এস এম মনিরুল ইসলাম, সাভার: দুমুঠো আহারের আশায় প্রতিদিন পোশাক কারখানার শ্রমিকদের পদচারণে মুখর হয়ে থাকত পরিত্যক্ত এ স্থানটি। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে উপস্থিত হতে শুরু করেছেন বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ নানা পেশাজীবি মানুষ। দিনটি তাঁদের কাছে ভীষণ যন্ত্রণা আর কষ্টের। রানা প্লাজা ধসের ১২ বছর আগে ২০১৩ সালের এই দিনে ঢাকার সাভার বাসস্ট্যান্ডের অদূরে রানা প্লাজা ধসে নিহত হন ১ হাজার ১৩৮ জন। আহত হন অনেকে।
ওই দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং আহত শ্রমিকদের সুচিকিৎসা, ক্ষতিপূরণসহ নানা দাবিতে সকাল সাড়ে সাতটার পর থেকে ধসে পরা রানা প্লাজার পরিত্যক্ত জায়গার সামনের দিকের একটি অংশে জড়ো হতে শুরু করেন নিহত শ্রমিকদের স্বজন, আহত শ্রমিক ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরাসহ সাধারণ মানুষ। নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে ওই জায়গায় অস্থায়ী প্রতিবাদ-প্রতিরোধ শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন তাঁরা।
সকাল আটটার দিকে ভবন ধসে পরা জায়গাটির এক পাশে দাঁড়িয়ে অপলক চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখা যায় পারুল বেগমকে। কাছে যেতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, “আমি পেটে আঘাত পাই। এত বছর ধরে কাজ করতে পারি না। অনেক কষ্টে পরিবার নিয়ে আছি। রানা প্লাজা ধসের এতদিন হয়ে গেছে আমাদের কেউ খবর নেয় নাই। আমরা কারও কাছে ভিক্ষা চাই না। আমাদের ন্যায্য পাওনা বুঝায় দেওয়া হোক।”
তিনি আরও বলেন, “আমি চাই আমাদের যারা ক্ষতি করেছে, এই ভবন মালিক রানা, গার্মেন্টস মালিকসহ জড়িত সবার ফাঁসি চাই। সরকার আমাদের সুষ্ঠু বিচার করে নাই, যদি বিচার করতো তাইলে এক যুগ শেষ হতো না। আর সরকারের কাছে আমাদের অনেকদিন ধরেই দাবি রানা প্লাজা যেখানে ছিল সেখানে একটা মার্কেট করুক এবং রানা প্লাজার ভাই-বোনদের একটা পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দিক।”
শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও নানা দাবি জানাচ্ছেন। বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইনবিষয়ক সম্পাদক খাইরুল মামুন বলেন, রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় এখনো আহত ও নিহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা হয়নি। রানা প্লাজার আহত শ্রমিকরা চিকিৎসার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) কনভেনশন ১২১ অনুসারে নিহত ও আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে। ওই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার করতে হবে।
বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি অরবিন্দ ব্যাপারী বলেন, ‘রানা প্লাজা ধসের ১২ বছরে দোষীদের বিচার দেখতে পাইনি। আগের সরকার বিচারের আশ্বাস দিয়েছিল; কিন্তু বিচার হয়নি। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের দাবি, দোষীদের দ্রুত বিচার করতে হবে। শ্রমিকদের ন্যয্য দাবিগুলো পূরণ করতে হবে।”
সকাল ১০টা পর্যন্ত বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশন, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আনন্দোলন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল-গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, গার্মেন্টস শ্রমিক জোট বাংলাদেশ, গার্মেন্টস শ্রমিক টেক্সটাইল ফেডারেশন, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রসহ নানা শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ নিহত ব্যক্তিদের স্বজন ও আহত শ্রমিকেরা অস্থায়ী বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।
আরও পড়ুন
আসিফ নজরুলের বাসভবনে ড্রোন, নিরাপত্তা জোরদার
পুরোপুরি কাবামুখী না হলে কি নামাজ হবে?
ইতালি থেকে দেশের পথে প্রধান উপদেষ্টা