নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজস্ব আদায় জোরদারে আয়কর প্রশাসন সম্প্রসারণ ও পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তার অংশ হিসাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়কর প্রশাসনের সংস্কার, পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণ সংক্রান্ত প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। সেখানে জেলা পর্যায়ে নতুন কর অঞ্চল, বিশেষায়িত গোয়েন্দা ইউনিট এবং কর মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে আপিল অঞ্চল স্থাপনসহ নতুন লোকবল নিয়োগের বিষয়ে বলা হয়েছে। আর আয়কর প্রশাসনের সম্প্রসারণের যৌক্তিকতা তুলে ধরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রস্তাবের ওপর তিন দফা আলোচনা হয়েছে। জনপ্রশাসনের অনুমোদনের পর ওই প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। তারপর প্রশাসনিক সংস্কার সংক্রান্ত সচিব কমিটি হয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত ২০১১ সালে সর্বশেষ আয়কর প্রশাসনের কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে ৩১টি কর অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে ওই সময়ের তুলনায় করদাতার সংখ্যা ৬ গুণ বেড়েছে। বর্তমানে প্রতিটি কর অঞ্চলে গড়ে ২ লাখ ৬ হাজার করদাতা রয়েছে। সার্কেল হিসাবে প্রতিটি সার্কেলে প্রায় ১০ হাজার করদাতা রয়েছে। বর্তমানে প্রতিটি সার্কেলে ৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করে। এতো কম সংখ্যক জনবল দিয়ে করদাতাদের মানসম্মত সেবা দেয়া সম্ভব নয়। পাশাপাশি আয়কর বিভাগের পক্ষে সঠিকভাবে কর আদায়, করজাল বৃদ্ধি এবং কর ফাঁকি প্রতিরোধসহ অন্য কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে ১০০ টাকা আয়কর আদায় করতে ৬৬ পয়সা খরচ হয়, যা পৃথিবীর মধ্যে সর্বনি¤œ।
সূত্র জানায়, বর্তমানে রাজস্ব আদায়ে আয়করের অবদান ৩৩ শতাংশ। আগামী ১০ বছরের মধ্যে তা ৪৫ শতাংশে এবং ২০৩০-৩১ অর্থবছরের মধ্যে করদাতার সংখ্যা এক কোটি ৬০ লাখে উন্নীত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। আয়কর প্রশাসনের অবকাঠামো এবং লজিস্টিক খাতে যুক্তিসঙ্গত বরাদ্দ ছাড়া অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো দুঃসাধ্য ব্যাপার। আর চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের কারণে আইটিভিত্তিক নানা ব্যবসার সম্প্রসারণ ঘটবে। ওই ধরনের ব্যবসার আয় থেকে বর্তমান কাঠামো দিয়ে কর আদায় সম্ভব নয়। তাই প্রত্যক্ষ কর আদায় বাড়াতে আয়কর বিভাগের সংস্কার ও সম্প্রসারণের বিকল্প নেই। সেজন্যই আধুনিক, যুগোপযোগী, তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর এবং আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা অনুযায়ী আয়কর প্রশাসনকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তার অংশ হিসাবে নতুন আয়কর বিরোধ ব্যবস্থাপনা ইউনিট, ই-ট্যাক্স ব্যবস্থাপনা ইউনিট, আয়কর গোয়েন্দা, তদন্ত ও এনফোর্সমেন্ট ইউনিট, আন্তর্জাতিক কর ইউনিট এবং উৎসে কর ব্যবস্থাপনা ইউনিট গঠন করা হবে। তাছাড়া ঢাকায় ১৩টি কর অঞ্চল, চট্টগ্রামে ৩টি, খুলনায় ৩টি, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল ও রংপুরে ১টিসহ মোট ২৩টি নতুন কর অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হবে। তাছাড়া করজাল বৃদ্ধি ও করদাতাদের দোঁড়গোড়ায় সেবা পৌঁছানোর লক্ষ্যে উপজেলা ও গ্রেথ সেন্টারের সংখ্যাও বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। বর্তমানে ৮৬টি গ্রেথ সেন্টার বা সার্কেল অফিস আছে। তা বাড়িয়ে ২৯০টি করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি কর মামলা ও কর বিরোধ নিষ্পত্তিতে কর আপিল অঞ্চলের সংখ্যাও বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়। বিদ্যমান ৭টির স্থলে ১১টি আপিল অঞ্চল গঠন করতে চায় এনবিআর। ঢাকায় নতুন ২টি, চট্টগ্রাম ও রংপুরে ১টি কর আপিল অঞ্চল প্রতিষ্ঠান করা হবে। আর প্রস্তাবিত কর অঞ্চল, আপিল অঞ্চল এবং ইউনিটে কতো জনবল প্রয়োজন হবে তাও প্রস্তাবে তুলে ধরা হয়েছে। বর্তমানে আয়কর প্রশাসনে ৮ হাজার ৯৩২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। প্রস্তাবে আরো ১০ হাজার ৬০০ জনবল নিয়োগ দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
এদিকে অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের মতে, আগামী ২০৪১ সালের রূপকল্প অর্জনে আয়কর প্রশাসনের সম্প্রসারণ ও পুনর্গঠনের বিকল্প নেই। তাদের মতে, অবকাঠামো ও প্রযুক্তিগত সংস্কার ছাড়া বিদ্যমান কাঠামো দিয়ে রাজস্ব আদায় বাড়ানো সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে শুধু লোকবল বাড়িয়ে সংস্কার করলে চলবে না, প্রযুক্তিগত সংস্কার জরুরি। আর কর জাল বাড়াতে আয়কর প্রশাসনের পুনর্গঠন, সংস্কারের বিকল্প নেই। কারণ এখন যারা কর দিচ্ছে মাঠপর্যায়ের কর কর্মকর্তারা তাদের কাছ থেকেই কর আদায়ে মনোযোগী। অথচ উপজেলা পর্যায়ে অনেক করযোগ্য ব্যক্তিও করের আওতার বাইরে থাকছে। সেজন্যই করজাল বাড়াতে পারলে করের বোঝা কমবে। পাশাপাশি তা টেকসই রাজস্ববান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু জানান, এখন যারা কর দিচ্ছে তাদের ওপরই বোঝা চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে ব্যবসায়ীদের তরফ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, কর জাল বাড়াতে উপজেলা পর্যায়ে আয়কর-ভ্যাট অফিস স্থাপন করতে। সেদিক থেকে এনবিআরের আয়কর বিভাগ সম্প্রসারণের উদ্যোগ সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। তাতে কর্মসংস্থানও বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি অটোমেশনেও গুরুত্ব দিতে হবে।
আরও পড়ুন
‘রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে আ.লীগের প্রেতাত্মারা এখনো বহাল’
শিল্পে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি ও ৪৩ টি পণ্যের শুল্কহার বৃদ্ধি নিয়ে ঢাকা চেম্বারের উদ্বেগ
২০২৪ সালে ৪০ কোটি টাকার বীমাদাবি প্রদান করলো প্রগ্রেসিভ লাইফ ইনসিওরেন্স