পবিত্র রমজান মাসে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সৌদি আরবে আসছেন হাজারো মুসলিম মুসল্লি। রমজানের শুরু থেকে সৌদি আরবে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ওমরাহ পালনকারীদের সংখ্যা বাড়ছে।
আরবি বর্ষপঞ্জির নবম মাস রমজান। এ সময় সৌদি আরবে সবচেয়ে ভালো আবহাওয়া বিরাজ করে এবং প্রার্থনা, আত্মমূল্যায়ন ও ধর্মীয় নিষ্ঠার জন্য উৎসর্গ করা এই পবিত্র মাস ঐতিহ্যগতভাবে ওমরাহ পালনের শ্রেষ্ঠ সময় হিসেবে গণ্য করা হয়।
যদিও অত্যধিক উষ্ণ তাপমাত্রার জন্য মক্কা সুপরিচিত তবে আশ্চর্যজনকভাবে মার্চ মাসে একটি মনোরম আবহাওয়া বিরাজ করছে।
রমজানের প্রথম জুমা শুক্রবার (১৫ মার্চ) মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদ ও মদিনার মসজিদে নববিতে জুমার নামাজ আদায় করেছেন হাজার হাজার মুসল্লি।
গ্র্যান্ড মসজিদ ও এর আঙিনাজুড়ে ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের ভিড় ছিল এবং কেন্দ্রীয় হারাম এলাকার রাস্তা জুড়েও অবস্থান নেন তারা।
অনেকেই নিজ নিজ হোটেল থেকে জুমা আদায় করেছেন, যেসব স্থান অডিও ট্রান্সমিশনের মাধ্যমে গ্র্যান্ড মসজিদের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে।
এদিকে, দুই পবিত্র মসজিদের খাদেম বাদশাহ সালমান ২০২৪ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এক হাজার জনকে ওমরাহতে নিমন্ত্রণ জানান।
২০২৪ সালের চতুর্থ ও চূড়ান্ত ব্যাচের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে ইউরোপ ও এশিয়া মহাদেশের ১৬টি দেশের ২৫০ জন বিশিষ্ট ইসলামি ব্যক্তিত্ব ও নারী-পুরুষ ওমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরব সফর করছেন।
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে রয়েছেন ইসলামিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক, শিক্ষার্থী, ইনফ্লুয়েন্সার, লেখক, বক্তা, শিক্ষক।
শিক্ষক মুনজেরিন শহীদ বলেন, ‘সত্যি বলতে, আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। এসব ঐতিহাসিক স্থানের গল্প জানতাম। এবার নিজের চোখে দেখার সুযোগ পেলাম।’
তিনি বলেন, এখানে ভাষাগত কোনো বাধা বা সাংস্কৃতিক কোনো বিভাজন নেই।
স্বামী আয়মান সাদিকের সঙ্গে প্রথম ওমরাহ পালন করতে আসা মুনজেরিন বলেন, ‘আমি মানুষের মধ্যে অসাধারণ ঐক্য দেখতে পাচ্ছি। আমার আবার আসার ইচ্ছা আছে।’
ওমরাহ পালনের আগে মদিনার ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আয়মান বলেন, ‘মদিনায় বাদশাহ ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স পরিদর্শন করার সুযোগ পেয়েছি। যেখানে প্রতি বছর পবিত্র কুরআনের লক্ষ লক্ষ কপি মুদ্রিত হয়। মদিনা শান্তির জায়গা।’
নিউজিল্যান্ড থেকে আসা মুসা তাকাই ইউএনবিকে বলেন, ‘এটা একেবারেই অকল্পনীয়। আমি প্রথমে সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে এবং রাজপরিবারের কাছে কৃতজ্ঞ যে আমাদের ওমরাহ পালনের সুযোগ করে দিয়েছেন।’
ওমরাহ পালনে আপ্যায়ন করার জন্য মুসা দুই পবিত্র মসজিদের খাদেম এবং ক্রাউন প্রিন্সের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি আরও বলেন, সৌদি আরব সবসময় আল্লাহর অতিথিদের যত্ন নেন এবং তাদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেন। ওমরাহ ও পরিদর্শনের এই আয়োজন দুটি পবিত্র মসজিদের খাদেমের একটি অসাধারণ উদ্যোগ।
নিমন্ত্রিত ছাড়াও অনেক বাংলাদেশি ব্যক্তিগত উদ্যোগে ওমরাহ পালনের জন্য এই রমজানে সৌদি আরব আসছেন।
সংসদ সদস্য ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ‘আমার মা, শাশুড়ি ও আমার ছোট বোন, আমরা ওমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরব আসছি। এ যাত্রা শুধু ব্যক্তিগতভাবে আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি আল্লাহর প্রতি আমাদের ঈমান ও আনুগত্যের নিদর্শন।’
তিনি বলেন, নামাজ, রোজা ও ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে পবিত্র মক্কা ও মদিনায় সময় কাটাতে যাচ্ছেন তারা।
