নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহীতে গত দুদিন ধরে জেলায় করোনা সংক্রমণের হার কিছুটা কমেছে। তবে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে বেড়েই চলেছে করোনা রোগীর ভর্তি। ফলে তাদের সেবা দিতে অনেকটায় বেকায়দায় পড়েছেন হাসপাতালে কর্তব্যরতরা। রামেক হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে রামেক করোনা ইউনিটে মোট শয্যা রয়েছে ৩৫৭টি। এর মধ্যে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ২০ শয্যা ও কেবিনে রয়েছে ১৫ শয্যা। এ ছাড়া মোট ১০টি ওয়ার্ডে ৩২২টি সাধারণ শয্যা রয়েছে। এদিকে গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে গত শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত রামেকের বিভিন্ন ওয়ার্ড, আইসিইউ ও কেবিন মিলিয়ে মোট ৪২৩ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এর আগের দিন ভর্তি ছিলেন ৪০৪ জন। এরও একদিন আগে রোগী ছিলেন ৪১০ জন। রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, রামেকের করোনা ইউনিটে প্রতিদিনই উপসর্গ ও সংক্রমণ নিয়ে অনেক রোগী ভর্তি হচ্ছেন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার তুলনায় নতুন ভর্তির সংখ্যা অনেক বেশি। মূলত যাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯০ এর নিচে যাচ্ছে তাদেরই হাসপাতালে ভর্তি নেয়া হচ্ছে। বাকিদের বাসায় অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় রামেকে নতুন ভর্তি হয়েছে ৬৫ জন। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪৩ জন। বর্তমানে হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রয়েছেন ১৭০ জন। আর উপসর্গ নিয়ে ২৫৩ জন ভর্তি রয়েছেন। রামেক করোনা ইউনিটে মোট শয্যা ৩৫৭টি। এর বিপরীতে রোগী ভর্তি রয়েছে ৪২৩ জন, যা আগের চেয়ে ১৯ জন বেশি। এভাবে প্রতিদিন রোগী বাড়তে থাকায় চিকিৎসাসেবা ব্যহত হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রামেক কর্মচারী বলেন, বর্তমানে রামেকে মাত্রাতিরিক্ত রোগী রয়েছে। ফলে অক্সিজেনের স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে শয্যা শঙ্কট। কেউ মারা গেলে তবেই মিলছে আইসিইউ। বর্তমানে ২০ শয্যার আইসিইউতে রোগী রয়েছেন ১৮ জন। অন্যদিকে শুধুমাত্র আইসিইউতে ভর্তির অপেক্ষায় রয়েছেন অর্ধশত রোগী। তদবির করেও মিলছে না জায়গা। তিনি আরও বলেন, শুধু করোনা ইউনিটের আইসিইউ ও কেবিনই নয়, সাধারণ ওয়ার্ডগুলোতেও বাজে অবস্থা বিরাজ করছে। শয্যার তুলনায় রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। গত বৃহস্পতিবার ৪০৪ জন ভর্তি ছিল হাসপাতালে, আজ (গত শুক্রবার) তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২৩ জনে। সেখানেও ওয়ার্ডের মেঝে ও করিডরে বিছানা পেতে ভর্তি রয়েছেন অনেকে। যারা বেড পেয়েছেন তারা সাপ্লাই লাইনে অক্সিজেন পাচ্ছেন। কিন্তু বেড পাননি যারা তাদের সিলিন্ডারে অক্সিজেন নিতে হচ্ছে। তা ফুরিয়ে গেলেই শুরু হচ্ছে ছটফটানি। অক্সিজেনের অভাবেই অনেকে প্রাণ হারাচ্ছেন এ মৃত্যুপুরীতে। রামেক সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের ৩২ শয্যার এ ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি রয়েছেন ৪৭ জন। সমান সংখ্যক শয্যার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ৪৯, ২২ নম্বর ওয়ার্ডে ৫০ জন ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন ৩৮ জন রোগী। এদিকে ৩৬ শয্যার ১ নম্বর ওয়ার্ডে ৪৮ জন ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৪৪ জন রোগী রয়েছেন। আর ৪৮ শয্যার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে ৪৫ জন ও ২৯-৩০ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৬ জন রোগী। এছাড়া ১৬ শয্যার ৩৯-৪০ নম্বর ওয়ার্ডে ১৫ জন, ১৫ শয্যার কেবিনে ১৭ জন ও ১০ শয্যার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে চারজন রোগী রয়েছেন। রামেক হাসপাতাল সূত্র আরও জানা যায়, প্রথম দিকে আলাদা বিশেষায়িত হাসপাতাল চালু থাকলেও প্রথম দফায় সংক্রমণ কমে আসায় সেগুলো বন্ধ হয়ে যায়। কেবল চালু ছিল রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিট। সেখানে ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে ৮৮টি শয্যায় চিকিৎসা চলছিল রোগীদের। শুরু থেকেই আইসিইউতে শয্যা সংখ্যা ছিল ২০টি। গত ৬ এপ্রিল পর্যন্ত এ শয্যাতে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হলেও বর্তমানে তা অপর্যাপ্ত। সূত্র জানায়, গত ৬ জুন হাসপাতালে শয্যা বাড়িয়ে ২৩২ এ উন্নীত করা হয়। ওই দিনই সেখানে ভর্তি ছিলেন ৩৩৫ জন। এরপর ৯ জুন শয্যা বাড়িয়ে ২৭১ করা হয়। সেদিন ভর্তি ছিলেন ২৯০ জন। সর্বশেষ রামেকে গত বৃহস্পতিবার শয্যা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩২২টি। এরপরও রোগীর বাড়তি চাপে হিমসিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম ইয়াজদানী বলেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েই চলেছে। চাপাইনবাবগঞ্জে ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ায় রোগীর সংখ্যা বহুগুণে বেড়ে গিয়েছে। রোগীদের বাড়তি চাপে স্থান না হওয়ায় অনেককেই মেঝেতে থাকতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, করোনা রোগীর বাড়তি চাপে রামেকে চিকিৎসাসেবা ব্যহত হচ্ছে। রয়েছে অক্সিজেন সল্পতাও। আমাদের পক্ষ থেকে চেষ্টা চলছে প্রয়োজন মত অক্সিজেন সাপ্লাই দেয়ার। তবে বাড়তি চাপে তা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য প্রয়োজন একটি বিশেষায়িত হাসপাতালের। এতে অনেকটা চাপমুক্ত হবে রামেক হাসপাতাল।
আরও পড়ুন
সাংবাদিকদের সাথে রংপুর পুলিশ সুপারের মতবিনিময়
আশুলিয়ায় মরদেহ পোড়ানোর মামলায় কনস্টেবল মুকুল কারাগারে
শীতে শিশুদের সুস্থ রাখবে যেসব খাবার