা। একই কথা বলেছেন পাইকারি চাল ব্যবসায়ীরাও।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর রংপুরের উপপরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন লেন, ‘রংপুর বিভাগে সবসময় ধান ও চাল উদ্বৃত্ত থাকে। প্রতি বছর জেলা থেকে উৎপাদিত সাড়ে চার লাখ মেট্রিক টন চাল দেশের অন্যান্য জেলার চাহিদা মিটিয়ে থাকে। ফলে এখানে ধান কিংবা চালের সংকট বলা অযৌক্তিক।’
আমনের মৌসুম শেষে নতুন ধানের চাল পুরোদমে বাজারে এসেছে জানিয়ে রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘চলতি আমন মৌসুমে রংপুরে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৬৬ হাজার ৭২৩ হেক্টর জমি। সেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে চাষ হয়েছে এক লাখ ৬৬ হাজার ৯৪০ হেক্টর। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ৯৮ হাজার ৪৪ মেট্রিক টন চাল। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে জেলার মানুষের চালের চাহিদা রয়েছে সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন। হিসাবে আড়াই লাখ মেট্রিক টনের বেশি উদ্বৃত্ত থাকবে। যা দেশের বিভিন্ন জেলার চাহিদা মেটাবে। সেখানে ভরা মৌসুমে রংপুরে চালের দাম বাড়ানোর কোনও কারণ দেখছি না। এটি সিন্ডিকেটের কারসাজি। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।’