জনপ্রিয় অভিনেতা থেকে সংসদ সদস্য ফেরদৌস আরও বলেন, আপনাদের প্রার্থনায় আমাদের রাখবেন, এটি আমাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া। আমাদের এই বিশেষ যাত্রায় আপনাদের জন্য দোয়া করবেন।
মক্কার আল-মুকাররমায় ওহী প্রদর্শনী
রাজধানীর সাংস্কৃতিক জেলা ‘হেরায় অবস্থিত ‘রিভেলেশন গ্যালারি’ পরিদর্শন করেন বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সদস্যসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা।
সফরকালে তারা বিভিন্ন প্রদর্শনী পরিদর্শন করেন এবং রাসূলের কাছে ওহির কাহিনির মহৎ বৈশিষ্ট্য প্রত্যক্ষ করেন, ওহির কাহিনির সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু বিষয় সম্পর্কে জানতে পারেন, যেমন হেরার গুহা।
অতিথিরা প্রদর্শনী ও নবী মুহাম্মদের (সা.) ওহি প্রাপ্তির সঙ্গে সম্পর্কিত মহান দিকগুলোর প্রশংসা করেন।
তারা এই কর্মসূচির প্রশংসা করে জোর দিয়ে বলেন, সৌদি আরবের এই দারুণ উদ্যোগ নতুন কিছু নয়, কারণ দেশটি সবসময়ই ইসলাম ও মুসলমানদের যত্ন নিয়ে থাকে।
প্রতিনিধি দলটি পবিত্র কোরআন মুদ্রণের জন্য কুবা মসজিদ, কিং ফাহাদ কমপ্লেক্স, শুহাদা ও মাউন্ট উহুদ, আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী এবং নবীর জীবনী ও ইসলামি সভ্যতার জাদুঘর পরিদর্শন করেন।
বাড়ছে পর্যটকের সংখ্যা
সম্প্রতি প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম ব্যারোমিটার রিপোর্ট অনুসারে, বড় গন্তব্যগুলোর মধ্যে ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক পর্যটক আগমন বৃদ্ধির জন্য সৌদি আরব জাতিসংঘের পর্যটন র্যাংকিংয়ে শীর্ষে রয়েছে। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে দেশটিতে আন্তর্জাতিক পর্যটক আগমন ৫৬ শতাংশ বেড়েছে।
এছাড়াও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, সৌদি আরব ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক পর্যটক আগমনের ক্ষেত্রে পর্যটন পুনরুদ্ধারের হার ১৫৬ শতাংশ রেকর্ড করেছে।
সৌদি পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মতে, পর্যটন খাতে এই উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলো সৌদি আরবকে মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের বৈশ্বিক পর্যটন পুনরুদ্ধারে শীর্ষস্থানীয় স্থান দিয়েছে।
কোভিড -১৯ মহামারি আক্রান্ত অঞ্চল হওয়ার পরও ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক পর্যটক আগমনের হার ১২২ শতাংশ পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে।
২০২৩ সালে দেশটির বিভিন্ন পর্যটন গন্তব্যে দেশীয় এবং অভ্যন্তরীণ উভয় দর্শনার্থী উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
সৌদি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (এসএএমএ) ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অনুযায়ী, ২০২৩ সালের প্রথম তিন প্রান্তিকে মোট ব্যয় ১০০ বিলিয়ন এসএআর ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পর্যটক প্রাপ্তিতে সৌদি আরব রেকর্ড গড়েছে।
সৌদি পর্যটন মন্ত্রী আহমেদ আল-খতিব সম্প্রতি একটি কর্মসূচি উন্মোচন করেছেন যা দেশের দ্রুত বর্ধনশীল পর্যটন খাতকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তুলবে।
ট্যুরিজম ইনভেস্টমেন্ট এনাবলার প্রোগ্রাম (টিআইইপি) আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য একাধিক উদ্যোগের মাধ্যমে সৌদি আরবের মতো বিশ্বের অন্যতম প্রতিযোগিতামূলক পর্যটন বিনিয়োগের পরিবেশে সহজে ও লাভবান ব্যবসা করার সুযোগ করে দিতে কাজ করছে।
দেশটিতে ২০২৩ সালে ওমরাহ পালনকারী হজযাত্রীর সংখ্যা রেকর্ড ১৩.৫৫ মিলিয়নে পৌঁছেছে। ২০১৯ সালের তুলনায় ওমরাহ যাত্রীর সংখ্যা ৫০ লাখ বা ৫৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
—–ইউএনবি
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় মরদেহ পোড়ানোর মামলায় কনস্টেবল মুকুল কারাগারে
শীতে শিশুদের সুস্থ রাখবে যেসব খাবার
দীর্ঘদিন পর ফেরা তারকারা